Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Thursday
May 15, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
THURSDAY, MAY 15, 2025
কৃষণ চন্দরের গল্প—জামগাছ

ইজেল

অনুবাদ: আন্দালিব রাশদী
28 May, 2022, 06:30 pm
Last modified: 28 May, 2022, 06:30 pm

Related News

  • রং চলিষ্ণু, রঙ্গিলা প্রেমিক...
  • শুল্ক, জ্বালানি, আমলাতন্ত্রসহ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের প্রধান উদ্বেগ যেগুলো
  • কলম্বো সাহিব কা মকবারা–ফিরছে তার আদিরূপে
  • অ্যান্টার্কটিকায় চোখধাঁধানো কয়েক দিন
  • রেলের র‍্যালা 

কৃষণ চন্দরের গল্প—জামগাছ

নিজের দুই হাত কচলাতে কচলাতে লিটারেরি একাডেমির সেক্রেটারি বললেন, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমাদের ডিপার্টমেন্ট কেবল সাংস্কৃতিক বিষয়ের সাথে জড়িত। কলম আর দোয়াত দিয়ে তো আর গাছ কাটা যায় না, এর জন্য দরকার পড়বে করাত আর কুড়াল। সে কারণে নথিতে জরুরি ফ্ল্যাগ লাগিয়ে আমরা বন বিভাগকে লিখেছি।’
অনুবাদ: আন্দালিব রাশদী
28 May, 2022, 06:30 pm
Last modified: 28 May, 2022, 06:30 pm

[কৃষণ চন্দর (২৩ নভেম্বর ১৯১৪-৮ মার্চ ১৯৭৭) উর্দু ও হিন্দি ভাষায় গল্প ও উপন্যাস লিখে অসাধারণ জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন। তার গল্প ও কাহিনির ওপর ভিত্তি করে বারোটি সিনেমা নির্মিত হয়েছে। তিনি ভারতীয় সমাজের একজন নিবিড় পর্যবেক্ষক। উর্দু থেকে রাজ নায়িম অনূদিত  ইংরেজি 'দ্য জামুন ট্রি' আমলতান্ত্রিক ব্যবস্থার এবং অচলাবস্থার একটি মর্মান্তিক রম্য দলিল। ইংরেজি থেকে গল্পটি অনূদিত।]

গতরাতে একটা বড় ঝড় হয়ে গেল। সচিবালয়ের লনে একটা জামগাছ উপড়ে পড়ল। সকালে যখন এটা মালির চোখে পড়ল, দেখল একজন মানুষ গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

মালি দৌড়ে পিয়নের কাছে গেল; পিয়ন ছুটল কেরানির কাছে; কেরানি দৌড়ে সুপারিনটেনডেন্টের কাছে গেলেন; আর অফিস থেকে ছুটে সুপারিনটেনডেন্ট বাইরে লনের দিকে এলেন। কয়েক মিনিটের মধ্যেই গাছে চাপা পড়া মানুষের চারদিকে জমায়েত হলো অনেক মানুষ।

একজন কেরানি মন্তব্য করলেন, 'বেচারা জামগাছ, কত ফল ধরত।' 

দ্বিতীয় কেরানি স্মরণ করলেন, 'গাছের জামগুলো কত রসাল ছিল।' 

তৃতীয় কেরানি দুঃখে প্রায় কেঁদে ফেলেন এমন অবস্থা। 'মৌসুমে আমি থলে ভরে জাম নিয়ে যেতাম; আমার বাচ্চারা যে কত মজা করে জাম খেত।' 

চাপাপড়া মানুষের দিকে আঙুল তুলে বলল, 'কিন্তু এই লোকটা', সুপারিনটেনডন্টও ভাবলেন, 'হ্যাঁ, এই লোকটা।'

দ্বিতীয় কেরানি বললেন, 'মানুষটা নিশ্চয়ই মারা গেছে, এমন ভারী একটা গাছের কাণ্ড যদি একজন মানুষের ওপরে পড়ে, আর তার কোমর ভেঙে দেয়, তার বাঁচার উপায় কী?'

