Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Wednesday
October 01, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
WEDNESDAY, OCTOBER 01, 2025
জবরখাকি

ইজেল

বর্ণালী সাহা
31 October, 2020, 12:00 am
Last modified: 31 October, 2020, 12:14 am

Related News

  • আইজ্যাক বাবেলের গল্প | বুড়ো শ্লয়মি
  • জ্যাক রিচি-র রোমাঞ্চ গল্প | ২২ তলা উপরে—২২ তলা নিচে
  • মনিরু রাভানিপুরের গল্প | তেহরান 
  • জ্যাক রিচি-র রহস্যগল্প: এমিলি যখন ছিল না
  • মার্কেসের গল্প: স্লিপিং বিউটি অ্যান্ড দি এয়ারপ্লেন

জবরখাকি

গল্প: শারমিন আমার দিকে ঘুরে দাঁড়াল – কোলে মেয়ে। পিছনে নীল-কমলা পর্দা-টানা জানালা থেকে চাপা আলো ঠিকরাচ্ছিল; গির্জায় রঙিন স্টেইন্‌ড কাচের ভিতর দিয়ে ওইরকম আলো আসে। শারমিন যদি বিদেশীদের মতো ফর্সা হতো, তাহলে ওকে কুমারী-মাতা মেরি বলে মনে হতো। রূপের কম্পিটিশনে আমি রূপার কাছে হেরে গেলেও শারমিন সহজে হার মানার নয় – চর্চা করতে করতে শারমিন অনেক দূর চলে গেছে। দেখলাম গাঢ় করে ভুরু এঁকেছে শারমিন – একটা রামকোকিলের ডানার মতো মুখের দুইদিকে ছড়িয়ে গেছে রেখা দুইটা।
বর্ণালী সাহা
31 October, 2020, 12:00 am
Last modified: 31 October, 2020, 12:14 am

(শেষ অংশ)

মেয়ে হওয়ার আনন্দে সাব্বির বেশ খানিকটা ফর্সা হয়ে গেছে – মেয়ে যেন আমার ভিতর থেকে বের হয়ে সাব্বিরের ভিতরে খানিকটা ঢুকে গেছে। 

মেয়ে আমার এমন কেন হলো? বিছানায় শুতেই চায় না। সারাক্ষণ বুকের সাথে লেপ্টে রাখতে হয় ওকে। ঘুমিয়ে গেছে ভেবে দৈবাৎ কখনো শোয়াতে গেলে চামড়ার ওম মিস্‌ করে – টের পায় – ঘুম ভেঙে কেঁদে ওঠে। সাব্বির রাতদিন সেইসব ভিডিও করে আর ওর ফ্রেন্ডদের হোয়াট্‌সঅ্যাপ গ্রুপে পাঠায়। আর আমার হোয়াট্‌সঅ্যাপ গ্রুপ? সেখানে দিনভর কাজিয়া আর কলতলার সালিশ। আমার মেয়ে হওয়ার পর হসপিটালে রূপা আমাকে দেখতে গিয়ে ওর বর বাপ্পি ভাইকে নাকি আবিষ্কার করেছে হসপিটালের নিচে – উনি নাকি মহাচিন্তায় মুখ কালো করে সিগারেট ফুঁকছিলেন। শারমিনের যে বাচ্চাটা নষ্ট হলো, ওটা আসলে বাপ্পি ভাইয়ের। দুইজনই স্বীকার করে নিয়েছে। আমার পক্ষে এসব আর নেওয়া সম্ভব না – ক্ষীরের পুতুলের মতো একটা মেয়ে হলো আমার আমার আমার; কিন্তু ওরা সেই স্কুলজীবন থেকে শুধু পড়ে আছে ওদের নষ্টামি, ওদের কেলেঙ্কারি আর ওদের হিংস্র খুনাখুনি নিয়ে। আমি কেউ না ওদের। ঠিক আছে। আমার মেয়েও ওদের কেউ না। গ্রুপ চ্যাট মিউট করে রেখেছি। আমি সাব্বিরকে চাই নাই। যাকে চেয়েছিলাম, তাকে চাওয়া বারণ। সাব্বিরের কাছে আমি সত্য লুকাই নাই – সাব্বির আর ওর দয়ার্দ্র চোখ দুইটাও আমাকে প্রতারণা করে নাই, প্রায় হাতজোড় করে বলেছে 'একটা বাচ্চা চাই'। বলেছে আমাদের যৌথতাকে সুন্দর, সহনীয় আর নিঃসন্দেহ করতে হলেও আমাদের বাচ্চা চাই, বাচ্চা বাচ্চা বাচ্চা চাই – একবার বাচ্চা হয়ে গেলে সাব্বির আর আমাকে বিছানায় চাইবে না; আমি আবার পুরানো-আমি'র মতো আমার ক্লজেটে ঢুকে যেতে পারব। আমি মেনে নিয়েছিলাম। আমি ছেলে চেয়েছিলাম। 'তুই হওয়ার পর তোর সোনাফুপি বলছিল কী জানিস? বলছিল, এইবার হইছে একটা মাগি', আম্মা আমার চুলে বেণি বাঁধতে বাঁধতে হাসতে হাসতে বলেছিল। আমি হিক্কা তুলে কেঁদেছিলাম। সোনাফুপি আমাকে এমন গালি দিতে পারে বুঝি? আমাকে কাঁদতে দেখে আম্মা আরো জোরে-জোরে হেসেছিল। সাব্বিরকে সেদিন বললাম এই গল্প – সাব্বির বিশ্বাসই করতে পারে নাই। উল্টা মেয়ের গালে একটা আঙুল ছুঁইয়ে আমার দিকে সন্দিগ্ধ চোখে চেয়েছে, যেন আমার কোলে ওর মেয়ে সেইফ না – ঢং – যেন ওর মেয়ের জন্য হুমকি হচ্ছি আমি, যেন দশ-পনের বছর আগেও সাব্বিররা দলে-বলে অন্য কারো মেয়েকে এলিফ্যান্ট রোডের রাস্তায় কি কোচিং সেন্টারের বাইরে চড় মারে নাই, যেন প্রেমে কোনো মেয়ে 'হ্যাঁ' না-বললে কমপক্ষে তার চরিত্রে কালি দেওয়ার হুমকি দেয় নাই।

