Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Friday
October 03, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
FRIDAY, OCTOBER 03, 2025
আবৃত্ত 

ইজেল

নিবেদিতা আইচ 
21 November, 2020, 08:40 am
Last modified: 21 November, 2020, 04:20 pm

Related News

  • আইজ্যাক বাবেলের গল্প | বুড়ো শ্লয়মি
  • জ্যাক রিচি-র রোমাঞ্চ গল্প | ২২ তলা উপরে—২২ তলা নিচে
  • মনিরু রাভানিপুরের গল্প | তেহরান 
  • জ্যাক রিচি-র রহস্যগল্প: এমিলি যখন ছিল না
  • মার্কেসের গল্প: স্লিপিং বিউটি অ্যান্ড দি এয়ারপ্লেন

আবৃত্ত 

রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবলাম অনেকক্ষণ। ফলে আবোলতাবোল স্বপ্নও দেখলাম। ময়ূর ফিরে না এলেও এবার স্পষ্ট করে দেখতে পেলাম নিজেকে। কোনো একটা গভীর বনের ভেতর পথ হারিয়ে ফেলেছি। তারপর হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলো। বৃষ্টির সাথে সাথে গাছ থেকে কদম ফুল ঝরতে শুরু করেছে। দেখতে দেখতে বৃষ্টির ফোঁটাগুলোও কদমের পাপড়ি হয়ে উঠলো। এরপর আর কিছু মনে নেই। ঘুমটা হলো ছেঁড়া ছেঁড়া। সকালে বিছানা ছাড়তে ইচ্ছে করলো না, এত অবসন্ন লাগলো আমার।
নিবেদিতা আইচ 
21 November, 2020, 08:40 am
Last modified: 21 November, 2020, 04:20 pm

পাশের বাড়ির নতুন বউটিকে দেখে আমার গতরাতের স্বপ্নটা মনে পড়ে গেল। মেয়েটির শাশুড়ি আমাদের দীর্ঘদিনের প্রতিবেশী। আমি বিয়ের অনুষ্ঠানে যেতে পারিনি। তাই ছেলের বউ দেখাতে যখন ডাকতে এলো আমাকে যেতেই হলো ।

লক্ষ্মীমন্ত সুশ্রী চেহারা বউটির। আমি অবশ্য গায়ে জড়ানো আনারপাড় কাতান শাড়িটিই দেখছিলাম মন দিয়ে। শাড়ির পুরো জমিন জুড়ে পেখম তোলা ময়ূর। দেখতে দেখতে আমার হুট করেই গতকাল রাতের স্বপ্নটা মনে পড়ে গেল।

অসংখ্যবার দেখা এই স্বপ্নের মধ্যে সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হলো ময়ূরটা যখন পেখম মেলে দাঁড়ায় তখন তার মুখখানার জায়গায় প্রতিবারই নিজেকে দেখি। ভেবে ভেবে কোনো রকম ব্যাখ্যা আমি খুঁজে পাইনি৷ তাই স্বপ্নের ব্যাপারটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হয়। মেয়েটিকে আশীর্বাদ করে ঘরে ফিরে আসি।

আমার হাতে অনেক কাজ। রান্নার লোককে তদারকি করা, ঘরদোর গোছানো। শেষ দুপুরে সবাই ভাতঘুমে ডুব দিলে আমি একটু নিজের জন্য সময় পাই। তখন কাঁথা নিয়ে বসি নয়তো কুরুশ-কাঁটা৷ এই এলাকায় একটা হস্তশিল্পের দোকান আছে। সেখানে প্রতি মাসে আমার তৈরি কিছু নকশি করা কাঁথা আর শাড়ি যায়। দুপুরবেলাটা তাই আমার কাজেরই সময়৷

