তামিমের টস করা থেকে হাসপাতাল যাওয়া, পুরো ঘটনার বর্ণনা দিলেন ম্যাচ রেফারি

ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ম্যাচ। ঠিক সময়েই বিকেএসপি চলে যান তামিম ইকবাল, করেন টসও। কিন্তু এরপরই তার জীবনে বয়ে যায় ঝড়। বুকে তীব্র ব্যথা নিয়ে বিকেএসপির পাশে কেপিজে স্পেশালাইজড হসপিটাল অ্যান্ড নার্সিং কলেজে যান অভিজ্ঞ এই ওপেনার।
কিছুটা সুস্থ বোধ করায় বিকেএসপিতে ফেরেন তিনি। কিন্তু এরপর তামিমের অবস্থা গুরুতর হয়ে পড়লে তাকে আবারও হাসপাতালে নেওয়া হয়। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার জানা যায়, দুবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে তার। দ্রুততার ভিত্তিতে এনজিওগ্রাম করানো হয়, রিং পরানো হয় তামিমের হার্টে।
তামিমের মাঠে টস করা থেকে হাসপাতালে যাওয়া, পুরো ব্যাপারটি কাছ থেকে দেখেছেন মোহামেডান-শাইনপুকুর ম্যাচে ম্যাচ রেফারি দেবব্রত পাল। দুই অধিনায়ককে নিয়ে তিনিই বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে টস করেন। তামিমের মাঠ ছাড়া, হাসপাতালে যাওয়া, সেখানে চিকিৎসা নেওয়া; পুরো ঘটনা নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন দেবব্রত।
তার পুরো বর্ণনা তুলে ধরা হলো-
"আমরা যারা কাছ থেকে দেখেছি, ব্যাপারটা কিন্তু অকল্পনীয়। ক্রিকেটারদের সঙ্গে আমি দীর্ঘদিন কাজ করি, নিজেও ক্রিকেট খেলেছি। কিন্তু আজকের ঘটনা ক্যারিয়ারে এ রকম হয়নি। সকালে টস করলাম, তামিম এলো; দুই দলের অধিনায়ক। টস করে অধিনায়করা চলে যায়, কিন্তু গতকাল আমাদের একটা মিটিং ছিল। সে প্রেক্ষিতে আমি আর তামিম ৩/৪ মিনিট কথা বলি। কথা বলার পর ও ড্রেসিংরুমে চলে যায়, আমিও আমার দায়িত্বে চলে যাই।
ম্যাচও শুরু হয়। ম্যাচ শুরুর আনুমানিক ৪০ মিনিট পর ফিজিও এনাম আমাকে ফোন দিল, তামিম বুকে ব্যথা অনুভব করছে, আমরা তাকে হাসপাতালে নিতে চাই। মাঠে আমাদের অ্যাম্বুলেন্স ছিল, তামিমের গাড়িটাও ছিল। আমি দেখলাম যে তামিম গাড়িতে উঠে চলে গেল। আমিও সঙ্গে সঙ্গে অনুমতি দিলাম। চলে আসার পর খবর নিলাম কী অবস্থা, বললো আসার পর ডাক্তার ইসিজি করালো। ডাক্তারের কাছে যেটা শুনলাম, ডাক্তার কিছুক্ষণ থাকতে বলছে, কিন্তু তামিম বলছে যে ঢাকায় যেতে চায়। এরই মধ্যে সে তার পরিবারের সদস্য এবং হেলিকপ্টারের সঙ্গেও কথা বলেছে।
ওই সময় আমি মাঠে, আমাদের বিকেএসপিতে যে ডাক্তার ছিলেন এবং ট্রেনার ডালিমের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। পরে যখন হেলিকপ্টার আসছে শুনলাম, মোহামেডানের ম্যানেজার ইনফর্ম করল। সঙ্গে সঙ্গে আমার মাথায় ক্লিক করল, আমার যে গাড়ি ছিল ওটা নিয়ে আসলাম ১ নম্বর মাঠের দিকে। ওখানে যে রানিং ট্র্যাক থাকে, ওখানে হেলিকপ্টার ল্যান্ড করল। আমরা যখন কাছে গেলাম, তামিমের কোনো কথা তো নেই, অচেতন অবস্থায়।
তখন আমরা ভয় পেয়ে গেছি। আমরা কি হেলিকপ্টারে তুলব বা গাড়িতে রেখে কি করব! ডাক্তারকে সঙ্গে সঙ্গে জিজ্ঞেস করলাম। ডালিম পাঞ্চ করছে ওকে, মুখ দিয়ে ফেনা পড়ছে; পালস নেই এমন একটা অবস্থা। ডাক্তার জানান, হেলিকপ্টারে নিলে সে চিকিৎসা বঞ্চিত হতে পারে। আমরা সঙ্গে সঙ্গে দ্রুতই সে হাসপাতালে নিয়ে গেলাম, জ্যামও ছিল না। ৪/৫মিনিটের মধ্যে এলাম। এসে দেখলাম ডাক্তারদের পুরো একটা গ্রুপ রেডি হয়ে আছে। ওখানে সম্ভবত লাইফসাপোর্টেও নিয়ে যায়।"