আম্মা হাতে গরম ইস্ত্রি নিয়ে ঘরে ঢুকল – মেয়ের পেটে নাকি সেঁক দিতে হবে – আমি আঁতকে উঠলাম। 'ধুর বোকা। মেয়ের পেটে গ্যাস হইছে, টের পাস না? দ্যাখ্‌ খালি কান্দে, আর কেমন মুলার মতো গন্ধ। তোরে কত সেঁক দিছি! তুই আরামে ঘুমায়া যাইতি'। আম্মা বিছানার উপর এসে বসলো। আমি আম্মার পেটের কাছে মাথা নিয়ে গেলাম – মনে হলো ওখানেই আমি আজীবন বন্দী হয়ে আছি; কখনো আমাকে পেট চিরে বের করা হয় নাই। কোন্‌খান থেকে যেন একটা সুর আসলো কানে – যেন খুঁতখুঁতে মেজাজের কেউ অনেকক্ষণ ধরে একটা দোতারা টিউনিং করছে। 'ধুর বোকা। ওইটা তুলা ধুনার শব্দ'। হজরত মনসুর হাল্লাজ নামে নাকি এক ফকির ছিলেন – আউলিয়া একজন; উনি নাকি একটা তুলার স্তূপের দিকে তাকানো মাত্র পুরা স্তূপটা ধুনা কমপ্লিট হয়ে যেত – সেই থেকে উনার নাম হলো 'হাল্লাজ' – আরবী শব্দ – এর অর্থ হচ্ছে ধুনকার। 'আম্মা, আম্মা, ধুন মানে তো সুর। গানের সুর। হিন্দিতে…'। 'আচ্ছা, বাপ, আচ্ছা'। আম্মা সমানে ওলি-আউলিয়াদের কথা বলে যেতে লাগল – আহারে, দিল্লি গেলাম, নিজামুদ্দিন আউলিয়ার মাজার দেখলাম কিন্তু আজমির দেখলাম না; রাস্তায় তো অ্যাক্সিডেন্ট হলেও হতে পারতো – এইসব। আমার আর আম্মার কপালগুণে মেয়ে আমার একটু ঘুমিয়েছে। বাসায় কোনো হেল্পিং হ্যান্ড না-থাকায় আম্মা আমার ঘর ঠিকমতো রেডি করতে পারে নাই। ফ্লোরের উপর ডাঁই করে রাখা অজস্র পুরানো পত্রিকা – ধ্বংসপ্রাপ্ত পুরাকীর্তির আধভাঙা স্তম্ভের মতো সারা ঘর জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে। আম্মাকে ভাইয়া ডাকে 'হোর্ডার' – খালি পুরানো জিনিস জমায়; কিছুই ফেলে না। জানালার কাছে ওই নারকেল গাছটা আর নাই – মরা ডালে বসতো যে মরা চোখওলা কাকটা, সে বুঝি মরেছে।

আম্মা বিছানার উপর পেপার পেতে দিয়ে খাবারের প্লেট সাজিয়ে দিল। গ্লাসে পানি ঢালার শব্দে আমার পেশাব পেতে থাকল – মেয়ে হওয়ার পর ব্লাডার আরো দুর্বল হয়ে গেছে। হসপিটাল থেকে ফিরেছি পর আমার খাওয়ার রুচি নাই। আম্মা সালাদের বাটিতে লেবু কেটে বিছানায় পাতা পেপারের উপর রাখল – ইংলিশ পেপার। সেই কবে ভাইয়া স্যাট দেওয়ার জন্য ইংলিশ পেপার রাখা শুরু করেছিল, সেই থেকে বাসায় প্রতি শুক্রবার ইংলিশ পেপার দিয়ে যায় – কেউ ছুঁয়েও দেখে না। ঝোলের বাটির নিচে একটা হেডলাইন হারিয়ে গেছে; অস্ট্রেলিয়ার এক ফেমিনিস্ট বুড়ি মারা গেছে – তাই পত্রিকার সাহিত্য পাতায় বুড়ির লেখা ছেপেছে বড় করে। এত বড় ইংলিশ আর্টিকেল পড়তে পারি না। বক্স করে দিয়েছে শুধু এই অংশটুকুঃ 

"The compelled mother loves her child as the caged bird sings. 
The song does not justify the cage, nor the...<আর দেখা যাচ্ছিল না>"

*

শারমিন বাসায় হাজির আমাদের সেই স্যুটকেসটা ঠেলতে ঠেলতে – এতদিন পর ওটা ফেরত দেওয়ার কথা মনে হলো ওর। ড্রয়িং রুম থেকে প্যাসেজ পেরিয়ে আমার রুমে ঢুকতে ওকে অসংখ্য ডুমো-ডুমো পুঁতির মালা ঝোলানো পর্দার ভিতর দিয়ে আসতে হয়েছে –নিঃশব্দআগমন ওর দ্বারা সম্ভব নয়, এমনকি ও নিজে চাইলেও নয়। ওর পায়ে রানিং শ্যু – ভেজা আর নোংরা। মেঝের উপর ছোপ-ছোপ পড়েছে।শারমিনের চালচলনে প্রাপ্তবয়স্ক সংবদ্ধতা ছিল না একফোঁটা, এখনো নাই – বাচ্চাদের মতো অনির্দেশ্য, কেমন ঢেপসা আর র‍্যান্ডম ওর মুভমেন্ট। ঘরে ঢোকার মুখে চৌকাঠে নিচু হয়ে বসে ভেজা জুতার ফিতার লুপ একটা-একটা করে টেনে-টেনে খুলতে লাগল ও –আগের মতো 'সই, ভাল করে বিনোদবেণী' রকমের অসহায় মুখ বানিয়ে আমার দিকে তাকাল না একবারও; গোঁয়ারের মতো মাথা নামিয়ে জুতা খুলতে লাগল।

