স্থগিত আইপিএল, বাকি অংশ আয়োজন করতে চায় ইংল্যান্ড

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার কারণে বিশ্বের অন্যতম ধনী ক্রীড়া টুর্নামেন্ট ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) স্থগিত করেছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)। তবে সেপ্টেম্বরে টুর্নামেন্টের বাকি অংশ আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)।
গত ২৪ ঘণ্টায় এক নাটকীয় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আইপিএল ও পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল)—দুই টুর্নামেন্টেরই একাধিক ম্যাচ বাতিল বা পরিত্যক্ত হয়। খেলোয়াড়দের দ্রুত নিজ নিজ দেশে ফেরত যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
পিএসএল-এর শেষ আটটি ম্যাচ সংযুক্ত আরব আমিরাতে সরিয়ে নেওয়ার কথা জানায় পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি), কিন্তু আমিরাত বোর্ড পরে 'পিসিবির মিত্র হিসেবে বিবেচিত হওয়ার আশঙ্কা'য় সেই সিদ্ধান্তে পেছপা হয়। ফলে, সেই টুর্নামেন্টও অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়।
বৃহস্পতিবার ধর্মশালায় পাঞ্জাব কিংস ও দিল্লি ক্যাপিটালসের মধ্যকার ম্যাচ মাঝপথে পরিত্যক্ত হওয়ার পর আইপিএল স্থগিতের সিদ্ধান্ত আসে। ম্যাচ চলাকালে ধর্মশালার নিকটবর্তী পাঠানকোটের একটি সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা হয় বলে দাবি করে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। এর পরপরই স্টেডিয়ামের ফ্লাডলাইট বন্ধ করে দর্শকদের বের করে দেওয়া হয়। খেলোয়াড়দের অনেককেই প্যাড পরা অবস্থায় মাঠ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।
এছাড়া, নিরাপত্তা কারণে ভারতের ২৭টি বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যার প্রভাবে দলগুলো পরদিন সকালে ট্রেনে করে দিল্লি পৌঁছায়।
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড আপাতত এক সপ্তাহের জন্য টুর্নামেন্ট 'বিরত রাখা হয়েছে' বলে জানিয়েছে। তবে ১৬টি ম্যাচ বাকি থাকায় এবং বিদেশি খেলোয়াড়রা ফিরতে শুরু করায়, টুর্নামেন্টের পুনরায় শুরু হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
দ্য গার্ডিয়ান-এর তথ্য অনুযায়ী, ইসিবির প্রধান নির্বাহী রিচার্ড গোল্ড ইতোমধ্যে বিসিসিআই কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং টুর্নামেন্ট আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছেন। বিসিসিআই যদি এক সপ্তাহের মধ্যে আইপিএল আবার শুরু করতে না পারে, তাহলে ইংল্যান্ডে সেপ্টেম্বর মাসে বাকি ম্যাচগুলো আয়োজনের সম্ভাবনা বিবেচনায় আছে বলে জানিয়েছেন এক সিনিয়র ইসিবি কর্মকর্তা। যদিও এখনো পর্যন্ত কোনো 'সক্রিয় আলোচনা' চলছে না।
এর আগেও ২০২১ সালে কোভিডের কারণে আইপিএল স্থগিত হলে ইংল্যান্ড টুর্নামেন্ট আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছিল, যদিও শেষ পর্যন্ত তা অনুষ্ঠিত হয় সংযুক্ত আরব আমিরাতে।
বিসিসিআইয়ের সচিব দেবজিত সাইকিয়া এক বিবৃতিতে বলেন, 'খেলোয়াড়দের উদ্বেগ ও বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজির অনুরোধ, সম্প্রচারকারী, স্পন্সর এবং দর্শকদের মতামত বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পর টুর্নামেন্টের নতুন সূচি ও ভেন্যুর বিষয়ে ঘোষণা দেওয়া হবে।'
এখন পর্যন্ত আইপিএলের ৫৮টি ম্যাচ শেষ হয়েছে, বাকি আছে ১২টি গ্রুপ পর্বের খেলা ও ৪টি প্লে-অফ ম্যাচ। অতীতে চারবার আইপিএল আংশিক বা পুরোপুরি দেশের বাইরে অনুষ্ঠিত হয়েছে—২০০৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায়, ২০১৪ সালে আংশিকভাবে আমিরাতে, ২০২০ ও ২০২১ সালে পুরো আসরই সংযুক্ত আরব আমিরাতে হয়েছিল।
পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) তাদের টুর্নামেন্ট সংযুক্ত আরব আমিরাতে শেষ করার ঘোষণা দেওয়ার পর, আইপিএল সেখানে সরিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বাতিল হয়ে যায়। এর পরদিনই পিএসএল স্থগিত করা হয়—কারণ বৃহস্পতিবার পেশোয়ার জালমি ও করাচি কিংসের মধ্যকার ম্যাচ স্থগিত করা হয় এই অভিযোগে যে, রাওয়ালপিন্ডির স্টেডিয়ামের আশপাশে ভারতীয় ড্রোন হামলায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পিসিবি চেয়ারম্যান মোহসিন নকভি এ ঘটনাকে 'চরম দায়িত্বজ্ঞানহীন' ও 'বেপরোয়া' বলে অভিহিত করেছেন।
পিসিবি প্রথমে টুর্নামেন্ট আমিরাতে সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিলেও ঘণ্টা কয়েকের মধ্যেই তারা নতুন বিবৃতিতে জানায়—প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের পরামর্শ অনুযায়ী তারা পিএসএল আপাতত স্থগিত রাখবে। পিসিবি বিবৃতিতে লেখে, 'আমাদের প্রিয় পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীর সাহসী প্রচেষ্টার প্রতি এখন জাতির মনোযোগ ও আবেগ স্বাভাবিকভাবেই নিবদ্ধ। আমরা অংশগ্রহণকারী খেলোয়াড়দের মানসিক সুস্থতা ও বিদেশি খেলোয়াড়দের পরিবারের উদ্বেগকেও সম্মান করি, যারা তাদের প্রিয়জনকে দেশে ফেরত পেতে চায়।'
তবে শুক্রবার রাতে ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) পিএসএল আয়োজনে শেষ পর্যন্ত আগ্রহ দেখায়নি—কারণ, এতে একদিকে স্থানীয় নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়তে পারে, অন্যদিকে বিসিসিআইয়ের সঙ্গে সম্পর্কও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
এক সূত্র পিটিআইকে বলেন, 'আমিরাতে দক্ষিণ এশীয়দের বিশাল এক সম্প্রদায় বাস করে, যারা ক্রিকেট পছন্দ করে। এমন উত্তেজনাপূর্ণ সময়ে পিএসএলের মতো টুর্নামেন্ট আয়োজন করলে সামাজিক অশান্তি সৃষ্টি হতে পারে, নিরাপত্তা হুমকি তৈরি হতে পারে এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় উত্তেজনা বাড়তে পারে।'