ভারতে পারমাণবিক উপাদান ‘চুরির ঘটনায়’ আইএইএ-র তদন্ত চায় পাকিস্তান

ভারতে পরমাণু ও তেজস্ক্রিয় 'উপাদান চুরির' একাধিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) কাছে তদন্ত চেয়েছে পাকিস্তান। বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলে, এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি 'ভারতের ভেতরে একটি সক্রিয় নিউক্লিয়ার ব্ল্যাক মার্কেট'-এর উপস্থিতির ইঙ্গিত দেয় যা সুষ্ঠু তদন্তের দাবি রাখে।
একইসঙ্গে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচির ওপর আইএইএর নজরদারির যে দাবি জানিয়েছিলেন, সেই মন্তব্যও প্রত্যাখ্যান করেছে ইসলামাবাদ।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, 'ভারতে পরমাণু উপাদান চুরি ও নিরাপত্তা ঘাটতির একাধিক ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার পূর্ণাঙ্গ ও স্বচ্ছ তদন্তের দাবি জানাচ্ছে পাকিস্তান। একইসঙ্গে ভারতকে তার পরমাণু স্থাপনা ও অস্ত্রাগারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।'
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, 'বরং আইএইএ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত ভারতের পারমাণবিক ও তেজস্ক্রিয় উপাদান-সংক্রান্ত ধারাবাহিক চুরি ও বেআইনি পাচার নিয়ে।'
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের একটি বক্তব্যের পর এই বিবৃতি এল। সম্প্রতি তিনি শ্রীনগরে সেনাসদস্যদের উদ্দেশে বলেন, 'আমি বিশ্বাস করি, পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রগুলো আইএইএর নজরদারিতে রাখা উচিত।'
পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার জেরে দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দেশের মধ্যে তিন দশকের মধ্যে অন্যতম ভয়াবহ সামরিক উত্তেজনা শুরু হওয়ার প্রেক্ষাপটে এমন মন্তব্য করেছিলেন তিনি। দিল্লি ওই হামলার জন্য পাকিস্তানভিত্তিক গোষ্ঠীগুলোকেই দায়ী করে। এ সময়ে সীমান্তে গোলাগুলি ও পাল্টা হামলার জেরে পারমাণবিক সংঘাতের শঙ্কায় আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে।
যুদ্ধবিরতির কয়েকদিন পর এক বিবৃতিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, 'ভারত কোনো পারমাণবিক ব্ল্যাকমেইল মেনে নেবে না। এমন হুমকির আড়ালে গড়ে ওঠা সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলোর বিরুদ্ধে ভারত সুষ্ঠু ও দৃঢ় প্রতিক্রিয়া জানাবে।'
এ প্রসঙ্গে পাকিস্তান বলেছে, 'ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য তার নিজের হীনমন্যতা এবং পাকিস্তানের কার্যকর প্রতিরক্ষা ও প্রচলিত সামরিক সক্ষমতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে। এমনকি ভারতের দাবিকৃত পারমাণবিক ব্ল্যাকমেইল ছাড়াই পাকিস্তান নিজস্ব প্রচলিত সামরিক শক্তির মাধ্যমেই ভারতকে প্রতিহত করতে সক্ষম।'
আইএইএ-সংক্রান্ত মন্তব্যের সমালোচনা করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও মন্তব্য করে, রাজনাথ সিং জাতিসংঘের ভিয়েনাভিত্তিক সংস্থা আইএইএর ম্যান্ডেট ও দায়িত্ব সম্পর্কে পুরোপুরি অজ্ঞ। উল্লেখ্য, ভারতের বেসামরিক পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ২০০৮ সালের এক চুক্তির আওতায় আইএইএর তত্ত্বাবধানে থাকলেও তাদের কৌশলগত (সামরিক) কর্মসূচি কোনো আন্তর্জাতিক নজরদারির আওতায় নেই।
বিবৃতিতে সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনার কথাও তুলে ধরা হয়। পাকিস্তানের দাবি, গত বছর ভারতের দেরাদুন শহরে পাঁচজনকে একটি তেজস্ক্রিয় যন্ত্রসহ আটক করা হয়, যা ভাভা অ্যাটমিক রিসার্চ সেন্টার থেকে চুরি হয়েছিল। অন্য এক ঘটনায় একটি চক্রের কাছ থেকে জব্দ করা হয় ক্যালিফোর্নিয়াম নামের একটি উচ্চমাত্রার তেজস্ক্রিয় উপাদান, যার আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য ১০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি।
২০২১ সালেও ক্যালিফোর্নিয়াম চুরির তিনটি আলাদা ঘটনা নথিভুক্ত হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য অনুযায়ী, 'এসব ধারাবাহিক ঘটনা ভারতের পারমাণবিক ও তেজস্ক্রিয় উপাদানের নিরাপত্তাব্যবস্থার দুর্বলতা প্রমাণ করে। একইসঙ্গে স্পর্শকাতর দ্বৈত-ব্যবহারযোগ্য উপকরণ নিয়ে দেশটিতে একটি সক্রিয় কালোবাজারের অস্তিত্বের ইঙ্গিত দেয়।'
সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতই থাকছে: জয়শঙ্কর
পানি নিয়ে উত্তেজনা নতুন মাত্রা পেয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বৃহস্পতিবার বলেছেন, পাকিস্তানের সীমান্তপারের সন্ত্রাসবাদ 'বিশ্বাসযোগ্য ও স্থায়ীভাবে বন্ধ না হওয়া' পর্যন্ত সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতই থাকবে।
গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পরই ভারত একতরফাভাবে এই আন্তর্জাতিক চুক্তি স্থগিত করে।
পাকিস্তান কড়া ভাষায় এর নিন্দা জানিয়ে বলেছে, 'ভারতের এই সিদ্ধান্ত আমরা জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করছি। সিন্ধু পানি চুক্তি বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত একটি আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা, যার কোনো ধারায় একতরফাভাবে চুক্তি স্থগিত করার সুযোগ নেই।'
এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, 'পানি আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় স্বার্থ। ২৪ কোটির বেশি মানুষের লাইফলাইন এটি। এই পানি প্রবাহ আমরা যেকোনো মূল্যে রক্ষা করব।'
বিবৃতিতে আরও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়, 'চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তানের প্রাপ্য পানির প্রবাহ বন্ধ করা বা অন্যদিকে মোড় নেওয়ার যেকোনো প্রচেষ্টা যুদ্ধ ঘোষণার শামিল হবে। আর এর জবাব দেওয়া হবে পূর্ণ জাতীয় শক্তি প্রয়োগ করে।'
- অনুবাদ: নাফিসা ইসলাম মেঘা