"আল্লাহ্‌, ঘরের অবস্থা দেখো!", শারমিন নিজের ক্লামজি অবস্থা থেকে আমার চোখ সরাতে চাইল। নবজাতকের ঘর তো এমনই হয়; আর ও আমার মেয়েকে দেখতে এসেছে নাকি আমার ঘর দেখতে এসেছে? আমি এইসব বলায় ও লজ্জা পেয়ে নৌকার মতো হাত করে সেই হাতের কোটরে মেয়েকে তুলে নিল। আমরা ব্লিডিংএর অবস্থা জিজ্ঞেস করলাম একে অন্যকে, পেশাদার ধাত্রীদের মতো। 'ডাক্তারগুলি সারাদিন সি-সেকশনের বুদ্ধি দেয়, কিন্তু নিজের বউদেরকে বলে লেবার পেইন সহ্য করতে। তোরা কিন্তু হিপোক্রিট আছস। 'আমি হাসলাম। ভাব দেখালাম হোয়াট্‌সঅ্যাপ গ্রুপে কী হচ্ছে না-হচ্ছে, কিছুই আমি জানি না। শারমিন প্রত্যেকটা বাক্য শেষ করছিল এমনভাবে, যেন ওর মাথার উপরেই একটা ফলের গাছ বাতাসে দুলছে আর গাছের ডালে ধরে থাকা পাকা-পাকা ফলগুলি একটুর জন্য ওর নাগালের বাইরে আর ও আশা করছে বাতাসের তোড়ে একটা ফল ডাল থেকে ছিন্ন হয়ে ওর হাতে আসবে – তাই ও ক্ষণে-ক্ষণে করুণ দৃষ্টিতে ফলটার দিকে, মানে আমার দিকে, তাকাচ্ছে। কিন্তু আমি ধরা তো দেবো না, আহারে, আমায় পাবে না পাবে না, আহারে!

মেঝের উপর খোলা ডায়াপারের পাহাড় – সেইসব অতিক্রম করে শারমিন ঘরের কোনায় রাখা পুরানো পত্রিকার স্তূপের কাছে চলে গেল। তারপর মেয়েকে কোলের উপর দোলাতে দোলাতে বলল, 'আরে! ইংলিশ পেপারেই আসছিল আমাদের ছবি। আমি আর বাপ্পি ভাই সামনাসামনি বসে আছি লিট্‌ল ইটালিতে। মানে আশুলিয়ায় পিৎজা খাইতেছিলাম। ওকে? লিট্‌ল ইটালির রিভিউ আসছিল তো – পত্রিকার ফোটোগ্রাফারদের কোনো আক্কেল নাই। একবার পারমিশনও চায় নাই। বাপ্পি ভাইয়ের জায়গায় যদি জামি ভাই থাকত – একদম ওদেরকে স্যু করতো, ওকে?'

'আচ্ছা ভাল কথা – তোর জামি ভাইয়ের কী খবর? অনেকদিন কিছু শুনি না।', তবু আমি বাপ্পি ভাইয়ের টপিকের আশেপাশেও যাব না।

'উনাকে স্টেপ ডাউন করতে বলছে বোর্ড থেকে। পয়সা নিয়ে কিছু কমপ্লেইন ছিল – আমাদের কর্পোরেট সেল্‌সের কাজে তো বুঝিসই, পয়সা খাওয়ানোর রেওয়াজ আছে, ওকে? – আর তাছাড়া এক মেয়ে কমপ্লেইন করছিল। ভাগ্যিস আমার প্রোমোশনের রেকমেন্ডেশনটা আগে করে দিয়ে গেছিল ব্যাটা। নতুন বস্‌ আসতেছে। এইবার আর প্রেম করব না, প্রমিস! এইবার প্রেম-ট্রেম দেখে অন্যদিকে তাকায়া থাকব। ওকে? খুশি? হি হি…'

'শারমিন, একটা কথা বলি। কিছু মনে করিস না, ওকে? তোর কি একবারও মনে হয়, আংকেল বেঁচে থাকলে কী বলতেন?'

আমাদের বিয়ের ঠিক পর-পর শারমিনের আব্বু-আংকেল মারা যান। একদিন বাসার ছাদে গেলেন – আত্মহত্যা না, পানির ট্যাঙ্কি চেক করতে – আর ফেরেন নাই। ফরেনসিক প্যাথোলজি থেকে ভুলভাল রিপোর্ট আসে – যদিও সাব্বির মোটামুটি নিশ্চিত যে ওটা কার্বন-মনোক্সাইড পয়জনিং ছিল। অনেকদিন ধরেই ট্যাঙ্কিতে গ্যাস জমা হচ্ছিল তো। শারমিনের আব্বু-আংকেল তামাশার লোক ছিলেন – একটু পাগলা সায়েন্টিস্টও। মাঠা থেকে ইলেকট্রিসিটি বানানোর কথা কে আগে শুনেছে? উনার মনোহর পাগলামি দেখতে দেখতে কারো আর মনে থাকত না যে উনার প্রথম পক্ষের বউ-বাচ্চা ছিল, গ্রামে। শারমিনের আম্মু-আন্টিকে উনি উনার ভাতিজার পাত্রী হিসাবে পছন্দ করতে গিয়েছিলেন – নিজের পছন্দ হয়ে যাওয়ায় নিজেই বিয়ে করে ফেরেন তারপর। আমার আর সাব্বিরের বিয়েতে আংকেল অনেক দোয়া করেছিলেন। ততদিনে উনার মেহেদি-দেওয়া কমলা দাড়ি হয়েছিল। আমার মাথায় হাত দিকে সাব্বিরের দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে আংকেল বলেছিলেন, 'বাবা, এরা কিন্তু ডিয়ারিং মেয়ে, ডিয়ারিং মেয়ে'। সাব্বির আর আমি এত হেসেছিলাম পরে – এরপর থেকে নাটক-সিনেমায়-জীবনে কোনো সাহসী-সংগ্রামী মেয়ে দেখলেই আমরা বলতাম 'ডিয়ারিং মেয়ে'।

