সাদা বলের ক্রিকেটে ভারত-পাকিস্তান সেরা ছয় লড়াই

আগামী রোববার দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে চলমান আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভের ম্যাচে মুখোমুখি হবে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তান। অনেকের মতে, বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় লড়াই হতে চলেছে এটি।
আরও একটি ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথকে সামনে রেখে যখন উত্তেজনার পারদ তরতর করে বাড়ছে, তখন চলুন জেনে নেওয়া যাক এই দুই এশিয়ান ক্রিকেট দানবের এখন পর্যন্ত সীমিত ওভারের ক্রিকেটে সবচেয়ে স্মরণীয় ছয়টি ম্যাচ সম্পর্কে।
শেষ বলে ছক্কা (১৮ এপ্রিল, ১৯৮৬ - শারজাহ)
মরুভূমির মাঠে জাভেদ মিয়াঁদাদের শেষ বলের ছক্কা আজও দগদগে ক্ষত হয়ে রয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট ভক্তদের মনে। অস্ট্রাল-এশিয়া কাপের সেই নাটকীয় ফাইনালে পাকিস্তান জিতেছিল এক উইকেটে।
পাকিস্তানের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ২৪৬ রান। মিয়াঁদাদ যখন ক্রিজে আসেন, ৬১ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে রীতিমতো ধুঁকছে সবুজ পোশাকের দলটি। কিন্তু মিয়াঁদাদের ১১৪ বলের ১১৬ রানের ইনিংসই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
শেষ বলে চার রান দরকার ছিল পাকিস্তানের। ভারতীয় ফাস্ট বোলার চেতন শর্মা একটি ফুল টস বলে করেন। মিয়াঁদাদ সেই বলটিকে মাঠের বাইরে দর্শকদের কাছে পাঠিয়ে দিলে উল্লাসে ফেটে পড়ে পাকিস্তানি সমর্থকরা।
টেন্ডুলকারের শেষ হাসি (১ মার্চ, ২০০৩ - সেঞ্চুরিয়ন)
ভারতের হয়ে বহু ম্যাচই তো জিতেছেন শচিন টেন্ডুলকার। তবু ২০০৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে তার ৯৮ রানের ম্যাচজয়ী ইনিংসটি যেন একটু বেশিই স্পেশাল। কেননা সেদিন গতিতারকা শোয়েব আখতারের সঙ্গে ডুয়েলেও শেষ হাসি হাসেন তিনি।
৭৫ বল মোকাবেলায় খেলা সেই মহাকাব্যিক ইনিংসে শিরদাঁড়া সোজা করে লড়ে যান টেন্ডুলকার। ২৭৪ লক্ষ্যমাত্রায় ব্যাট করতে নেমে সেদিন তাদের খেলতে হয় ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনিস ও শোয়েব আখতার ত্রয়ীতে গড়ে ওঠা এক বিধ্বংসী পাকিস্তানি বোলিং লাইন-আপের বিরুদ্ধে।
এই ম্যাচেই আখতারের একটি এক্সপ্রেস ডেলিভারিকে আপারকাটের মাধ্যমে থার্ড ম্যানের উপর দিনে বাউন্ডারি ছাড়া করেন মাস্টার ব্লাস্টার। সেই ছয়ের মারটি পরবর্তীতে টেন্ডুলকারের গোটা ক্যারিয়ারেরই একটি আইকনিক শটে পরিণত হয়।
ম্যাচটিতে অবশ্য টেন্ডুলকারের উইকেট তুলে নিয়ে ও তাকে শতক বঞ্চিত করে সাময়িক প্রতিশোধ নেন আখতার। কিন্তু ততক্ষণে যে পাকিস্তানের ক্ষতি যা করার, করে ফেলেছেন টেন্ডুলকার! তাই শেষ পর্যন্ত হেসেখেলে ২৬ বল বাকি থাকতে ৬ উইকেটের জয় পায় ভারত।
বোল-আউটের নাটক (১৪ সেপ্টেম্বর, ২০০৭ - ডারবান )
এটি ছিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম আসর। আর সেখানেই শ্বাসরুদ্ধকর রোমাঞ্চের জন্ম দেয় ভারত-পাকিস্তান। গ্রুপ পর্বে তাদের ম্যাচটি শেষ হয় টাইয়ে। কেননা ভারতের ১৪১ রানের জবাবে পাকিস্তানের ইনিংসও শেষ হয় ওই ১৪১ রানেই।
কিন্তু তারপরই মঞ্চস্থ হয় বোল-আউট নাটক। অনেকটা ফুটবলের পেনাল্টি শ্যুট আউটের মতো, এই বোল-আউটে প্রতি দলের পাঁচজন করে বোলার চেষ্টা করেন বল করে স্টাম্প ভাঙার।
ভারতীয় অধিনায়ক এম এস ধোনি বিচক্ষণতার সঙ্গে বল করতে আনেন তার দলের পার্ট-টাইম স্লো বোলারদের। প্রতিবারই তারা সফল হন স্টাম্পে হিট করতে। এদিকে পাকিস্তানের পেস বোলাররা একবারও উইকেট উপড়াতে পারেননি।
বোল-আউটের এই প্রথা অবশ্য পরবর্তীতে বাতিল করা হয়। সীমিত ওভার ফরম্যাটে টাই ভাঙতে এখন খেলা হয়ে থাকে সুপার-ওভার। বলাই বাহুল্য, সুপার-ওভারও কম রোমাঞ্চকর নয়!