চাপাপড়া মানুষ কষ্টে, গোঙ্গাতে গোঙ্গাতে বলল, 'না, আমি জীবিত।' মালি পরামর্শ দিল, গাছটা সরিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব লোকটাকে টেনে তোলা উচিত। 

আলসে ও স্থূলদেহ এক পিয়ন বলল, 'মনে হয় কাজটা কঠিন হবে, গাছের কাণ্ডটা ভীষণ ভারী।

মালি জবাব দেয়, 'কেমন কঠিন? যদি সুপারিনটেনডেন্ট সাহেব হুকুম দেন ১৫-২০ জন মালি, পিয়ন, কেরানি হাত লাগালে এখনই তো চাপাপড়া মানুষটাকে টেনে তোলা যাবে।'

সমস্বরে কেরানিদের অনেকে বললেন, 'মালি ঠিকই বলেছে, আমরা রাজি আছি, চেষ্টা করে দেখিনা।'

তখনই গাছটাকে তোলার জন্য বহুসংখ্যক মানুষ তৈরি হয়ে গেল। সুপারিনটেনডেন্ট বললেন, অপেক্ষা করো। আমি আন্ডার সেক্রেটারির সাথে পরামর্শ করে নিই। সুপারিনটেনডেন্ট আন্ডার সেক্রেটারির কাছে গেলেন, আন্ডার সেক্রেটারি গেলেন ডেপুটি সেক্রেটারির কাছে, ডেপুটি সেক্রেটারি ছুটলেন জয়েন্ট সেক্রেটারির কাছে। আর জয়েন্ট  সেক্রেটারিকে যেতে হলো চিফ সেক্রেটারির কাছে, চিফ সেক্রেটারি গেলেন মন্ত্রীর কাছে।

মন্ত্রী চিফ সেক্রেটারির সাথে কথা বললেন; চিফ সেক্রেটারি সে কথা জয়েন্ট সেক্রেটারিকে জানালেন; জয়েন্ট সেক্রেটারি কথা বললেন ডেপুটি সেক্রেটারির সাথে; ডেপুটি সেক্রেটারি সে কথা আন্ডার সেক্রেটারিকে জানালেন। তারপর ফাইল চালু করা হলো, ততক্ষণে দিনের অর্ধেক কেটে গেছে।

দুপুরে খাবারের সময় চাপাপড়া মানুষটির চারপাশে বহুলোক জমায়েত হলো, এ বিষয়ে তাদের বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য রয়েছে। স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কাজ করার মানসিকতা সম্পন্ন দু-একজন কেরানি বিষয়টা নিজেদের হাতে তুলে নিতে চাইল। সরকারের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা না করে তারা সিদ্ধান্ত দিল এখনই গাছটাকে সরিয়ে ফেলবে। আর তখনই ফাইল হাতে ছুটে এলেন সুপারিনটেনডেন্ট। বললেন, 'আমরা নিজেদের ঘাড়ে দায়িত্ব নিয়ে এভাবে গাছ সরাতে পারি না। আমরা ট্রেড ডিপার্টমেন্টের সাথে যুক্ত, আর গাছের ব্যাপারটা অ্যাগ্রিকালচার ডিপার্টমেন্টের অধীনে। কাজেই আমি নথিতে জরুরি লিখে অ্যাগ্রিকালচার ডিপার্টমেন্টে পাঠিয়ে দিচ্ছি। আমরা তাদের সাড়া পাওয়ামাত্রই এই গাছটা সরিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করব।'

পরদিন অ্যাগ্রিকালচার ডিপার্টমেন্ট জবাব দিল- গাছটা পড়েছে ট্রেড ডিপার্টমেন্টের লনে। কাজেই গাছটা সরাবে কিনা, নাকি  সেখানে পড়ে থাকবে, এটা তাদের ব্যাপার। এই জবাবে ক্ষুব্ধ হয়ে ট্রেড ডিপার্টমেন্ট লিখল, গাছ সরানো না সরানোর দায়িত্ব অ্যাগ্রিকালচার ডিপার্টমেন্টের ওপরই বর্তায়; এ নিয়ে ট্রেড ডিপার্টমেন্টের কিছুই করার নেই।

দ্বিতীয় দিনও নথি ওঠানামার মধ্য দিয়েই চলল; শেষ পর্যন্ত সন্ধ্যা নাগাদ একটি সাড়া মিলল—'আমরা বিষয়টিকে হর্টিকালচার বিভাগের কাছে পেশ করতে যাচ্ছি, কারণ ফল হয় এমন বৃক্ষের ক্ষেত্রে দায়দায়িত্ব তাদের। কৃষি বিভাগ কেবল খাদ্য ও চাষাবাদসংক্রান্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে কর্তৃত্ববান। জামগাছ যে একটি ফলদায়ক গাছ, এতে কোনো সন্দেহ নেই, সুতরাং হর্টিকালচার ডিপার্টমেন্টের যে অধিক্ষেত্র, এই বৃক্ষটি তার আওতায়ই পড়েছে।'