শারমিন আমার দিকে ঘুরে দাঁড়াল – কোলে মেয়ে। পিছনে নীল-কমলা পর্দা-টানা জানালা থেকে চাপা আলো ঠিকরাচ্ছিল; গির্জায় রঙিন স্টেইন্‌ড কাচের ভিতর দিয়ে ওইরকম আলো আসে। শারমিন যদি বিদেশীদের মতো ফর্সা হতো, তাহলে ওকে কুমারী-মাতা মেরি বলে মনে হতো। রূপের কম্পিটিশনে আমি রূপার কাছে হেরে গেলেও শারমিন সহজে হার মানার নয় – চর্চা করতে করতে শারমিন অনেক দূর চলে গেছে। দেখলাম গাঢ় করে ভুরু এঁকেছে শারমিন – একটা রামকোকিলের ডানার মতো মুখের দুইদিকে ছড়িয়ে গেছে রেখা দুইটা।

'শোন্‌। আমার আর বাপ্পি ভাইয়ের ওই এক সপ্তাহের ঘটনা – ওইটা কেউ মনে রাখবে না, ওকে? লাইফে আরো অনেক বড়-বড় জিনিস হয়।'

'হুঁ। বড় বড় জিনিস হয়। যেমন ধর্‌, আমার মেয়ে হইছে। এইটা বড় জিনিসই তো। কই তোদের তো তাতে কিছু আসলো-গেল না!'

'মেয়ে হইছে, অবশ্যই বড় জিনিস', শারমিন হঠাৎ মেয়েকে হাতের কোলের মধ্যে নতুন করে দোলাতে শুরু করল, যেন হঠাৎ ওর মনে পড়ে গেছে যে আমার মেয়ে হয়েছে। 'আমারও বাপ্পি ভাইয়ের সাথেএকটা মিসক্যারেজ হইছে। তার আগে আমার জামি ভাইয়ের সাথে ব্রেকআপ হইছে। তারও আগে আমার জামাইয়ের সাথে সেপারেশন হইছে। ওকে?বাকিদের কথা বাদ দিলাম, তুই আর রূপা তো কই আমার কোনো বড় জিনিসরে আমার বড় জিনিস হিসাবে দেখিস নাই! তোরা আমার প্রোমোশন হওয়া নিয়ে কতই না আহা-উহু করলি – কই আমার এনগেজমেন্ট রিং দেইখা তোরা তো সিনেমার বিদেশী মেয়েদের মতো চিল্লাচিল্লি করলি না! কেন করস্‌ নাই আমি জানি। তোরা তো ভালই জানোস্‌ এইসব সিনেমা-টাইপ ব্যাপার আমার ভাল্লাগে – তাই তোরা ক্যালকুলেশন কইরা ঠিক করছস এইসব আমারে তোরা দিবি না। ওকে? তোদের যেইটা ঠিক মনে হবে, শুধু সেইটায় তোরা আমারে আশকারা দিবি। যেমন, প্রোমোশন হওয়া। প্রোমোশন হওয়া তোদের চোখে ঠিক আছে। বসের সাথে সেক্স করা তোদের চোখে ঠিক নাই। ওইটা খারাপ। বন্ধুর জামাইয়ের সাথে সেক্স করাও ঠিক নাই। ওইটাও খারাপ। আমি আসলে কে? আমি কি তোদের একটা বইয়ের মেয়ে?'

'না, তুই আমাদের সিনেমার মেয়ে'। 

শারমিন আমার খোঁচা পাত্তা দিল না।'তোদের মুখে সারাজীবন শুনলাম শারমিন একটা বাজে মেয়ে। শারমিন শাড়ি পরলে নাভি দেখা যায়।শারমিনের সেক্স বেশি। মানলাম সেক্স বেশি। ওকে? মানলাম আমি অ্যাবনরমাল। ওকে? তোরা খুব নরমাল নাকি রে? মনে করছস্‌ তোর বাচ্চা হইছে তাই তুই নরমাল হইয়া গেলি?মানে আমার বাচ্চাটা যদি নষ্ট না হইত, আমিও নরমাল হইয়া যাইতাম, ওকে? গোঁজামিল দিয়া বুঝ দিতিযে শারমিন নরমাল, শারমিনের বাচ্চা নরমাল, শারমিনের জামাইও নরমাল – ওই লোকশারমিনরে পিটাইলেও বাচ্চা দিয়া যায়, যেই বাচ্চা আবার দেখতে বাপ্পি ভাইয়ের মতো… তোদের এইসব বালের নরমালরে আমি***, ওকে?'