মিসবাহ ট্র্যাজেডি (২৪ সেপ্টেম্বর, ২০০৭ - জোহানেসবার্গ)
২০০৭ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই ভারত পাকিস্তান আবারও মুখোমুখি হয়। এবং দিন দশেক পরের সেই ম্যাচটি ছিল টুর্নামেন্টের ফাইনাল।
১৫৮ রানের লক্ষ্যমাত্রা সামনে রেখে ব্যাট করতে নেমে পথ হারায় পাকিস্তান। ৭৭ রানেই তারা হারিয়ে বসে ৬টি উইকেট। কিন্তু তারপর দলের হাল ধরেন মিসবাহ-উল-হক। জিইয়ে রাখেন পাকিস্তানের শিরোপা জয়ের স্বপ্ন। স্রোতের বিপরীতে লড়াই চালিয়ে গিয়ে তিনি ম্যাচটিকে নিয়ে যান শেষ ওভারে।
জোগিন্দর শর্মার করা ম্যাচের শেষ ওভারে পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল ১৩ রান। ব্যাটিংয়ে থাকা মিসবাহ ওভারের দ্বিতীয় বলেই একটি ছক্কা হাঁকালে উজ্জ্বল হয় পাকিস্তানের জয়ের সম্ভাবনা। কিন্তু এরপর একটি স্কুপ শট খেলার চেষ্টা করেন তিনি। উদ্দেশ্য ছিল আবারও বল সীমানা ছাড়া করা। কিন্তু এবার শর্ট ফাইন লেগে এস শ্রীশান্থের হাতে ধরা পড়েন তিনি। হৃদয় ভাঙে পাকিস্তানিদের।
প্রফেসরের কীর্তি (২৫ ডিসেম্বর, ২০১২ - ব্যাঙ্গালোর)
ভারতের বিপক্ষে এখন অবধি পাকিস্তানের একমাত্র টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জয়ে বিশাল অবদান ছিল অধিনায়ক মোহাম্মদ হাফিজের। ২০১২ সালে দুই-ম্যাচ সিরিজের প্রথমটিতে তিনিই জেতান পাকিস্তানকে।
জয়ের জন্য ১৪৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই ঘোর বিপাকে পড়ে পাকিস্তানে। ১২ রানের মধ্যেই তাদের তিনজন ব্যাটার বিদায় নেন।
কিন্তু ম্যাচ সিচুয়েশনের নির্ভুল বিশ্লেষণ করতে পারায় 'প্রফেসর' নামে খ্যাত হাফিজ ১০৬ রানের জুটি গড়েন শোয়েব মালিকের সঙ্গে। তিনি ৬১ রানে ফিরে গেলেও, মালিক অপরাজিত থাকেন ৫৭ রানে। দুই বল হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে নোঙর ফেলে পাকিস্তান।
টি-টোয়েন্টিতে ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথে পাকিস্তানের ওই একটিমাত্র জয়ের বিপরীতে, ভারতের জয়ের সংখ্যা ৭।
জামান ক্লাসিক (১৮ জুন, ২০১৭ - লন্ডন)
চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে পাকিস্তান ছিল নিশ্চিতভাবেই আন্ডারডগ। কিন্তু ফখর জামানের অনবদ্য শতকে টুর্নামেন্টের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচেই নিজেদের সেরা খেলাটা উপহার দেয় তারা।
১০৬ বলে ১১৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলার পাশাপাশি আজহার আলির সঙ্গে ১২৮ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়ে তোলেন জামান। ফলে ওভালের সেই ফাইনালে পাকিস্তান গড়ে রানের পাহাড় : চার উইকেট খুইয়ে ৩৩৮ রান!
এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান চড়াও হন ভুবনেশ্বর কুমার ও জাসপ্রিত বুমরাহ সমৃদ্ধ ভারতীয় বোলিং আক্রমণের উপর। ১২টি চারের পাশাপাশি হাঁকান ৩টি ছক্কা।
আক্ষরিক অর্থেই ওই ম্যাচে পাকিস্তানের রানের পাহাড়ে চাপা পড়ে বিরাট কোহলির ভারত। তাদের ইনিংস গুটিয়ে যায় মাত্র ১৫৮ রানে।
- সূত্র: এএফপি