মাহমুদউল্লাহর অবসরে ভালোবাসার জোয়ার

চলমান আলোচনা বাড়তে দেননি, অনেকের প্রশ্নের উত্তরও দিয়ে দিয়েছেন; আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। বুধবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলেন অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার। তার বিদায়ে বয়ে গেছে ভালোবাসার জোয়ার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাহমুদউল্লাহকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বিভিন্ন সময়ে তার সঙ্গে খেলা সতীর্থরা, জানিয়েছেন কৃতজ্ঞতাও।
৩৯ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলা মাহমুদউল্লাহ বাংলাদেশের জার্সিতে দীর্ঘ ১৮ বছর খেলেছেন। দেশের অনেক সাফল্যেই নাম আছে জাতীয় দলের হয়ে ৫০ টেস্ট, ২৩৯ ওয়ানডে ও ১৪১টি টি-টোয়েন্টি খেলা এই অলরাউন্ডারের। সেসব বাংলাদেশ দলের অনেকের কাছেই প্রেরণার হয়ে থাকবে বলে মনে করেন মাহমুদউল্লাহর সতীর্থরা।
মাশরাফি বিন মুর্তজার পর দলের সবচেয়ে সিনিয়র ক্রিকেটার ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। পাশাপাশি বয়স হওয়ায় মাশরাফির সঙ্গে দারুণ বন্ধুত্ব ছিল তার, ওয়ানডের সফলতম অধিনায়কের নেতৃত্বে খেলেছেন ১১০টি ম্যাচ। মাহমুদউল্লাহর অবসরে মাশরাফি তার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে লিখেছেন, 'দারুণ এক আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের জন্য অভিনন্দন, রিয়াদ। তোর নামের পাশে যে সংখ্যাগুলো আছে, সেসবের সীমানা ছাড়িয়ে তুই আমাদের কাছে আরও অনেক ওপরে।'
বাংলাদেশ দলে মাহমুদউল্লাহর ভূমিকার কথা উল্লেখ করে মাশরাফি আরও লিখেছেন, 'আমরা জানি, দলের তোকে কতোটা প্রয়োজন ছিল এবং দলের সেই চাওয়ার সঙ্গে তুই কতোটা মিশে গিয়েছিলি। মাঠের ভেতরে-বাইরে তোর সঙ্গে কতো স্মৃতি! কতো কতো আনন্দ আর হতাশায় একাকার হয়েছে আমাদের সময়!'
ওয়ানডে চারটি সেঞ্চুরির মালিক মাহমুদউল্লাহ, সবগুলোই আইসিসির টুর্নামেন্টে। তার দেখানো পথে হেঁটে অন্য সাফল্য কুড়াবে, এমন আশার কথা জানিয়ে মাশরাফি লিখেছেন, 'অ্যাডিলেড আর কার্ডিফে তোর সেঞ্চুরির কথা আজ আবার মনে পড়ছে। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান, তোর এই অর্জন কেড়ে নিতে পারবে না কেউ। তবে আশা করি, তোকে আদর্শ মেনে বৈশ্বিক আসরে তোর চার সেঞ্চুরির রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে দেশের অনেকে। বড় মঞ্চে তুই যেভাবে নিজের সেরাটা মেলে ধরেছিস, সেই পথ অনুসরণ করবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম। ঘরোয়া ক্রিকেটে তোর বাকি দিনগুলো উপভোগ্য হবে আর অবসর জীবন কাটবে আনন্দে, এই কামনা থাকলো।'
তামিম ইকবালও সাবেকের তালিকায়, গত জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলেন দেশসেরা এই ওপেনার। মাহমুদউল্লাহকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি লিখেছেন, 'বর্ণিল আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার সফলভাবে সম্পন্ন করায় অভিনন্দন, রিয়াদ ভাই। আপনি বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম স্তম্ভ এবং মাঠের ভেতরে ও বাইরে আমাদের অনেকের জন্য অনুপ্রেরণা। আমরা ড্রেসিং রুমে কাটানো স্মৃতিগুলো সব সময় মনে রাখবো। দেশের ক্রিকেটে আপনার অবদানের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ এবং আগামীর দিনগুলোর জন্য শুভ কামনা।'
জাতীয় দলে মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিকুর রহিম দীর্ঘদিনের সতীর্থ, এ দুজনের আবার পারিবারিক বন্ধনও আছে। মাহমুদউল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মুশফিক লিখেছেন, 'আপনার সঙ্গে এতো বছর একসঙ্গে মাঠে খেলা সত্যিই বিশাল সম্মানের ব্যাপার ছিল। আপনার দিক নির্দেশনা ও একসঙ্গে গড়া অসংখ্য স্মৃতির জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। আপনি দেশের জন্য যা কিছু অর্জন করেছেন, তা নিয়ে আমি অসম্ভব গর্বিত। মাশাআল্লাহ, আপনার প্রাপ্য এই অবসর উপভোগ করুন, রিয়াদ ভাই।'