মেয়ে কোলে নিয়ে শারমিন অবলীলায় গালিগালাজ করে গেল আমাদেরকে। গালির মধ্যে মধ্যে যতবার 'ওকে? ওকে?' বলছিল ও, ততবার ওর গলা ভেঙে আসছিল – কিন্তু ওর চোখে একফোঁটা পানিও ছিল না। আমার সমস্ত শরীর গুলিয়ে কান্না পাচ্ছিল – বিবেক-টিবেক ওইসব নয় –আমার মেয়েকে আমি আমার কোলে চাই। আম্মা একবার হসপিটালে ছিল – পাশের বেডে ছিল সর্বাঙ্গে ব্যান্ডেজ বাঁধা এক রোগিণী। তখনো ভাইয়া-ভাবীর বিয়ে হয় নাই – আম্মার বেডের পাশে বসে ভাইয়া চিৎকার করতে-করতে ঝগড়া করছিল আম্মার সাথে। কী নিয়ে ঝগড়া, এখন আর মনে নাই – মনে হয় ভাবীকে নিয়ে। আম্মাকে 'মাগি' ডেকেছিল ভাইয়া ওইদিন। ছিঃ। আমি টের পাচ্ছিলাম, পাশের বেডের শাদা-ব্যান্ডেজ-ক্যাসপার মহিলাটা অতিকষ্টে উনার ঘাড় নাড়িয়ে নিঃশব্দে প্রতিবাদ করছিলেন। কিন্তু ওইরকম একজন ইনভ্যালিড মানুষ তো মানুষই না – নোবডি। ভূত। ওইরকম ভূতের উপস্থিতিতে সব কথা বলা যায় একে-অন্যকে। কিছুই আটকায় না। কিন্তু কিন্তু কিন্তু আমার মেয়ে তো ভূত না। আমার মেয়ে তো নোবডি না। 'দে দেখি। দে ওকে', বলে আমি বিছানা ডিঙিয়ে মেয়েকে টেনে নিলাম।মেয়ে কাঁদছিল না। ক্ষণে অবাক, ক্ষণে বিরক্ত হয়ে দেখছিল শারমিনকে। তবু আমি ওর পাছায় তালে-তালে হালকা চাপড় দিয়ে বললাম, 'না, না'।

শারমিন বিছানায় এসে বসলো প্রথমে। জুৎ হচ্ছিল না দেখে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ল সরীসৃপের মতো। তারপর মেয়ের সাথে, এই প্রথম, দীর্ঘ দৃষ্টিবিনিময় করলো। খিলখিলখুলখুল করে হাসল। মেয়েকে নানান অদ্ভুত অদ্ভুত নামে ডাকল, কয়েকটা নাম সুরে-সুরে ইম্প্রোভাইজ করলো। তারপর আমার দিকে ফিরল।

'একটা জিনিস দেখবি? দ্যাখ্‌ দ্যাখ্‌। আমার ডান ভুরু অর্ধেকটা নাই।'

শারমিন ওর ঘামে ভেজা হাত আমার থাইয়ের উপর রেখে ভর দিয়ে উঠে আমাকে ওর ভুরু দেখাল। আমি 'ইয়াল্লাহ্‌!' বলে চোখ বড় বড় করলাম। শারমিন মতিচ্ছন্নের মতো হাসতে লাগল। হাসতে-হাসতে আমার বিছানার উপর চিত হয়ে গেল – ওর মাথা মেয়ের কাঁথার উপর; হাত দুইটা বুকে বাঁধা।

'তোর মনে আছে, আমরামেয়েরামিলে যে একবারছন্দসিনেমাহলেদুপুরের শোদেখতেগেছিলাম?'

'হুঁ। কী একটা জানি ছবি ছিল। কী বিশ্রী!', নায়ক ছিল কাজী মারুফ, নায়িকাটা ছিল দৃষ্টিকটু-রকমের বিশালবক্ষা; নাম মনে নাই।চুমুর সিনে – কিম্বা নায়িকার বুকে নায়কের সসম্মানে মাথা-ঘষার সিনে – হলভর্তি লোকেরা সবাই মিলে একটু পর-পর গালি দিয়ে উঠছিল। সে কী ম্যাডনেস! আমরাও সমানে গালি দিচ্ছিলাম।রূপা আমাদের সামনের রো'তে বসেছিল – ও বাপ্পি ভাইকে নিয়ে এসেছিল –আর একটু পরপর ঘেন্নায় মুখ কুঁচকে চোখ বুঁজে মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছিল। পর্দার আলোতে ওর ফকফকা ফর্সা পিঠভর্তি লাল-লাল তিল দেখা যাচ্ছিল। ওর ব্লাউজের হাতা বরাবরই ঢলঢলা – ও মনে করত ব্লাউজ ফুঁড়ে মৃণালভুজ-রকমের শেইপ যদি স্পষ্ট বোঝা যায়, তাহলে মেয়েদের বড় অশালীন লাগে – তখন সমস্ত বুকে শাড়ির আঁচল দলা পাকিয়ে ফেলে রাখলেও কাজ হয় না।

'কাজী মারুফের সাথে বাপ্পি ভাইয়ের চেহারার কী মিল, না?' এহ্‌। রূপার বর আর তার বিশাল বিশাল রোমকূপওলা নাক – ফসিল হয়ে যাওয়া প্রবালখণ্ডের মতো দেখতে – চোখে ভেসে উঠল আমার। কাজী মারুফের যেমন'ভোঁতা তলোয়ার টাইপ যৌবন' ছিল, বাপ্পি ভাইয়েরও নাকি তেমন, শারমিন বলল। 

'ওই, থাম্‌। টি এম আই।'

'টি এম আই মানে কী? ডাক্তারি টার্ম কোনো?'