সন্ধ্যায় তুলসীতলায় প্রদীপ জ্বালিয়ে ঘরে ঘরে ধুপধুনো দিই। বৃহস্পতিবারে লক্ষ্মীর ঘট বসাই, পাঁচালি পড়ি। এসব টুকটাক আহ্নিক ছাড়া আমার তেমন কিছু ধর্মকর্ম নেই। তীর্থস্থানে ভ্রমণ করার সাধ হয়নি কখনো। অনেকেই মনে করেছিল বৈধব্যের পর আমি ধর্মের প্রতি একনিষ্ঠ হবো। কিন্তু আমার সেদিকে মন ঝোঁকেনি কখনোই। প্রায় দশ বছর তো হয়ে গেল। সংসারের কাজ বরং আমার কাছে বেশি আগ্রহের হয়ে উঠছে দিনকে দিন।

তীর্থ ভ্রমণের সাধ না হলেও আমার ঘুরে বেড়াবার খুব শখ হয় মাঝেমাঝে। একটু ব্যবস্থা করে দিলে আমি বেশ একলাই ঘুরে বেড়াতে পারি। কিন্তু আমার ছেলে, দূরের শহরে থেকে পড়াশোনা করছে, অন্য কারো সঙ্গে সে আমাকে ঘরের বাইরে ছাড়তে রাজি নয়। বলে - আমি ফিরে এলে একসাথে যাবো।

ছেলের কথাটা আমি উপেক্ষা করতে পারি না।

সংসারের কাজ শেষে বাকি সময় আমি বই পড়ে কাটাই। বাড়িতে বইপত্র যা আছে সব মোটামুটি আমার পড়া হয়ে গেছে। তাই আজকাল আনন্দকে দিয়ে লাইব্রেরি থেকে বই আনিয়ে নিই। আনন্দ আমার ভাইয়ের ছেলে, আমার আদেশ পালনে অষ্টপ্রহর প্রস্তুত। সেই কবে ওর বয়স যখন পাঁচ কি ছয়, তখন ওর মা মারা গেলে আমার কাছে এসে থাকতে শুরু করে। আর ফিরে যায়নি। পড়াশুনা উচ্চ মাধ্যমিক অব্দি করেছে। অনার্সে ভর্তি হবার পর থেকে আর পড়াশোনায় মন বসেনি ওর। কত বোঝালাম। প্রায়ই বলি - আর পড়বি না যখন বাপের কাছে ফিরে গিয়ে ব্যবসার কাজে সাহায্য করলেই পারিস। সে কানে তোলে না কথাটা। ভাইয়ের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী মারা যাবার পর ওর ফেরার তো বাঁধা ছিল না। ওই ঘরে দুটি মেয়ে। ওর নির্লিপ্ততা কাটাতে আমি ইচ্ছে করেই বলি- এই যে নিজের দাবি ছেড়ে দিচ্ছিস পরে ভাগে কিন্তু তুই কিছুই পাবি না।

এমন কথাতেও তার হেলদোল হয় না। সে বলে- আমার ভাগে তুমি থাকলেই চলবে।

অথচ আমার অন্য সব কথা সে শিরোধার্য বলে মেনে নেয়। মাঝেমাঝে মনে হয় নিজের প্রতি ওর যে উদাসীনতা তার জন্য বোধ হয় আমিই দায়ী। সারাক্ষণ ওর মধ্যে একটা কৃতজ্ঞতার ভাব। যেন তাকে লালন করে বড় করেছি বলে নিজেকে সে আমার হাতে তুলে দিয়েছে চিরকালের জন্য। তার জীবনে আমি দেবীপ্রতিম কেউ আর আমার বাহন হয়ে ঘুরে ফিরে বেড়ানোই যেন তার জীবনের মূল অভীষ্ট।

সেই আনন্দই সেদিন স্বপ্নের ব্যাখ্যা সংক্রান্ত একটা বই এনে দিয়েছে আমাকে। সেটা পড়ে এবং সেই নিয়ে ওর সাথে আলোচনার পর থেকে আমি স্বপ্নটা নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছি।

যেহেতু আনন্দকে ময়ূরের কথা আগেই বলেছি তাই বইটি সে নিজেও পড়ে নিয়েছে ৷ যখন আমার পড়া শেষ হলো তখন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে প্রশ্ন করতে শুরু করলো আমাকে।

আচ্ছা, মাসের কোনো নির্দিষ্ট সময়ে কি স্বপ্নটা দেখো? কতদিন পর পর দেখো?