তৃতীয় দিন হার্টকালচার ডিপার্টমেন্টের সাড়া পাওয়া গেল—কড়া জবাব, তার সাথে জুড়ে আছে কী এক পরিহাস। মনে হচ্ছে হর্টিকালচার ডিপার্টমেন্টের সচিবের একটি সাহিত্যিকি মেজাজ রয়েছে। তিনি লিখেছেন, 'কী বিস্ময়কর! একদিকে আমরা চালাচ্ছি 'আরও গাছ ফলাও' নামের উচ্চাকাক্সক্ষী কর্মসূচি ও প্রচারনা। অন্যদিকে এমন সরকারি বিভাগও আছে যারা গাছ কেটে ফেলার সুপারিশ পাঠায়— আর তা-ও আবার ফলবান বৃক্ষ। অধিকন্তু তা জামের মতো ফলের একটি গাছ, যে গাছের ফল মানুষ মহাতৃপ্তির সাথে খেয়ে থাকে। যে অবস্থায়ই হোক না কেন, আমাদের ডিপার্টমেন্ট ফলদায়ক বৃক্ষ কর্তনের অনুমতি দিতে পারে না।'

স্বতঃস্ফূর্তভাবে যারা কাজ করতে চায়, তাদের একজন মন্তব্য করলেন, 'তাহলে এখন আর কী করা! গাছ যদি কাটা না যায়, তাহলে মানুষটাকেই কেটে সরাতে হবে।'

তিনি আঙুল উচিয়ে দেখালেন এবং বললেন, 'মানুষটাকে যদি ঠিক মাঝখানে বক্ষ-বরাবর আড়াআড়ি কাটা যায়, তাহলে এদিক থেকে বের করা যাবে অর্ধেক মানুষ, ওদিকে থেকে বাকি অর্ধেক। গাছটা তাহলে যেমন আছে তেমনই পড়ে থাকবে।

চাপাপড়া বেচারা তখন প্রতিবাদ করলেন, 'এভাবে করলে তো আমি মরেই যাব।'

একজন কেরানি তখন বললেন, 'তিনি ঠিক কথাই বলেছেন।'

মানুষটিকে মাঝবরাবর অর্ধেক করে কেটে ফেলার পরামর্শ যিনি দিয়েছিলেন, তিনি সোচ্চারকণ্ঠে প্রতিবাদ জানালেন। 'আজকাল প্লাস্টিক সার্জারি যে কত দূর এগিয়েছে, সে সম্পর্কে আপনাদের কোনো ধারণাই নেই। আমি মনে করি, যদি এই মানুষটাকে মাঝবরাবর দুই খণ্ড করে যদি টেনে বের করা হয়; প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে তাকে আবার এক করা সম্ভব হবে।

এবার নথি পাঠানো হলো মেডিকেল ডিপার্টমেন্টে।

মেডিক্যাল ডিপার্টমেন্ট তখনই বিষয়টি নিয়ে ভাবতে শুরু করল এবং পরদিনই ডিপার্টমেন্টের সবচেয়ে দক্ষ প্লাস্টিক সার্জনকে সরেজমিন তদন্ত করতে পাঠিয়ে দিল। সার্জন গাছচাপা মানুষটাকে ভালো করে গুঁতো দিতে থাকলেন, তার ব্লাড পেশার পরীক্ষা করলেন, তার শ্বাস-প্রশ্বাস, হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুস পরীক্ষা করলেন। অতঃপর তিনি তার তদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করলেন, এই মানুষেরওপর অবশ্যই প্লাস্টিক সার্জারি চালানো যাবে এবং তা সফলও হবে, তবে এতে মানুষটার মৃত্যু ঘটবে।

অতএব প্লাস্টিক সার্জারির প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করা হলো।

