বাংলাদেশে বিরল দুই প্রজাতির গেছো সাপের সন্ধান পেলেন গবেষকরা

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের গহীন অরণ্যে দুই বিরল প্রজাতির 'ট্রি স্নেক' বা গেছো সাপের সন্ধান পেয়েছেন গবেষকরা। কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান ও দুধপুকুরিয়া-ধোপাছড়ি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে চলমান গবেষণায় এ প্রজাতির সাপের উপস্থিতি এই প্রথম নিশ্চিত করেছেন গবেষকরা।
চলতি সপ্তাহে পিয়ার-রিভিউড জার্নাল 'চেক লিস্ট'-এ গবেষণা নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে।
শনাক্ত হওয়া সাপ দুটি হলো ডেনড্রেলাফিস সায়ানোক্লোরিস (Dendrelaphis cyanochloris) এবং ডেনড্রেলাফিস হাসি (Dendrelaphis haasi)। ব্রোঞ্জব্যাক গণভুক্ত এই দুটি সাপই নির্বিষ, শরীর সরু এবং এরা অত্যন্ত দ্রুতগামী। দিনের বেলায় সক্রিয় এই সাপগুলো মূলত গাছেই জীবন কাটায়।
এর মধ্যে ডেনড্রেলাফিস সায়ানোক্লোরিস প্রজাতির একটি সাপকে বালুকাময় ঝিরির ওপর প্রায় ১২ ফুট উঁচুতে একটি ছোট ডালে বিশ্রামরত অবস্থায় পাওয়া যায়। আরেকটিকে পাওয়া যায় পাথুরে ঝিরির ওপর একটি বাঁশের ডগায়।
গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, 'প্রাণীগুলো সরাসরি ঝিরির ওপর থাকা ছোট ডালে ঘুমাতে পছন্দ করে। সম্ভবত শিকারির ঝুঁকি কমানো এবং অনুকূল পরিস্থিতি কাজে লাগানোর জন্য এটি তাদের একটি অভিযোজিত কৌশল।'
এই প্রজাতির শরীর জলপাই-সবুজ থেকে ব্রোঞ্জ রঙের হয় এবং আঁশগুলোর কালো প্রান্ত একটি 'ফিস নেট প্যাটার্ন' বা 'মাছ ধরার জালের মতো নকশা' তৈরি করে। শরীর প্রসারিত হলে নীল রঙের আঁশ দৃশ্যমান হয়। সাপটি মূলত ছোট টিকটিকি ও ব্যাঙ খায় এবং গাছের ফাটলে তিন থেকে পাঁচটি ডিম পাড়ে। দিনের বেলায় এরা সক্রিয় থাকে।

অন্যদিকে, ডেনড্রেলাফিস হাসি প্রজাতির সাপকে রাতের বেলায় ঝিরির কাছে বাঁশের চিকন ডালে বিশ্রাম নিতে দেখা গেছে। কখনো কখনো মানুষের বাসস্থানের কাছাকাছিও এদের দেখা মিলেছে। এই সাপের শরীর জলপাই রঙের, মাথা সোনালি-বাদামি এবং জিহ্বা লাল, যার অগ্রভাগ কালো।
গবেষকরা বলেন, 'আমরা দেখেছি, ডেনড্রেলাফিস হাসি বেশিরভাগ সময় রাতে পাহাড়ি ঢালে ঝিরির কাছে ঝোপঝাড় ও মাঝারি আকারের গাছে ঘেরা বাঁশের চিকন ডালে বিশ্রাম নেয়।'
২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত কাপ্তাই ও দুধপুকুরিয়া-ধোপাছড়ির চিরসবুজ বনে একটি নিবিড় সমীক্ষা চালান পাঁচ গবেষক—মো. সোহেল রানা, সজীব বিশ্বাস, আশীষ কুমার দত্ত, শারমিন আক্তার এবং মো. কামরুল হাসান। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল গেছো সাপ, যা নিয়ে দেশে গবেষণার পরিমাণ খুবই কম।
গবেষকরা তাদের প্রতিবেদনে লিখেছেন, 'বাংলাদেশে সবচেয়ে কম চর্চিত প্রাণীগোষ্ঠীর মধ্যে সাপ অন্যতম।' দীর্ঘ এক বছরের পর্যবেক্ষণে তারা দুটি নতুন প্রজাতির দেখা পান।
উভয় প্রজাতি ভারত ও মিয়ানমারে পরিচিত হলেও বাংলাদেশে এর আগে এদের উপস্থিতির কোনো রেকর্ড ছিল না। গবেষকরা লিখেছেন, ডেনড্রেলাফিস হাসি প্রজাতিটি সম্প্রতি বর্ণিত হওয়ায় এর বিস্তৃতি 'বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য'।
গবেষণাপত্রে আরও বলা হয়েছে, 'দুধপুকুরিয়া-ধোপাছড়ি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এবং কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে এই প্রজাতিগুলোর নিশ্চিত উপস্থিতি প্রমাণ করে যে, সংরক্ষিত এলাকাগুলো এ ধরনের গুপ্ত বা উপেক্ষিত প্রজাতিকে ধারণ করে।'
তবে গবেষকরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে, আবাসস্থল ধ্বংস, বন উজাড় এবং মানুষ-বন্যপ্রাণী সংঘাত গেছো সাপের জন্য বড় হুমকি।