নারীবিদ্বেষী মন্তব্যের জেরে অলিম্পিক প্রধানের পদত্যাগ

অবশেষে পদত্যাগ করেছেন টোকিও অলিম্পিক আয়োজক কমিটির প্রধান ইয়োশিরো মোরি। নারীদের সম্পর্কে 'অসংবেদনশীল' মন্তব্য করে সমালোচিত হওয়ার পর এ সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
অলিম্পিকের অন্যতম বৃহৎ স্পন্সর টয়োটা'সহ প্রধান স্পনসররা তার মন্তব্যের সমালোচনা শুরু করার পর গত এক সপ্তাহ ধরে চাপ বাড়তে থাকায় পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন মোরি।
৮৩ বছর বয়স্ক মোরি বলেছিলেন, নারীরা বেশি কথা বলে এবং বোর্ড পরিচালনার সভায় বেশি নারী থাকলে সভা শেষ হতে 'অনেক সময়' লেগে যাবে।
এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদের ঝড় ওঠায় মোরি সে সময় ক্ষমা প্রার্থনা করলেও জানান, পদত্যাগের বিষয়ে তিনি ভাবছেন না।
'অসংবেদনশীল বক্তব্যের' জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে শুক্রবার একটি বিশেষ কমিটির সভায় তিনি বলেন, 'গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে জুলাই থেকে অলিম্পিকের আয়োজন শুরু করা। আমি চাই না আমার উপস্থিতি এই আয়োজনের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াক।'
এরপর তিনি তার পদত্যাগের কথা ঘোষণা করেন।
অলিম্পিক আয়োজক কমিটির প্রধান পদে জাপানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মোরির জায়গায় কে স্থলাভিষিক্ত হবেন তা এখনো পরিষ্কার নয়। মোরি প্রাথমিকভাবে তার পদের দায়িত্ব গ্রহণ করার জন্য দেশটির বিখ্যাত ক্রীড়া প্রশাসক সাবুরো কাওয়াবুচিকে বেছে নিয়েছিলেন; কিন্তু তাতেও প্রতিবাদ ওঠে।
এর আগে, গত মঙ্গলবার, একদল নারী আইন প্রণেতা মোরির মন্তব্যের প্রতিবাদে সাদা পোশাক পরেছিলেন; তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতে কিছু পুরুষও করেছিলেন একই কাজ।
এদিকে, টোকিওর গভর্নর ইউরিকো কোইক বলেছেন, প্রতিবাদ জারি থাকায় তিনি উচ্চ পর্যায়ের অলিম্পিক কর্মকর্তাদের একটি সভায় যোগদান করবেন না।
স্থানীয় গণমাধ্যমের মতে, এই বছরের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া অলিম্পিক গেমস থেকে ইতোমধ্যেই ৪০০ জন তাদের স্বেচ্ছাসেবক হওয়ার আবেদন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
কমিটিতে বর্তমানে সদস্যসংখ্যা ২৪;এদের মধ্যে পাঁচজন নারী। নারী বোর্ড পরিচালকের সংখ্যা ৪০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করা এই কমিটি ২০১৯ সাল থেকে জাপানি অলিম্পিয়ান নির্বাচনের দায়িত্বে রয়েছে।
পদত্যাগ করা বোর্ড প্রধান মোরি এক সভায় বলেছিলেন, 'যদি আমরা নারী সদস্যসংখ্যা বৃদ্ধি করি, তাহলে আমাদের নিশ্চিত করতে হবে, তারা যেন কথা বলার জন্য বেশি সময় না নেন। কেননা, বিরক্তিকর ব্যাপার হলো, নারীরা সহজে কথা শেষ করতে পারে না।'
তিনি আরও বলেছিলেন, আয়োজক কমিটিতে এখন সাতজন নারী আছেন, তবে সবাই তাদের অবস্থান সম্পর্কে সচেতন।
মোরি ২০০০ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে বেশ কিছু গাফিলতি ও অকূটনৈতিক বক্তব্যের কারণে দেশটিতে পরিচিত।
তিনি জাপানের সংবাদপত্র মৈনিচি'কে জানান, তার মন্তব্যের পর নিজ পরিবারের নারী সদস্যরাও তাকে তিরস্কার করেছেন।
তিনি বলেন, রাতে তার স্ত্রীও তাকে কড়া ভাষায় তিরস্কার করেছে। "সে বলেছে, 'তুমি আবার খারাপ কিছু বলেছ, তাই না? আমাকে আবার জ্বালা পোহাতে হবে; কারণ তুমি নারীবিদ্বেষী কথা বলেছ।'"
পত্রিকাটি তাকে উদ্ধৃত করে বলেছে, 'সকালে আমার মেয়ে আর নাতনিও আমাকে তিরস্কার করেছে।'
- সূত্র: সিএনএন