অত মনে রাখতে পারি না রে বাবা দিন তারিখ! 

ভাবো একটু। যেদিন দেখো তারপরের কয়েকটা দিন তাই ভাবতে থাকো তো?

সে তো ভাবিই! 

রাতের বেলা ছাদে হাঁটতে গিয়েও? তখন কি শুক্লপক্ষ চলে নাকি কৃষ্ণপক্ষ? মানে জোছনা থাকে না অন্ধকার?    

আনন্দের প্রশ্ন শুনে আমি ইতস্তত করতে থাকি। কয়েক সেকেন্ড ভেবে তারপর বলি - মনে হয় কৃষ্ণপক্ষ।

তাই তো হবার কথা!

আমি দেখতে পাই ওর মুখের রঙটা বদলে যাচ্ছে, চোখের তারা ঝকঝক করছে। গলার স্বর নেমে যাচ্ছে উদারায়। কী এমন ভাবনায় সে ডুবে যেতে পারে আমি তা বুঝে উঠতে পারলাম না।

আমি বললাম - আমি হাতের কাজগুলো সেরে নিই, তুই তোর কাজে যা এবার।

সে আপনমনে বিড়বিড় করতে করতে চলে গেল। বোধ হয় টিউশনিতে গেল। তারপর যাবে কোচিং ক্লাসে। পাড়ার বন্ধুরা মিলে একটা কোচিং সেন্টার খুলেছে। সেখানে পড়ায় আনন্দ। এই এক টিউশনির নেশায় নিজের পড়াশোনা আর হলো না ছেলেটার।

 

সেদিন দুপুরে খেতে বসে আলগোছে বললো  সে একবার বাড়ি যেতে চায়। আমি খুব অবাক হলাম কথাটা শুনে। এত বছরে কখনো নিজ থেকে বলেনি। আজ হঠাৎ কী হলো ওর!

তবু বললাম -  যা, ঘুরে আয়। ভালো লাগলে থেকে যাবি।
    
তিনি ফোন করেছিলেন। কয়েকদিন তোমার একটু কষ্ট হবে। বাজারটা করে দিয়ে যাব।
    
তিনি মানে আনন্দের বাবা, আমার ভাই। এখনো দেখছি বাবা বলে ডাকতে ছেলেটার এত অস্বস্তি!

আমি বললাম - আমার জন্য ভাবিস না। একা  থাকার অভ্যাস করা দরকার এবার।

মণি, তোমার কি মনে হয় আমি ফিরবো না?  তাহলে বরং বাদ দিই যাওয়া।

অবশ্যই যাবি। নিজের বাড়ি ফিরবি, তা নিয়ে এত দোটানা কেন রে? কিন্তু আগে বলিসনি একবারও। আচ্ছা, শরীর খারাপ হয়নি তো দাদার? আমি একবার খোঁজ নিই?

জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে রইলাম ওর দিকে। সে মাথা নেড়ে জানালো সেসব কিছু নয়।

তখনকার মতো কথা সেখানেই থেমে গেল। কিন্তু মনে মনে দাদার প্রতি অভিমান হলো। তিনি একবার নিজের মুখে আমাকে বললে আমি কি ওকে বাঁধা দিতাম? ছেলে যে ঘরে ফিরবেই তা সেই কবে থেকে মনে মনে জানি। এতকাল পর আমাকে যদি এই ভাবে তবে আর কীই বা বলার থাকে। রাগ করে আমিও আর খোঁজ নিলাম না দাদার। বরং রাতের বেলা খুব আগ্রহ নিয়ে ওর জিনিসপত্র সব গুছিয়ে দিলাম আমি। চোখ ভিজে আসছিল বারবার। মনে হলো ছেলেটা এবার সত্যিই বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। 