রাতের বেলা মালি চাপাপড়া মানুষকে কিছু পরিমাণ ডাল-ভাত খাওয়াল। তাদের পাশে পুলিশ গার্ড বসানো হয়েছিল, পাছে লোকজন নিজেদের হাতে আইন তুলে নেয় এবং নিজেরাই গাছটাকে সরাতে শুরু করে দেয়। তবে একজন পুলিশ কনস্টেবল তার প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে মালিকে খাওয়ানোর অনুমতি দিলেন।

মালি চাপাপড়া মানুষকে বলল, আপনার ফাইল চালু হয়ে গেছে। আশা করছি আগামীকাল নাগাদ একটা সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে।

গাছ চাপাপড়া মানুষ কোনো কথা বললেন না।

মালি আবার বলল, 'আপনার কোনো উত্তরাধিকার—মানে বউ-বাচ্চা কিছু থাকলে বলেন, আমি তাদের খবর দিতে চেষ্টা করব।

চাপাপড়া মানুষ বহু কষ্টে বললেন, না, কেউ নেই।

আফসোস করতে করতে মালি অন্যদিকে সরে গেল।

রাতের বেলা মালি চাপাপড়া মানুষের মুখে খিচুড়ির লোকমা ঢুকাতে গিয়ে জানাল, ব্যাপারটা এখন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হাতে। আপনার মামলাটা সেখানেই দাখিল করা হবে। আশা করছি সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে।

চাপাপড়া মানুষ তখন ধীরে ধীরে আবৃত্তি করলেন:

আমি জানি আপনি আমাকে উপেক্ষা করবেন না

আমার বেদনার কাহিনি শোনার আগে,

যতক্ষণ না আমার মৃত্যু হয়।

বিস্মিত হয়ে মালি নিজের হাত রাখে তার মুখের ওপর, জানতে চায় আপনি কি একজন কবি?

চাপাপড়া মানুষ ধীরে ধীরে তার মাথা নেড়ে সম্মতি জানান।

পরদিন মালি পিয়নকে জানায়, পিয়ন কেরানিকে বলে। অবিলম্বে পুরো সচিবালয়ে ছড়িয়ে পড়ে যে চাপাপড়া মানুষ আসলে একজন কবি। আর তখনই বহু মানুষ কবিকে দেখতে ভিড় জমাতে শুরু করে। সন্ধ্যা নাগাদ তার খবর শহরে ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন এলাকার কবিরা জমায়েত হতে শুরু করেন। সকল ধরনের বহু বিচিত্র এলাকার কবিরা জমায়েত হতে শুরু করেন। সকল ধরনের বহু বিচিত্র কবিতে সচিবালয়ের লন ভরে গেল। চাপাপড়া মানুষকে ঘিরে একটি সান্ধ্য মুশায়রার আয়োজন করা হলো। অনেক কেরানি সাহিত্য ও কবিতার প্রতি আগ্রহ আছে এমন কজন আন্ডার সেক্রেটারিও মুশায়েরার জন্য রয়ে গেলেন। কবিদের কেউ কেউ চাপাপড়া মানুষকে উদ্দেশ্য করে গজল গাইলেন, কবিতা থেকে আবৃত্তি করলেন।

যখন সচিবালয় জেনে গেল গাছের তলায় চাপাপড়া মানুষ আসলে কবি। সচিবালয় সাব-কমিটি সিদ্ধান্ত নিল, যেহেতু তিনি কবি, তার ফাইলের সাথে অ্যাগ্রিকালচার ডিপার্টমেন্টের কোনো সম্পর্ক নেই, বরং সংস্কৃতি বিভাগের সম্পর্ক রয়েছে। সুতরাং সংস্কৃতি বিভাগকে অনুরোধ জানানো হলো তারা যত শিগগির সম্ভব ওই বিষয়ে যেন সিদ্ধান্ত নেন এবং হতভাগ্য কবিকে ছায়াময় গাছের চাপ থেকে উদ্ধার করে তার মুক্তির ব্যবস্থা করা হয়।

সংস্কৃতি বিভাগের বিভিন্ন শাখা ঘুরে নথি শেষ পর্যন্ত সাহিত্য একাডেমির সেক্রেটারির কাছে পৌঁছল। বেচারা সেক্রেটারি তখনই নিজের গাড়িতে চড়ে সচিবালয়ে পৌঁছলেন এবং চাপাপড়া মানুষের সাক্ষাৎকার নিতে শুরু করলেন।

তিনি জিজ্ঞেস করলেন, 'আপনি একজন কবি?

