‘মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর অভিজ্ঞতা আপনি কিনতে পারবেন না’

বাংলাদেশের ক্রিকেটে অভিষেক পর্বটা ঘটা করে পালন করার রীতি আছে। কিন্তু সেই ক্রিকেটারই দীর্ঘদিন খেলার পর একদিন নিরবেই ক্রিকেটকে বিদায় জানান, ঘোষণার প্ল্যাটফর্ম হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। বাংলাদেশের ক্রিকেটে মাঠ থেকে বিদায় নেওয়ার ঘটনা নেই বললেই চলে। উল্লেখ করার মতো নাম কেবল একটি, খালেদ মাহমুদ সুজন। মাঠ থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন সাবেক এই অধিনায়ক।
মাঠ থেকে বিদায় নেওয়ার অনুভূতিটা কেমন, জানেন সুজন। এ কারণেই মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে তার আক্ষেপ। কদিন আগে ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন মুশফিক। কাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলেছেন মাহমুদউল্লাহ। জাতীয় দলের এই দুই ক্রিকেটারই অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সুজন মনে করেন, মাঠ থেকে বিদায় নেওয়াটা মুশফিক-মাহমুদউল্লার প্রাপ্য। তার মতে, এমন ক্রিকেটারদের অভিজ্ঞতা অমূল্য।
এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে গুলশান ক্রিকেট ক্লাবের প্রধান কোচের দায়িত্বে আছেন সুজন। বৃহস্পতিবার মিরপুর স্টেডিয়ামে নিজের দলের ম্যাচ শেষে মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর অবসর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'ওদের তো চমৎকার ক্যারিয়ার আমি মনে করি। ওদের ক্যারিয়ারটা বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য একটা উজ্জ্বল ব্যাপার সত্যি বলতে। বাংলাদেশের ক্রিকেটকে একটা জায়গা থেকে আরেকটা জায়গায় নিয়ে এসেছিল ওরা। আমি মনে করি ওরা মাঠ থেকে অবসর নেওয়ার প্রাপ্য।'
'আমি মনে করি যারা ওদের সমর্থক, যারা ওদেরকে ভালোবেসেছে এতোদিন, তারাও বড় করতালির মাধ্যমে ওদেরকে মাঠ থেকে বিদায় দেওয়ার প্রাপ্য। আমরা যারা সমর্থক ছিলাম, আমরা যারা ওদের ক্রিকেটকে ভালোবাসি, সেই সুযোগটা আমাদের হয়তো হলো না। কেন ওরা মাঠ থেকে অবসর নিলো না, ওরাই ভালো বলতে পারবে। এটা ওরাই ভালো বলতে পারবে, হয়তো ওদের কোনো একটা কারণ থাকতে পারে। যেটা আমার মতামত, কোনো ছেলেকে অভিষেকের দিন মাঠেই ক্যাপ পরানো হয়। খেলাটা ছাড়ার সময়ও যদি মাঠ থেকে বিদায় হয়, জিনিসটা আরও প্রেজেন্টেবল হয়।'
এতোদিনের ভালোবাসার জায়গাকে বিদায় বলাটা অনেক কষ্টের জানিয়ে সুজন আরও বলেন, 'ছাড়াটা (ক্রিকেট থেকে অবসর) আসলেও কষ্টের, যেটা আমি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি। কিন্তু অবশ্যই ওদের ক্যারিয়ারের যে সময়, দুজনই সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। হয়তো ওরা চালালে আরও কিছুদিন খেলতে পারতো। সেটা কতোটা সঠিক হতো, আমি জানি না। মাঠ থেকে বিদায় নিলে হয়তো আরেকটু ভালো হতো। মাহমুদউল্লাহ অবসর নিতো, গ্যালারি ভরা দর্শক থাকতো, মানুষের হাততালিতে বিদায় নিতো সেটা ওর জন্য বড় পাওয়া হতো। আমি জানি না ওরা কেন মাঠ থেকে অবসর নিতে চায় না। হলে ভালো হতো।'
বাংলাদেশের ক্রিকেট মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর অভিজ্ঞতা অমূল্য জানিয়ে সুজন বলেন, 'ওদের অভিজ্ঞতা কেউ নিতে পারবে না। আপনি এটা কিনতে পারবেন না মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহর অভিজ্ঞতা। ওরা শুরুতে বড় তারকা ছিল তা নয়, তিলে তিলে নিজেদের গড়ে তুলেছে। হয়তো ওদের বদলি ১০০% পাবেন, তাও সত্যি কথা নয়। ওদের শূন্যস্থান হঠাৎ করে পূরণ না হলেও আমি মনে করি যথেষ্ট ভালো খেলোয়াড় আছে, যারা কি না এই জায়গা অবশ্যই নিতে পারবে।'
২০০৬ সালে বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেন সুজন। মাঠ থেকে নিজের বিদায় নেওয়ার স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, 'আমি যখন অবসর নিই, আমার পুরো পরিবার মাঠে ছিল। আমার বাবা, চা, ভাই-বোন, আমার পরিবার, স্ত্রী। আমি বগুড়ায় অবসর নিয়েছিলাম। তারা ঢাকা থেকে ওখানে গিয়েছিল, সবাই মাঠে ছিল। আমি খুবই গর্বিত ছিলাম আমার পুরো পরিবার শেষ খেলা দেখতে এসেছিল। এটা তো একটা ব্যাপার থাকেই যে, আমি মাঠ থেকে বিদায় নিয়েছি। বোর্ডে তখন যারা ছিল, আমাকে ওই সম্মানটা দিয়েছিল।'
ক্রিকেটাররা শেষ ম্যাচ খেলে মাঠ থেকে বিদায় নেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানালে বিসিবি সেভাবে প্রস্তুতি নিতে পারে বা সংবর্ধনা আয়োজন করতে পারে। মাহমুদউল্লাহর সেই সুযোগ ছিল বলে মনে করেন সুজন। তার ভাষায়, 'আমি যখন অবসর নিয়েছি, তখন বলেছি এটা আমার শেষ ম্যাচ। যখন কেউ এটা বলে, তখন একটা আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনার ব্যবস্থা করতে পারে। বোর্ড কি কাউকে জোর করতে পারে "আপনি রিটায়ার করেন?" ও যদি বলে করতো যে পরের সিরিজে অবসর নেব, তাহলে বিসিবি প্রস্তুতি নিতে পারতো।'