আনন্দ চলে যাবার পর প্রথম কয়েকটা দিন আমার খুব অবসন্ন লাগলো। হুট করে ঘরটা কেমন ফাঁকা হয়ে গেল। মানুষ বলতে শুধু আমি আর রান্নার মহিলাটি। সারাদিন নানারকম কাজ করে সময় কাটিয়ে দেয়া গেলেও বিকেলের পর বুকের উপর একটা পাথর জেঁকে বসে যেন। বারান্দায় পা ছড়িয়ে বসে থাকি। দরজা জানালাগুলো হাট করে খুলে দিলেও যেন ভেতরের গুমোট ভাবটা কাটতে চায় না। বোধ হয় এরকম একটা সময় আসেই সবার জীবনে। সন্তানেরা নিজস্ব কক্ষপথ বেছে নিয়ে নতুন করে ঘুরতে থাকে সেই পথে৷

 

কখনো আবির কিংবা বাদামের খোসার রঙ গায়ে মেখে সন্ধ্যা নেমে আসে। আর আমার এইসব উপলব্ধি হয়। ভাবছি একবার ফোন করে কথা বলি ওর সঙ্গে। পর মুহূর্তে ইচ্ছেটা বাতিল করে দিই। বাড়ি পৌঁছে তো জানিয়েছে আনন্দ। কথা তো হলোই তখন।

কিন্তু সে রাতেই আবার ফোন এলো । কেমন আছি, ওষুধ খেয়েছি কিনা এসবের ধার না ধরে সরাসরি প্রশ্ন করল ছেলেটা ।

বলছি যে, তুমি কি জাতিস্মরের গল্প শুনেছো, মণি?

কথাটার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারিনি আমি। তাই থতমত খেয়ে চুপ করেই রইলাম। কিন্তু ওপাশে ওর অস্থিরতাটুকু আঁচ করতে পারছিলাম।

পূর্বজন্মের স্মৃতির কথা বলছিস? সেসব কেউ মনে রাখতে পারে?

তুমি শুনেছো এমন কারো কথা?

এসব এখন আর হয় নাকি! বিজ্ঞানের ভাষায় এসবের তো ভিত্তি নেই৷ তবে ছোটবেলায় বাবার মুখে শুনতাম। তাদের সময়ে গ্রামে কোন এক বাচ্চা ছেলে ছিল যার পূর্বজন্মের স্মৃতি মনে ছিল। পরে অবশ্য বের হলো সবই নাকি বুজরুকি।

তুমি নিজের চোখে তো দেখোনি তাকে?

তা দেখিনি৷ কিন্তু তুই জাতিস্মর নিয়ে পড়লি কেন রে?

মণি, তুমি স্বপ্নটা কি আবার দেখেছো?

না... খুব ঘুম হচ্ছে কদিন ধরে। ওষুধটা খাচ্ছি তো, স্বপ্নটপ্ন দেখছি না।

শরীর খারাপ নয় তো?

না, ভালো আছি।

 

সেও ভালো আছে বলে কথা শেষ করলো। তারপর কদিন আবার ডুব দিল। ভাবলাম ভালোই হলো, মাথা থেকে পোকা নেমে গেছে। আমিও একপ্রকার ভুলে গেলাম অদ্ভুত কথাগুলো। কিন্তু এই দুদিন আগে ওর অস্থির গলাটা শুনতে পেয়ে এবার খুব দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়লাম। আনন্দের ধারণা হয়েছে ময়ূরের স্বপ্নের সাথে পূর্বজন্মের কোনো ব্যাপার আছে।

এবার আমি ওকে খুব বকলাম। বললাম এসব আজগুবি চিন্তা বাদ দিতে। তবু গোয়াড়ের মতো জেরা করতে লাগলো ছেলেটা।

এই স্বপ্ন তুমি প্রথম কবে দেখেছো?

খুব ছোটবেলায়। বইতে ময়ূরের ছবি দেখে চিৎকার করে উঠেছিলাম।

তারপর কী হলো?

তারপর অনেকদিন আর ওরকম হয়নি।

তোমাদের গ্রামে একটা বাউল সাধু ছিল, মনে পড়ে? বাঁশি বাজাতো সে?

কেন বলতো? হ্যাঁ, বাঁশি বাজাতো। বদ্ধ পাগল ছিল লোকটা।

মনে আছে কিনা তাই বলো?