চাপাপড়া মানুষ জবাব দিলেন, 'হ্যাঁ, তাই।'

'আপনি কোন ছদ্মনামে লিখে থাকেন?

'ওস (শিশির)'

সেক্রেটারি সবেগে তার বিস্ময় প্রকাশ কররেন। আপনি কি সেই একই ওস, যার সম্প্রতি প্রকাশিত কাব্য সংগ্রহের নাম 'ওস কি ফুল' (শিশিরের ফুল)?'

চাপাপড়া মানুষ মাথা নেড়ে সম্মতি জানালেন।

সেক্রেটারি জিজ্ঞেস করলেন, 'আপনি কি আমাদের একাডেমির সদস্য?'

'না।'

'অদ্ভুত তো! সেক্রেটারি বিস্ময় প্রকাশ করলেন, এমন বড় একজন কবি, ওস কে ফুল-এর মতো কাব্যগ্রন্থের লেখক, তিনি একাডেমির সদস্য নন। ওফ, ওফ, কত বড় ভুল করে ফেলেছি আমরা—এমন বিখ্যাত কবি, কী এক অন্ধকারে চাপা পড়ে আছেন।'

'অন্ধকার নয়, গাছ। অনুগ্রহ করে আমাকে গাছের নিচ থেকে তুলুন।'

সেক্রেটারি বললেন, 'আমি এখনই সব ব্যবস্থা করছি।' তারপর তিনি তার ডিপার্টমেন্টকে বিষয়টি জানালেন।

পরদিন সেক্রেটারি ছুটে এলেন চাপাপড়া কবির কাছে। বললেন, অভিনন্দন! আমাকে মিষ্টি পাঠাতে ভুলবেন না যেন। আমাদের কর্মকর্তারা আপনাকে একাডেমি সেন্ট্রাল কমিটির সদস্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই নিন, এই সরকারি আদেশে বিষয়টি আপনাকে জানানো হয়েছে। চাপাপড়া মানুষ গোঙ্গাতে গোঙ্গাতে বললেন, 'আগে আমাকে গাছের নিচে থেকে টেনে বের করুন।'

মানুষটার শ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে, তার চোখ দেখে বোঝা যাচ্ছে তিনি যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাচ্ছেন।

সেক্রেটারি বললেন, 'সেটা আমরা করতে পারি না। আমাদের পক্ষে যা করা সম্ভব আমরা করেছি। আমরা সর্বাধিক যে পর্যন্ত করতে পারি, তা হচ্ছে আপনার মৃত্যু হলে আপনার স্ত্রীকে একটা স্টাইপেন্ড দেওয়া। আপনি যদি সে রকম অনুরোধ দাখিল করেন, আমরা তাই করতে পারি।'

থেমে থেমে কবি বললেন, 'আমি এখনো জীবিত, আমাকে বাঁচিয়ে রাখুন।'

নিজের দুই হাত কচলাতে কচলাতে লিটারেরি একাডেমির সেক্রেটারি বললেন, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমাদের ডিপার্টমেন্ট কেবল সাংস্কৃতিক বিষয়ের সাথে জড়িত। কলম আর দোয়াত দিয়ে তো আর গাছ কাটা যায় না, এর জন্য দরকার পড়বে করাত আর কুড়াল। সে কারণে নথিতে জরুরি ফ্ল্যাগ লাগিয়ে আমরা বন বিভাগকে লিখেছি।'

কৃষণ চন্দর

পরদিন সকালে বন বিভাগের লোকজন করাত ও কুড়াল নিয়ে হাজির হলো। কিন্তু এসে দেখল তাদের গাছ কাটতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। বাধা দিচ্ছে পররাষ্ট্র দপ্তর। কারণ, এক দশক আগে সচিবালয়ের লনে এই গাছটা লাগিয়েছিলেন পেটুনিয়ার প্রধানমন্ত্রী। এখন যদি গাছটিকে কাটা হয়, তাহলে ব্যাপারটা পেটুনিয়া সরকারের সাথে আমাদের সম্পর্কের চিরস্থায়ী ফাটল ধরার মতো ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

একজন কেরানি ক্ষুব্ধ স্বরে চিৎকার করে উঠলেন, কিন্তু এটা তো একজন মানুষের জীবন-মৃত্যুর সম্পর্ক। দ্বিতীয় কেরানি প্রথম কেরানিকে নসিহত করলেন, অন্যদিকে এটা তো দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কেরও ব্যাপার। একটু বোঝার চেষ্টা করো পেটুনিয়া সরকার আমাদের সরকারকে কী পরিমাণ সাহায্য-সহযোগিতা দিয়ে থাকে। আমরা কি সেই বন্ধুত্বের জন্য একজন মানুষের জীবন বলিদান করতে পারি না?'