'টি এম আই = টু মাচ ইনফরমেশন। এইসব জানতে চাই নাই।'

ততক্ষণে আমাদের দুই বান্ধবীর মন আশুলিয়ার মাঠ হয়ে গেছে – আগাছা, চোরকাঁটা। বাপ্পি ভাইয়ের অফিস উত্তরায়। উত্তরা পেরিয়ে গেলেই ঢাকা শহরের আর কোনো শেইপ নাই – কে না জানে? এর পরে শহর অসংবদ্ধ – টঙ্গী আর আশুলিয়া দুই পায়ের মতো দুইদিকে ছড়ানো। তুরাগ নদী অনেকটা ভরাট হয়ে গেছে – কিন্তু তবু নৌকা চলে। শারমিন আর বাপ্পি ভাই কোনো এক নৌকার মাঝিকে বখশিস দিয়ে গলুইয়ের দুইদিকে প্লাস্টিকের পর্দা গুঁজে সেক্স করেছে। তখন সন্ধ্যা হয়ে আসছিল – ওদের পাছার নিচে নদীর প্রাত্যহিক ঢলাঢলি ইত্যাদি – শারমিন ওই মুহূর্তটাকে স্মরণীয় করে রাখতে ব্যাগ থেকে মোমবাতি বের করেছিল। বাপ্পি ভাইয়ের প্যান্টের পকেটে লাইটার ছিল। সিনেমার মতো মোমবাতি জ্বালিয়ে করবে – আহা, কী শখ! 

'তুই কী পারভার্ট নাকি রে?'

'এই যে শুরু হইল তোর… ইচ্ছা হইছিল, ওকে? কেমন একটা গ্রামের ঘরের মতো ব্যাপার।'

'তারপর?'

'তারপরে তো… হি হি… ভুরু পুড়ে গেল অর্ধেক। ভাগ্যিস চামড়ায় লাগে নাই। চুলপোড়া গন্ধ সাথে সাথে – হা হা… আমি বাপ্পি ভাইকে বললাম আর করব না।'

'উনি শুনল?'

'নাহ্‌। শুনে নাই হারামজাদা। ফুঁ দিয়া মোমবাতি নিভায়া চালায়া গেছে। এত ব্যথা দিছে। ওকে? আমি বললাম, ইউ আর রেইপিং মি।'

'আল্লাহ্‌!' 

মেয়ে ঘুমিয়ে গেছে। শারমিন মুখ নামিয়ে মেয়ের গলার কাছের গন্ধ নিল। 'মাঝি ফেরত আসলো। বলল কাছেই কোথায় এক মেয়েলোকের লাশ ভাসতেছে। যেই মাঝি লাশটা স্পট করছে, সে নাকি প্রথমে ভাবছে একটা ঝাড়ু ভাসতেছে, ওকে? তারপর নৌকা নিয়া কাছে গিয়ে দেখে লাশ – নদীর পানিতে ঠাণ্ডা হয়ে শক্ত হয়ে আছে। হাঁটু নাকি থুতনির কাছে চইলা আসছে। চুলে মুখ ঢাকা। হাত মুঠি করা।গায়ে কাপড় নাই। কী ভয়ংকর! বুঝলি? পরে যখন আল্ট্রাসোনো রিপোর্টে বাচ্চার ছবি দেখছিলাম – মনে হইছিল ওই ওই ওই মেয়েলোকটা ভাসতেছে অ্যামিবাটিক ফ্লুইডে'।

'অ্যামনিওটিক ফ্লুইড'।

'হুঁ। ওইটা। এমন ভয়ের ছিল আশুলিয়ার ওই সন্ধ্যাটা। আর সাথে আমারওই জায়গায় প্রচণ্ড ব্যথা। বাপ্পি ভাই আমার মন অন্যদিকে ফিরাইতে তুরাগের পারে মাছ নিয়া দামাদামি করলো। পাঁচ কেজির একটা মাছ হাতে তুলে দেখল। মহাশোল না কী যেন মাছ। আমাকে বলল সেলফি নিব কিনা।'

'এইরকম একটা আকাট লোকের সাথে…'

'হ। আকাট লোকের সাথে রূপা সংসার করে। সেইটা ভাব্‌ আগে।'

রূপা সবসময় বিশ্বস্ত বটগাছের মতো আমার জন্য শিকড় নামিয়ে দিয়েছে। আমি কি রূপাকে এইসব বলব? এখন না হোক, পরে এক সময়? বলে কী হবে? 

'ওইটা টেকনিকালি রেইপ ছিল'।

'হুঁ। কী আর?'

'জানালাটা একটু খুলে দিবি?' 

'ওই, ঠিক আছিস তুই?'

আমার দম বন্ধ লাগছিল। ব্লাডার থেকে চাপ সরে গিয়েছিল।মনে হচ্ছিল মগজের কেন্দ্র থেকে শুরু করে চামড়ার নিচে, নাকের কোষে, হৃৎপিণ্ডের প্রকোষ্ঠে, জঙ্ঘার কোটরে বয়ে চলা সমস্ত স্নায়ুতন্ত্রীকে পাটের আঁশের মতো টেনে-টেনে ছিঁড়ে নিয়ে একত্র করে কেউ যেন একপ্রান্তে খুব সযত্নে গিঁট দিয়ে একটা আঁটি বেঁধেছে, আর তারপর সেই আঁটিটাকে মানুষের মাথার খুলির মত শেইপ দিয়েছে  – আর তারপর বিশাল একটা শাদা পলিথিন ব্যাগ নিয়ে ওই খুলিটার চারদিকে সজোরে পেঁচিয়ে ধরে স্নায়ুর ডেলাটাকে শ্বাসরোধ করে খুন করতে উদ্যত হয়েছে।  

'পানি খা'।

'পানি খাইলে পেশাব লাগে'।

'তো? করবি পেশাব। খা পানি। ওকে?'