মনে থাকবে না আবার! একবার বাড়িতে ঢুকে কী কাণ্ড করেছিল! আমাকে নাকি অনেক আগে থেকে চেনে, আগের জন্মে তার সখী ছিলাম। এরকম কথা সে আগেও বলেছিল।মা বলতো মাথার ঠিক নেই, দুমুঠো চাল কি চিড়ামুড়ি দিয়ে তাড়াতাড়ি বিদায় করতে।

 

কিন্তু সেদিন চালের কৌটা ফেরত নেবার সময় আমার হাত ধরেছিল লোকটা। দেখতে পেয়ে বাবা রেগেমেগে সেই যে ঘাড় ধরে বের করে দিল আর কখনো ঢুকতে দেয়নি। তখন খুব ভয় পেলেও পরে সবার কী হাসাহাসি এই ঘটনা নিয়ে!

লোকটার কোনো খোঁজ জেনেছো পরে? কোথায় থাকতো সে?

না, অত মনে নেই।

সেই লোকটি কি জাতিস্মর? কী মনে হয় তোমার?

ঐ পাগলটা? কী অদ্ভুত সব কথা তোর!

আহা বলোই না!

কী বলবো, আমার তো মনে হয় তোর মাথাটাও একেবারে গেছে!

জাতিস্মর হতে পারে না?

হলেই বা কী! প্রমাণ করবি কী করে? এতদিনে মরেটরেই গেছে নিশ্চয়ই।

 

এবার ওর গলাটা ক্লান্ত শোনালো। আনন্দ থেমে থেমে বললো- না, তিনি কোথাও চলে গেছেন, তাকে খুঁজে পাচ্ছি না।

আমার বিস্ময় তখন তুঙ্গে। বললাম- তুই কী করে জানিস?

আমি জানি, আমি দেখা করেছিলাম।

এই কথোপকথন ভীষণ অস্বস্তিতে ফেলে দিল আমাকে। আনন্দকে নিয়ে আমার ভয় হতে লাগলো। তাছাড়া মনে হলো অদ্ভুত একটা কিছু ঘটে যাচ্ছে আমার সাথেও। রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবলাম অনেকক্ষণ। ফলে আবোলতাবোল স্বপ্নও দেখলাম। ময়ূর ফিরে না এলেও এবার স্পষ্ট করে দেখতে পেলাম নিজেকে। কোনো একটা গভীর বনের ভেতর পথ হারিয়ে ফেলেছি। তারপর হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলো। বৃষ্টির সাথে সাথে গাছ থেকে কদম ফুল ঝরতে শুরু করেছে। দেখতে দেখতে বৃষ্টির ফোঁটাগুলোও কদমের পাপড়ি হয়ে উঠলো। এরপর আর কিছু মনে নেই। ঘুমটা হলো ছেঁড়া ছেঁড়া। সকালে বিছানা ছাড়তে ইচ্ছে করলো না, এত অবসন্ন লাগলো আমার।

তবু শরীরটাকে টেনে নিয়ে ঘরের বাইরে এসে দাঁড় করালাম। কারণ আনন্দের গলা শুনতে পেয়েছি৷ এই সাতসকালেই সে এসে পৌঁছাবে তা ভাবতে পারিনি। অথচ কাল রাতেই কথা হলো! একবারও বলেনি আজ আসবে। 

 

সারাটি দিন কোনো একটা অজানা আশঙ্কায় আমার সমস্ত অন্তঃকরণ কাঁপতে থাকলো। তবু মুখ ফুটে কিছু বলতে পারলাম না। যেন ও আসবে আমি তা জানতাম। স্বাভাবিকভাবে কথা বললাম। শেষ পর্যন্ত প্রসঙ্গটা এলো যখন রাতে খাওয়া দাওয়ার পর সে বললো - চলো মণি, ছাদে যাই৷

খুব জোছনা হয়েছে চারদিকে। আর ঝিরঝিরে হাওয়া। সব মিলিয়ে একটু ভালো লাগতে শুরু করেছে আমার। কিন্তু আনন্দ এমন অস্থিরভাবে পায়চারি করতে শুরু করলো যে আমি বাধ্য হয়ে বললাম -একটু স্থির হয়ে বোস তুই। কী হয়েছে এবার বল আমাকে।

 

তুমি কখনো কদম বন দেখেছো মণি?