'তাহলে কবিকে মরতে হবে?'

'অবশ্যই।'

আন্ডার সেক্রেটারি সুপারিনটেনডেন্টকে বললেন, 'আজ সকালে প্রধানমন্ত্রী বিদেশ ভ্রমণ শেষে ফিরে এসেছেন। আজ বিকেল চারটায় পররাষ্ট্রবিষয়ক দপ্তর বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর সামনে উপস্থাপন করবেন; তিনি যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটাই আমাদের সকলকে মেনে নিতে হবে।'

বিকেল পাঁচটায় সুপারিনটেনডেন্ট নিজেই ফাইলসহ কবির কাছে পৌঁছলেন। পৌঁছামাত্রই তিনি নথি নাড়িয়ে সানন্দে চেঁচিয়ে বললেন, 'প্রধানমন্ত্রী গাছ কাটার নির্দেশ দিয়েছেন, আন্তর্জাতিক কোনো বিপর্যয়ের দায়দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী নিজেই গ্রহণ করেছেন। আগামীকাল এই গাছ কাটা হবে এবং আপনি সমস্ত যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবেন।'

'আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন?' আপনার ফাইলের কাজ আজ শেষ হয়েছে। কবির বাহুতে হাত রেখে সুপারিনটেনডেন্ট কথাগুলো বললেন।

কিন্তু কবির বাহু শীতল। তার চোখের পাতা নিস্পন্দ। একটি পিপীলিকার সারি তার মুখের ভেতর ঢুকছে। তার জীবনের নথিও ততক্ষণে সম্পন্ন হয়ে গেছে।

Related Topics

গল্প / আমলাতন্ত্র / আমলা / ইজেল

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • জমির দলিলমূল্য ও বাজারমূল্যের ব্যবধান কমাতে উদ্যোগ সরকারের
  • আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ: মুক্ত ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্র
  • চীনের যুদ্ধবিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র পাকিস্তানকে ভারতের বিরুদ্ধে জয় এনে দিয়েছে
  • সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আ.লীগ নিষিদ্ধ জরুরি ছিল, নির্বাচন অভ্যন্তরীণ বিষয়: দিল্লির মন্তব্যের জবাবে প্রেস সচিব
  • উপহার হিসেবে কাতারের বিমান না নেওয়াটা ‘বোকামি’ হবে: ট্রাম্প
  • এনবিআর বিলুপ্ত করে পৃথক ২ বিভাগ: প্রতিবাদে তিন দিনের কলম-বিরতি ঘোষণা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের

Related News

  • রং চলিষ্ণু, রঙ্গিলা প্রেমিক...
  • শুল্ক, জ্বালানি, আমলাতন্ত্রসহ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের প্রধান উদ্বেগ যেগুলো
  • কলম্বো সাহিব কা মকবারা–ফিরছে তার আদিরূপে
  • অ্যান্টার্কটিকায় চোখধাঁধানো কয়েক দিন
  • রেলের র‍্যালা 

Most Read

1
বাংলাদেশ

জমির দলিলমূল্য ও বাজারমূল্যের ব্যবধান কমাতে উদ্যোগ সরকারের

2
বাংলাদেশ

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ: মুক্ত ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্র

3
আন্তর্জাতিক

চীনের যুদ্ধবিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র পাকিস্তানকে ভারতের বিরুদ্ধে জয় এনে দিয়েছে

4
বাংলাদেশ

সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আ.লীগ নিষিদ্ধ জরুরি ছিল, নির্বাচন অভ্যন্তরীণ বিষয়: দিল্লির মন্তব্যের জবাবে প্রেস সচিব

5
আন্তর্জাতিক

উপহার হিসেবে কাতারের বিমান না নেওয়াটা ‘বোকামি’ হবে: ট্রাম্প

6
বাংলাদেশ

এনবিআর বিলুপ্ত করে পৃথক ২ বিভাগ: প্রতিবাদে তিন দিনের কলম-বিরতি ঘোষণা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net