অনবদ্য মাহমুদউল্লাহ, দুর্বার মিরাজে লড়াকু বাংলাদেশ

দুঃস্বপ্নের শুরুর পর আসা-যাওয়ার মিছিল। বাংলাদেশের টপ অর্ডার ভেঙে পড়লো তাসের ঘরের মতো। ভারতীয় বোলারদের তোপে ৬৯ রানেই নেই ৬ উইকেটে। তখন ১০০ রান পাড়ি দেওয়াই বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু ধ্বংসস্তূপ থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প লিখলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও আগের ম্যাচের নায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। শেষ দিকে হাল্কা ঝলক দেখালেন স্পিনার নাসুম আহমেদ। তাতে লড়াইয়ের পুঁজি পেলো বাংলাদেশ।
বুধবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ভারতের বিপক্ষে ৭ উইকেটে ২৭১ রান তুলেছে বাংলাদেশ। খাদের কিনারে চলে যাওয়ার পরও এমন লড়াকু সংগ্রহ মিলেছে ভারতের বিপক্ষে মাহমুদউল্লাহ-মিরাজের সপ্তম উইকেটে রেকর্ড জুটির কারণে। মাহমুদউল্লাহ থামলেও শেষ পর্যন্ত ব্যাট চালান চোখ ধাঁধানো ব্যাটিং করা মিরাজ। ওয়ান ম্যান আর্মির ভূমিকায় নাম লেখানো বাংলাদেশের এই অলরাউন্ডার তুলে নেন অসাধারণ এক সেঞ্চুরি, যা তার ক্যারিয়ারের প্রথম।
দারুণ জয়ে শুরু করা বাংলাদেশ দ্বিতীয় ম্যাচ দিয়েই সিরিজ নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামে। কিন্তু ইনিংসের মাঝপথ না যেতেই লক্ষ্য মুছে যাওয়ার দশা। ১৮ ওভারে ৬৯ রান তুলতেই ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। প্রথম ওয়ানডে জিতলেও ব্যাটিং নিয়ে হতাশার শেষ ছিল না। দ্বিতীয় ম্যাচেও একই পরিণতি হচ্ছিল। এখান থেকে দলের হাল ধরেন মাহমুদউল্লাহ ও মিরাজ।
শুরুতে কিছুটা সময় নিয়ে উইকেটে থিতু হন এই দুই ব্যাটসম্যান। এরপর শুরু হয় তাদের লড়াই। দুজনই হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে পরে আরও অনেক সময় দলকে পথ দেখিয়ে যান। সপ্তম উইকেটে ১৬৫ বলে ১৪৮ রান যোগ করেন মাহমুদউল্লাহ ও মিরাজ। ভারতের বিপক্ষে যেকোনো উইকেটে এটা বাংলাদেশের সেরা জুটি।
মহাকার্যকর এই জুটি গড়ার পথে ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন মিরাজ। কিছুক্ষণ পর মাহমুদউল্লাহও ছুঁয়ে ফেলেন ৫০। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২৭তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার পর আরও কিছুটা সময় লড়াই চালিয়ে যান মাহমুদউল্লাহ। দলের দুঃসময়ে হাল অভিজ্ঞ এই বাটসম্যান শেষ পর্যন্ত ৯৬ বলে ৭টি চারে ৭৭ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন।
তার বিদায়ে ইনিংসের বাকিটা সময় সামলান মিরাজ, এ সময় সঙ্গে পান নাসুম আহমেদকে। বাঁহাতি এই স্পিনারের সঙ্গেও অবিচ্ছিন্ন ৫৪ রানের জুটি গড়েন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। নাসুম ১১ বলে ১৮ রানে অপরাজি থাকেন। তবে মিরাজ শেষটায় ঝড় বইয়ে দেন, অসাধারণ সব শটে ছুঁয়ে ফেলেন তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার। ৮৩ বলে ৮টি চার ও ৪টি ছক্কায় ১০০ রানের মহাকাব্যিক এক ইনিংস খেলেন তিনি। ওয়ানডে ইতিহাসের মাত্র দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে আট নম্বরে নেমে সেঞ্চুরি করলেন মিরাজ।
এর আগে লিটন কুমার দাস থেকে শুরু করে এনামুল হক বিজয়, নাজমুল হোসেন শান্ত, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, আফিফ হোসেন ধ্রুব; কেউই পারেননি দলকে ঠিক পথে রাখতে। বিজয়, শান্ত, মুশফিকরা সাবলীল শুরু করলেও পরে হতাশই করেছেন।
১১ বলে ৯ রান করেন বিজয়। লিটন ৭ রান করেন ২৩ বলে। থিতু হয়েও শান্ত ৩৫ বলে ২১ রান করে আউট হন। সাকিব ৮ রান করতে খরচা করেন ২০ বল। ২৪ বলে ১২ রান করেন মুশফিক। আফিফ রানের খাতাই খুলতে পারেননি। ভারতের ওয়াশিংটন সুন্দর ৩টি এবং মোহাম্মদ সিরাজ ও উমরান মালিক ২টি করে উইকেট নেন।