ও স্থির চোখে তাকিয়ে আছে। যেন আমি অস্বীকার করলেও সমস্তটা ওর জানা আছে। বুক ভরে লম্বা একটা শ্বাস নিলাম আমি। তারপর ধীরে ধীরে বললাম - কদমগাছ তো দেখেছিই! এ তো নতুন কিছু নয়।

কবে প্রথম দেখেছো?

এসব অদ্ভুত কথা কেন জানতে চাইছিস? কেন বল তো!

সেই বাউল লোকটার মুখে কদমবনের কথা শুনেছি। বৃষ্টিতে কদমবনের পাপড়িগুলো নাকি ঝরে পড়ছিল।

তারপর?

তিনি সেখানেই ছিলেন, আড়ালে। ছল করে ধরা দেননি তোমাকে। চিরকালই তো এমন করেছেন, তাই না? কিন্তু এবারে তুমিই ধরা দিলে না।

এটুকু শোনার পর আমার শরীরটা খুব খারাপ লাগতে শুরু করলো৷ মাথার ভেতর যেন একটা কুয়াশা ছিল বহুজন্মের পুরানো। সেটা এবার কেটে যাচ্ছে। এই আলো আঁধারি, উচ্চারিত শব্দগুলো সমস্তটা যেন পুনরাবৃত্তি। আমার সামনে দাঁড়ানো মানুষটি এর আগেও আমার সাথে ছিল, এই একই কথাগুলো বহুবার সে আমাকে বলেছে। এবং আমি জানি এরপর সে কী বলতে পারে।

 

আনন্দ বলছে -তুমি ভাবছো এত সব আমি কেন জানি? কী করে জানি? তোমাদের গাঁথা শুনে শুনে আমার জীবনগুলো কেটেছে। আমাকে তো জানতেই হবে মণি! সেই কবে থেকে এই আমার একমাত্র কাজ!

আনন্দ আপনমনে বলেই চলেছে। 

কিন্তু আমি ভাবছি সেদিনের কথা যেদিন আনন্দকে আমি প্রথম দেখি। ওর তখন পাঁচ বছর বয়স, ওর মায়ের মৃত্যুর পর দাদা ওকে নিয়ে আমার কাছে আসে। নানা কারণে এর আগে ওর সাথে আমার দেখা হয়নি।

সেদিন আনন্দ আমাকে দেখে ছুটে এসে প্রণাম করেছিল, গলা জড়িয়ে ধরেছিল। সেদিনের স্মৃতি আমি ভুলতে পারি না। সদ্য মা হারানো ছেলেটি ঐ একটা আলিঙ্গনেই আমার মন কেড়ে নিয়েছিল। প্রথমদিন থেকে ওকে আমি ভালোবেসে ফেলেছিলাম। কখনো আমার স্নেহ থেকে ওকে দূরে সরিয়ে রাখার কথা ভাবিনি। আর সেও আমাকে যেন এক মুহূর্তের জন্য চোখের আড়াল হতে দিতে চাইতো না। এতকাল পর সবকিছুর ব্যাখ্যা আমি অল্প অল্প করে বুঝতে পারছি।

এতসব ঘটনার পর রাতে ঘরে এসে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি আমার মনে নেই। শুধু ভোরবেলা ঘুম ভাঙতেই ঘোরটা কাটতে চাইলো না যেন। আবছায়া আলোয় দেখতে পেলাম নতুন কিছু। পাহাড়ের সানুদেশে ধ্যানে বসেছে এক তরুণ সাধক। তার গায়ে শ্বেতশুভ্র পোশাক, চোখেমুখে ভক্তিভাব, অনিন্দ্য জ্যোতি ছড়িয়ে পড়ছে সবদিকে। ধ্যান থেকে জেগে সে এসে আমার পায়ে হাত ছোঁয়ালো। তারপর বেরিয়ে গেল দ্রুত পায়ে। আমি তাকে পিছু ডাকলাম, জিজ্ঞেস করলাম- কোথায় যাস? সে যেতে যেতে উত্তর দিল - তাকে খুঁজতে, কদম বনে।