অনেকদিন ধরে জাতীয় দলের বাইরে সাকিব আল হাসান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও আগের মতো উপস্থিতি নেই তার। নানা বাস্তবতায় দেশে ফিরতে না পারা অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার লিখেছেন, 'রিয়াদ ভাই, আপনার পাশে খেলা এবং আপনার কাছ থেকে শেখা আমার জন্য সৌভাগ্যের। আপনি মাঠে এবং মাঠের বাইরে উভয় ক্ষেত্রেই উদাহরণ স্থাপন করেছেন এবং আপনার রেকর্ডই কথা বলে। খেলার প্রতি আপনার নিষ্ঠা, সহনশীলতা এবং ভালোবাসার জন্য জাতি আপনার কাছে ঋণী।'
বাংলাদেশের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত শুভ কামনা জানিয়ে লিখেছেন, 'রিয়াদ ভাই, বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশ ক্রিকেটে আপনার সকল অবদানের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। ড্রেসিং রুমে আপনাকে খুব মিস করবো। মাঠের ভেতরে ও বাইরে সবসময় আপনার কাজগুলো থেকে অনুপ্রেরণা নেব। আপনি আমাদের অনেককে অনুপ্রাণিত করেছেন এবং এটি অনেক দিন ধরে অব্যাহত থাকবে। আপনার ভবিষ্যতের জন্য শুভ কামনা।'
শেষের দিকে ব্যাটিং নেমে অনেক ম্যাচেই মাহমুদউল্লাহকে সঙ্গী হিসেবে পেয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ডানহাতি এই অলরাউন্ডার লিখেছেন, 'প্রিয় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ভাই, একজন বড় ভাই ও সতীর্থ হিসেবে যেকোনো প্রয়োজনে, যেকোনো মুহূর্তে আপনাকে পাশে পেয়েছি।'
'শৈশবে টিভিতে আপনাকে দেখে বড় হওয়া, ক্রিকেটার পরিচয়ে আপনার সঙ্গে ড্রেসিং রুম শেয়ার করা, ড্রেসিং রুম কিংবা ক্রিজে থেকে আপনার নানা অসাধারণ স্মৃতির অংশ হওয়া, গুরুত্বপূর্ণ সময়ে জুটি গড়ে আমার প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরির সময় আপনার সহযোগিতা পাওয়া- সবকিছুই আমার ব্যক্তিজীবনের অসাধারণ স্মরণীয় নানা ঘটনা। বাংলাদেশ ক্রিকেটে আপনার অসামান্য অবদান ও দুর্দান্ত সব স্মৃতির জন্য দেশের প্রতিটি ক্রিকেট সমর্থকের মতো আপনার প্রতি আমিও কৃতজ্ঞ। আপনার অবসর পরবর্তী ইনিংসের জন্য শুভ কামনা।'
মাহমুদউল্লাহকে কিংবদন্তি সম্বোধন করে তাসকিন আহমেদ লিখেছেন, 'বাংলাদেশ ক্রিকেটের এক সত্যিকারের কিংবদন্তি বিদায় নিলেন। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ভাই, আপনার সঙ্গে মাঠে খেলা সত্যিই এক বিশাল সম্মানের বিষয় ছিল। আপনার ধীর-স্থির উপস্থিতি, ম্যাচ জেতানো পারফরম্যান্স এবং নেতৃত্ব চিরদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আমিসহ আমাদের পুরো এক প্রজন্মকে আপনি অনুপ্রাণিত করেছেন। জীবনের নতুন অধ্যায়ের জন্য আপনাকে শুভ কামনা। অবসরের শুভেচ্ছা, রিয়াদ ভাই।'
মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে খেলতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করা লিটন কুমার দাস লিখেছেন, 'মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ভাই, আপনি বাংলাদেশ ক্রিকেটে অনেক কিছু দিয়েছেন। আমরা আপনার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। আপনার নেতৃত্বে খেলতে পারা এবং একই ড্রেসিং রুম ভাগ করে নেওয়া আমার জন্য এবং নিশ্চয়ই আমাদের অনেকের জন্য, সৌভাগ্যের বিষয়। আপনার অবসর-পরবর্তী জীবনের জন্য রইলো আন্তরিক শুভ কামনা।"
শৈশবের স্মৃতিচারণ করে তাওহিদ হৃদয় লিখেছেন, 'ছোটবেলায় টিভির সামনে বসে দেখা প্রত্যেকটা ব্রিলিয়ান্ট মুহূর্তের জন্য ধন্যবাদ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ভাই। সবাই আপনাকে সাইলেন্ট কিলার ডাকলেও আমাদের বন্ধুমহলে আপনার নাম ছিল 'পেইন-কিলার।' এমন অনেক ম্যাচ আছে, যেগুলোর শেষ মুহূর্তের রিলিফ আপনার থেকে উপহার পেয়েছি।'