শারমিন সাঁই-সাঁই করে পর্দা খুলে দিল। ঘরে আলো আসলো। আমি পানি খেয়ে মিনিট পাঁচেক থম মেরে বসে রইলাম। পাশের অ্যাপার্টমেন্টের বারান্দা পর্দাঘেরা। শারমিন আমার মাথার ঠিক মাঝখানে – একদম ব্রহ্মতালুতে – চুমু খেল। ছুটির দিন। কে যেন গজল শুনছে কোন্‌ বাড়িতে। 

'আইস্‌সালা। গুলাম আলি! দুনিয়া ফারেবি দেতে হ্যায়…লা লা লা…', শারমিন ভুলভাল গাইল।

'গুলাম আলি ওই গায়কটা না? যারে শহীদ আফ্রিদির পছন্দ ছিল খুব?'

'হ রে! তোর এখনো মনে আছে? আফ্রিদি ব্যাটা তো আমার বার্থডে উপলক্ষে গানও গাইছিল। দিল মেঁ এক লহর সি উঠি হ্যায় অভি। এইটা।'

'ও তো আরেক হারামজাদা'।

'হা হা। ওইদিন দেখলাম কোন্‌ ইন্টারভিউতে বলতেছে পাকিস্তানের মেয়েরা ক্রিকেট খেলতে পারে না। 'খাতুন'দের বাসায় বসে রুটি বেলার পরামর্শ দিছে আমার আফ্রিদি ভাইয়া'।

'ওরে আবার ভাইয়া ডাকোস্‌? ভুইলা গেছস্‌ সব?'

'ও কিন্তু আসলেই আমার সাথে খারাপ বরতাভ্‌ করে নাই রে। আমি রুমে ঢুকছি পরে খালি বলছিল আমি দেখতে ওর বোনের মতো। 'বহেন' বলছিল খালি। ওকে?'

'তাতেই তুই কাইন্দা-কাইটা দুনিয়া উদ্ধার…'

'ছোট ছিলাম তো'।

'হ। তুই তো সবার চেয়ে ছোট। এই যে, আমার মেয়েও তোর চেয়ে বড়'।

'তুই বাথরুম করবি না? যা।'

'যাব পরে। তুই চুপ কর্‌।'

'চল্‌ আজকে একটা পরকীয়ার ডকুমেন্টারি দেখি। 'হু কিল্ড ডক্টর বোগল আর মিসেস চ্যান্ডলার' দেখবি?'

'কেমন?'

'শুনছি জোস্‌। ট্রেইলার দেখবি?'ডক্টর বোগল আর মিসেস চ্যান্ডলার কোনো এক থার্টি ফার্স্ট নাইটে পরকীয়া করতে নদীর ধারে যায়। সেখানেই ওদের রহস্যজনক মৃত্যু হয়। পুলিশ, গোয়েন্দা, ময়নাতদন্তের লোকেরা, ভিকটিমের আত্মীয়স্বজন – সবাই মিলে মূল ঘটনা ধামাচাপা দিতে উঠে পড়ে লাগে। জনতার সন্দেহ গিয়ে পড়ে মহিলার বর, অর্থাৎ মিস্টার চ্যান্ডলারের উপর। দীর্ঘদিন পরে আবিষ্কার হয় যে নদীদূষণের সালফার-ডাই-অক্সাইড গ্যাসবর্জ্য ফুসফুসে যাওয়ায় ওরা মরেছে। শটগুলি কী সুন্দর! বিশাল বারান্দাওলা গোল টুপি, ফুল-ফুল ছাপ জামা। আটা-ময়দা মিল থেকে বর্জ্য এসে গলগল করে পড়ছে নদীতে। শহরের একটা মেইন সুয়ারেজ লাইন, যেটা নদীর নিচ দিয়ে যাচ্ছিল, তার একটা ভালভ খুলে গিয়ে জলের ঘূর্ণি করছে। নদীর গলা কেউ যেন টিপে ধরেছে – ক্লোজ শটে দেখা যাচ্ছিল নদীমুখে গ্যাঁজলার মত শাদা ফেনা উঠেছে। নদী মরার আগে মেরে মরেছে ডক্টর বোগল আর মিসেস চ্যান্ডলারকে। 

'প্রকৃতির প্রতিশোধ।' আমি বললাম।

'তোর মাথা'।

'না। তোর মাথা। পরকীয়া করতে গিয়া রেইপ হয়ে আসছস্‌। আবার কথা কস্‌।'

শারমিন এইবার আর হাসলো না। সিরিয়াস মুখ করে কী যেন ভাবল। সিনেমা চালু করল।এই প্রথম আমার সত্যি সত্যি খারাপ লাগল।

'শোন্‌, ওইদিন আমারে বাসায় নামায়া দেওয়ার সময় বাপ্পি ভাই অনেক কানছে। বলছে, শারমিন, তুমি আমারে রেইপিস্ট বললা? বলতে পারলা এমন কথা তুমি? আমার খুব মায়া লাগছে উনার কথা শুনে। বুঝলি? জীবনে কখনো কি আমরা একটা জিনিস দেখি? আমরা বরং…মনে কর্‌…একটা জিনিসের চোখে আরেকটাকে কেমন দেখায়, সেইটা খেয়াল করি। ওকে? এই যে তুই, সংসার থেকে বাইর হইলি না। রাইট? এখন আর বাইর হইতে পারবিও না। এইটাকে বাইরে থেকে কেমন দেখা যায় ভাবছিস?'

'কেন আমি সংসার থেকে বাইর হব? আমি তো হ্যাপি। এখন আমার সুন্দর একটা বাচ্চাও আছে। হ্যাঁ, এইটা সত্যি যে আমার কখনো কখনো মনে হইছে যে আমার ব্যাটাছেলেদেরকে ভাল লাগে না। কিন্তু শুধু মনে হওয়ার কারণে তো আর আমি সংসার ভাঙব না!'

'রূপা না, কী জানি বলে খালি? কনসেন্ট। সম্মতি। ওকে? তো তুই ঠিকই বলছিস। সারেন্ডার আর কনসেন্ট তো একই জিনিস।'

'এইসব জ্ঞানের আলাপ অফ কর্‌। সিনেমার মধ্যে কথা বলতে ভাল্লাগে না।'

শারমিন সিনেমা পজ দিল। তারপর উঠে বসল। 'আচ্ছা, এইবার বলব কথা?'