 

ঘোর কাটতেই আমি ছুটে গেলাম উত্তর দিকের ঘরটায়, যেখানে আনন্দ ঘুমায়। আমি যা ভেবেছিলাম তাই হলো। ওর ঘরটা ফাঁকা পড়ে আছে, দরজাটা খোলা।

Related Topics

টপ নিউজ

গল্প

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে কৃষিকাজের জন্য সোলার প্যানেল ব্যবহার করছেন একজন কৃষক। ছবি: রয়টার্স
    যেভাবে সৌরশক্তিচালিত কৃষিকাজ পানি বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে পাকিস্তানকে
  • বেগুন, কলা, উটপাখি, সেলাই মেশিনসহ ৫০টির তালিকা থেকে প্রতীক বেছে নিতে এনসিপিকে ইসির চিঠি; নেই শাপলা
    বেগুন, কলা, উটপাখি, সেলাই মেশিনসহ ৫০টির তালিকা থেকে প্রতীক বেছে নিতে এনসিপিকে ইসির চিঠি; নেই শাপলা
  • প্রতীকী ছবি: সংগৃহীত
    যুক্তরাষ্ট্রে ‘শাটডাউন': বাংলাদেশ, ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যের ভিসা-পাসপোর্ট সেবার কী হবে?
  • ছবি: কনজিউমার অ্যাফেয়ার্স
    তরুণদের মধ্যে বাড়ছে কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি, যা বলছে গবেষণা
  • ইসলামী ব্যাংকের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ হ্যাকড 
    ইসলামী ব্যাংকের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ হ্যাকড 
  • চা বাগানে কর্মরত শ্রমিকেরা। ছবি: সংগৃহীত
    যে কারণে সমতলে চা উৎপাদন এতো কমে গেছে

Related News

  • আইজ্যাক বাবেলের গল্প | বুড়ো শ্লয়মি
  • জ্যাক রিচি-র রোমাঞ্চ গল্প | ২২ তলা উপরে—২২ তলা নিচে
  • মনিরু রাভানিপুরের গল্প | তেহরান 
  • জ্যাক রিচি-র রহস্যগল্প: এমিলি যখন ছিল না
  • মার্কেসের গল্প: স্লিপিং বিউটি অ্যান্ড দি এয়ারপ্লেন

Most Read

1
পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে কৃষিকাজের জন্য সোলার প্যানেল ব্যবহার করছেন একজন কৃষক। ছবি: রয়টার্স
আন্তর্জাতিক

যেভাবে সৌরশক্তিচালিত কৃষিকাজ পানি বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে পাকিস্তানকে

2
বেগুন, কলা, উটপাখি, সেলাই মেশিনসহ ৫০টির তালিকা থেকে প্রতীক বেছে নিতে এনসিপিকে ইসির চিঠি; নেই শাপলা
বাংলাদেশ

বেগুন, কলা, উটপাখি, সেলাই মেশিনসহ ৫০টির তালিকা থেকে প্রতীক বেছে নিতে এনসিপিকে ইসির চিঠি; নেই শাপলা

3
প্রতীকী ছবি: সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্রে ‘শাটডাউন': বাংলাদেশ, ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যের ভিসা-পাসপোর্ট সেবার কী হবে?

4
ছবি: কনজিউমার অ্যাফেয়ার্স
অফবিট

তরুণদের মধ্যে বাড়ছে কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি, যা বলছে গবেষণা

5
ইসলামী ব্যাংকের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ হ্যাকড 
বাংলাদেশ

ইসলামী ব্যাংকের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ হ্যাকড 

6
চা বাগানে কর্মরত শ্রমিকেরা। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ

যে কারণে সমতলে চা উৎপাদন এতো কমে গেছে

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net