আইপিএলে গতির ঝড় তোলা কে এই মায়াঙ্ক যাদব

লক্ষ্ণৌর অটল বিহারি বাজপেয়ী স্টেডিয়ামে আইপিএল ২০২৪ এর ম্যাচ চলছে। মুখোমুখি ঘরের মাঠের দল লক্ষ্ণৌ সুপারজায়ান্ট ও পাঞ্জাব কিংস৷ লক্ষ্ণৌর হয়ে এক ২১ বছর বয়সী তরুণ বল হাতে দৌড়ে আসছেন, ব্যাটিংয়ে শিখর ধাওয়ান। ডানহাতি সেই পেসার বলটি ছুঁড়লেন, ধাওয়ান ব্যাটে বল ছোঁয়াতেই পারলেন না।
স্পিডোমিটারে ভেসে উঠল ১৫৫.৮ কিমি। অর্থাৎ ঘন্টায় প্রায় ১৫৬ কিলোমিটার গতিতে বলটি করেছেন সেই তরুণ পেসার। বলটি তালুবন্দী করে হাততালি দিলেন উইকেটরক্ষক কুইন্টন ডি কক। এমন নয় যে ডি কক এত গতির বল আগে কখনও ধরেননি। কিন্তু তিনি হাততালি কেন দিলেন? কারণ, বলটা যিনি করেছেন তার বয়স যে মাত্রই ২১!
এবারের আইপিএলে এখন অব্দি সবচেয়ে দ্রুতগতির বল এটিই। ওহ, নামটাই তো বলা হয়নি সেই বোলারের। মায়াঙ্ক যাদব, নামটা গতকালের আগে শোনেননি বেশিরভাগ মানুষই। শোনার কথাও নয়, কারণ নয়া দিল্লী থেকে উঠে আসা মায়াঙ্ক যে আইপিএলে নিজের প্রথম ম্যাচটাই খেলতে নেমেছিলেন গতকাল! আর নেমেই বাজিমাত। লক্ষ্ণৌকে জিতিয়েছেন দুর্দান্ত বোলিং করে। চার ওভারে ২৭ রান দিয়ে নিয়েছেন তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট, সঙ্গে গতির ঝড়ে ব্যাটসম্যানদের নাভিশ্বাস তোলা তো ছিলই।
মায়াঙ্কের এমন ভয়ঙ্কর রূপ দেখে সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকান পেসার ডেল স্টেইন তো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেই ফেলেছেন, '১৫৫.৮ কিলোমিটার! মায়াঙ্ক যাদব, এতদিন কোথায় লুকিয়ে ছিলে!' মায়াঙ্ক অবশ্য পরে জানিয়েছেন, স্টেইনই তার আইডল, 'আমি কেবল একজন পেস বোলারকেই আইডল মানি। তিনি ডেল স্টেইন'।
মায়াঙ্কের এই আলোচনায় আসা বেশ দ্রুত সময়ের মধ্যেই হয়েছে বলা চলে। তবে তাকে এই ২১ বছরের জীবনেও যেতে হয়েছে বেশ পরীক্ষার মধ্যে দিয়েই৷ মাত্র দুটি লিস্ট এ ম্যাচ খেলার পরই লক্ষ্ণৌ সুপারজায়ান্ট মায়াঙ্ককে দলে ডেকে নেয়। ২০২২ আইপিএলে একটি ম্যাচেও একাদশে সুযোগ পাননি তিনি। আর ২০২৩ এর আইপিএলও খেলতে পারেননি চোটের কারণে। চলতি আইপিএলে লক্ষ্ণৌর প্রথম ম্যাচে একাদশে ছিলেন না মায়াঙ্ক।
এমনকি এই ম্যাচেও দ্রুতগতিতে বল করার পরিকল্পনা ছিল না তার, টিম ম্যানেজমেন্ট থেকেই বলা হয়েছিল, যেন কম গতির বলের দিকে মনোযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু পরে পিচ সাহায্য করায় অধিনায়ক নিকোলাস পুরান সর্বোচ্চ গতিতে বল করার পরামর্শ দেন মায়াঙ্ককে, 'শুরুতে আমাদের পরিকল্পনা ছিল বলের গতি কমিয়ে আনা। কিন্তু পরে যখন দেখা গেল পিচে সাহায্য আচে, অধিনায়ক আমাকে বলেছেন যত জোরে সম্ভব বল করতে।' বলা বাহুল্য, পুরানের সেই উপদেশ পুরোপুরি কাজে লেগেছে।
নিজের আইপিএল অভিষেকের মুহূর্ত গত দুই বছর ধরেই কল্পনায় এঁকেছেন বলে জানালেন মায়াঙ্ক, 'গত দুই বছর ধরেই আমি নিজের প্রথম বলটা কেমন হবে তা নিয়ে ভাবতাম। সবাই বলেছিল এক ধরনের ভীতি কাজ করে। কিন্তু আমার সেরকম কিছু মনে হয়নি।'
এবারের আইপিএলে মায়াঙ্কের করা সবচেয়ে দ্রুতগতির বলটি খেলেছেন শিখর ধাওয়ান। সাবেক ভারতীয় ওপেনার জানালেন, তিনি বেশ অবাকই হয়েছেন এই তরুণ পেসারের গতিতে, 'মায়াঙ্ক দারুণ বোলিং করেছে। আমি কিছুটা অবাকই হয়েছি ওর গতি দেখে। সে ইয়র্কার আর বাউন্সারগুলো বেশ করেছে। জনি বেয়ারস্টোর শরীর বরাবর বল করে তাকে আউট করেছে।'
এই তরুণ পেস বোলারকে ফাস্ট ট্র্যাক করে দলে নেয় ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটের দল নর্থ জোন। তাদের হয়ে দেওধার ট্রফিতে লিস্ট এ ক্রিকেট খেলেছেন মায়াঙ্ক। সেই টুর্নামেন্টে ভারত জাতীয় দলের হয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলা রাহুল ত্রিপাথির মিডল স্টাম্প উড়িয়ে দেন দারুণ গতির এক বলে। তখন থেকেই তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখার শুরু। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে দিল্লীর হয়ে খেলেন মায়াঙ্ক যাদব।
আইপিএলে সুযোগ পেলেন অবশেষে, আর সেটির সদ্ব্যবহারই করেছেন মায়াঙ্ক৷ আর সেজন্যই হয়তো স্টেইনের ওমন অবাক হওয়া। এরকম রত্নকে এতদিন কেন খেলায় নি লক্ষ্ণৌ এই প্রশ্নই হয়তো ঘুরপাক খাচ্ছিল তার মনে। ২১ বছর বয়সী মায়াঙ্কের ওপর এখন থেকে স্বাভাবিকভাবেই আরও বেশি নজর থাকবে।
এখন পর্যন্ত মাত্র একটি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন মায়াঙ্ক যাদব। নিয়েছেন দুটি উইকেট। ১৭টি লিস্ট এ ম্যাচ খেলে শিকার করেছেন ৩৪টি উইকেট। আর গতকালের ম্যাচসহ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ১১ ম্যাচ খেলে ১৫ উইকেটের মালিক এই ডানহাতি পেসার। আইপিএলে তার পরবর্তী ম্যাচগুলোর পারফরম্যান্স দিয়ে ভারতের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে সুযোগ করে নেওয়ার চিন্তাই হয়তো ঘুরপাক খাবে মায়াঙ্ক যাদবের মনে।