'না। আমার বাথরুম পাইছে। আসতেছি, একটু দাঁড়া'।

বাথরুম থেকে এসে দেখলাম মেয়ে তার শারমিন খালামনির কোলে দুলতে দুলতে কাঁদছে। শারমিন ওর কান্না থামাতে মুখস্থ কবিতা বলছে –

"বিল্লিগি আর শিঁথলে যত টোবে
গালুমগিরি করছে ভেউয়ের ধারে
আর যতসব মিন্‌সে বোরোগোবে
মোমতারাদের গেবগেবিয়ে মারে।

তোর হাতেতেই জবরখাকি গেল?
শুধায় বাপে <না…> শুধায় মায়ে চামুক হাসি হেসে,
আয় বাছাধন আয় রে আমার কোলে…"

'কোলে না, কোলে না। কেলো। আয় বাছাধন আয় রে আমার কেলো', আমি ঠিক করে দিলাম।

'কেলো আবার কী জিনিস?'

'হইব কিছু একটা।'

সোনাফুপি ঠিক এভাবে আমাকে ছড়া শোনাত, আর ছড়া বলতে বলতে ফ্লোরের উপর ছ্যাক্‌ করে থুতু ফেলত।

'সিনেমা অন কর। ওরে আমার কোলে দে। আমার কোলে ঘুমায়া যাবে ঠিকঠিক'।

সিনেমায় সাবটাইটেল আসতে থাকল একের পর একঃ "sheep bleating", "horse neighing", "goose honking"। আমি মেয়ে-কোলে শারমিনের গায়ে হেলান দিয়ে মন দিয়ে সিনেমা দেখতে থাকলাম। অন্য সময় হলে ও বলতো, "সর্‌ শালি, ওকে? লেসবিয়ান কোনখানকার!" কিন্তু এখন ও খালি ওর ঘর্মাক্ত হাত দিয়ে আমার চুলে হাত বুলিয়ে দিল। যেন আমি একটা পশু – সিনেমার একটা ঘোড়া যেন, আর আমার বাদামী রঙের অনেক বড় বড় লোম।

Related Topics

গল্প

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • আগামী বছরের শুরু থেকেই নতুন পে স্কেলে বেতন পাবেন সরকারি কর্মচারীরা
    আগামী বছরের শুরু থেকেই নতুন পে স্কেলে বেতন পাবেন সরকারি কর্মচারীরা
  • মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। স্কেচ: টিবিএস
    কুলাঙ্গার ১০-১২ জনের মধ্যে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ সীমিত রাখার পরামর্শ ফরাসউদ্দীনের
  • ছবি: রয়টার্স
    ‘ব্রেইন ড্রেইন’ এর কবলে যুক্তরাষ্ট্র; ট্রাম্পের নীতির জেরে আজ চাকরি ছাড়ছেন প্রায় ১ লাখ সরকারি কর্মী
  • নির্দেশনা (বায়ে) ও কমিশনার আব্দুল কুদ্দুস চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত
    ‘আ.লীগের লোকজন যেন প্রকাশ্যে না থাকে’ নির্দেশনা নিয়ে বিতর্ক, পুলিশ কমিশনার বললেন ‘শব্দগত ভুল’
  • লেখক স্টিফেন কিং।  ছবি: ওয়্যার ইমেজ
    'আমার ৮৭ বই নিষিদ্ধ!' যুক্তরাষ্ট্রের 'সবচেয়ে বেশি' নিষিদ্ধ বইয়ের লেখক হিসেবে যা বলছেন স্টিফেন কিং

Related News

  • আইজ্যাক বাবেলের গল্প | বুড়ো শ্লয়মি
  • জ্যাক রিচি-র রোমাঞ্চ গল্প | ২২ তলা উপরে—২২ তলা নিচে
  • মনিরু রাভানিপুরের গল্প | তেহরান 
  • জ্যাক রিচি-র রহস্যগল্প: এমিলি যখন ছিল না
  • মার্কেসের গল্প: স্লিপিং বিউটি অ্যান্ড দি এয়ারপ্লেন

Most Read

1
আগামী বছরের শুরু থেকেই নতুন পে স্কেলে বেতন পাবেন সরকারি কর্মচারীরা
অর্থনীতি

আগামী বছরের শুরু থেকেই নতুন পে স্কেলে বেতন পাবেন সরকারি কর্মচারীরা

2
মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। স্কেচ: টিবিএস
বাংলাদেশ

কুলাঙ্গার ১০-১২ জনের মধ্যে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ সীমিত রাখার পরামর্শ ফরাসউদ্দীনের

3
ছবি: রয়টার্স
আন্তর্জাতিক

‘ব্রেইন ড্রেইন’ এর কবলে যুক্তরাষ্ট্র; ট্রাম্পের নীতির জেরে আজ চাকরি ছাড়ছেন প্রায় ১ লাখ সরকারি কর্মী

4
নির্দেশনা (বায়ে) ও কমিশনার আব্দুল কুদ্দুস চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ

‘আ.লীগের লোকজন যেন প্রকাশ্যে না থাকে’ নির্দেশনা নিয়ে বিতর্ক, পুলিশ কমিশনার বললেন ‘শব্দগত ভুল’

5
লেখক স্টিফেন কিং।  ছবি: ওয়্যার ইমেজ
আন্তর্জাতিক

'আমার ৮৭ বই নিষিদ্ধ!' যুক্তরাষ্ট্রের 'সবচেয়ে বেশি' নিষিদ্ধ বইয়ের লেখক হিসেবে যা বলছেন স্টিফেন কিং

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net