নাঈমের বিধ্বংসী ১৭৬, প্রাইম ব্যাংকের ইতিহাস, তামিম-আল আমিনের সেঞ্চুরি

নাঈমের শেখের রান ১৭৬, তার দলই জিতেছে ১৭৩ রানে। প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব তাহলে কতো রান তুলেছিল, সেটা সহজেই অনুমান করা সম্ভব। নাঈমের বিধ্বংসী ইনিংসে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের ইতিহাসের সর্বোচ্চ সংগ্রহ গড়া দলটি জেতেও বিশাল ব্যবধানে। একই দিনে সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের অধিনায়ক তামিম ইকবাল ও রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাবের অধিনায়ক আল-আমিন জুনিয়র। নাঈম-তামিমের সেঞ্চুরি কাজে এলেও আল-আমিনের সেঞ্চুরি বিফলে গেছে, হেরে গেছে তার দল।
রোববার মিরপুর শেরে জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ব্রাদার্স ইউনিয়নকে ১৭৩ রানে হারিয়েছে প্রাইম ব্যাংক, যা প্রিমিয়ার লিগে রানের হিসেবে তাদের সর্বোচ্চ বড় জয়। দলটির আগের সর্বোচ্চ জয়টিও ১৭৩ রানে। আগে ব্যাটিং করে রান পাহাড় গড়ে প্রাইম ব্যাংক, ৮ উইকেটে ৪২২ রান তোলে তারা। প্রিমিয়ার লিগসহ বাংলাদেশের মাটিতে লিস্ট 'এ' ক্রিকেটে এটাই সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। আগের সর্বোচ্চ ছিল ভারতের। ২০২২ সালে চট্টগ্রামে ইশান কিষাণের ডাবল সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৮ উইকেটে ৪০৯ রান তোলে তারা। প্রিমিয়ার লিগে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের রেকর্ডটি ছিল আবাহনীর দখলে। ২০১৮ প্রিমিয়ার লিগে এনামুল হক বিজয়ের ১৮৪ রানের সুবাদে শাইন পুকুর ক্রিকেট ক্লাবের ৫ উইকেটে ৩৮৮ রান তোলে আসরের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।
দলের রেকর্ড সংগ্রহে দুর্বার ছিলেন ম্যাচসেরা নাঈম। ৩৮ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করা বাঁহাতি এই ওপেনার সেঞ্চুরিতে পৌঁছান ৮২ বলে। ক্যারিয়ারের নবম সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া নাঈম শেষ পর্যন্ত ১২৫ বলে ১৮টি চার ও ৮টি ছক্কায় ১৭৬ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন নাঈম, যা তার ক্যারিয়ার সেরা। দেশের লিস্ট 'এ' ক্রিকেটে এটা পঞ্চম সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস। নাঈমের ব্যাটিং শাসনের দিনে রানের দেখা পান প্রাইম ব্যাংকের আরও কজন। ওপেনার সাব্বির হোসেন ৬৩ বলে ৯টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৭৩ রান করেন। আব্দুল্লাহ আল মামুম ২২ বলে ৪০ ও সাজ্জাদুল হক রিপন ৩৭ বলে অপরাজিত ৫০ রান করেন। ব্রাদার্সের পেসার আল আমিন হোসেন ৩টি ও সালাউদ্দিন শাকিল ২টি উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান সোহাগ গাজী ও অধিনায়ক মাইশুকুর রহমান রিয়েল।
বড় লক্ষ্য তাড়ায় তেড়েফুঁরে ব্যাটিং করলেও বেশি পথ পাড়ি দিতে পারেনি ব্রাদার্স ইউনিয়ন। রান তোলায় মন দিতে গিয়ে উইকেট হারাতে থাকা দলটি ৪২.৩ ওভারে ২৪৯ রানে অলআউট হয়ে যায়। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলেন আইচ মোল্লা, ১১০ বলে ৭টি চার ও ৫টি ছক্কায় ৯৬ রান করেন তরুণ এই ব্যাটসম্যান। ওপেনার মাফিজুল ইসলাম রবিন ২৯, অধিনায়ক মাইশুকুর ৩৪ ও জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক অলোক কাপালি ঝড়ো ৩০ রান করেন। প্রাইম ব্যাংকের লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট নেন। ২টি করে উইকেট পান হাসান মাহমুদ, খালেদ আহমেদ ও শামীম হোসেন পাটোয়ারী।
বিকেএসপির চার নম্বর মাঠে পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাবকে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে মোহামেডান। তাদের দুই স্পিনার তাইজুল ইসলাম ও নাসুম আহমেদের দারুণ বোলিংয়ের সামনে ৪৬.৩ ওভারে ২১৮ রানে অলআউট হয় পারটেক্স। আহরার আমিন ৮৬ বলে ৬টি চার ও ৩টি ছক্কায় সর্বোচ্চ ৭৮ রান করেন। জয়রাজ শেখ ৩৮ ও জাওয়াদ রোয়েন ৪২ রান করেন। তাইজুল ৪টি ও নাসুম ৩টি উইকেট নেন। ২টি উইকেট পান মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। লক্ষ্য তাড়ায় সেঞ্চুরি করা তামিম দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতা বাঁহাতি এই ওপেনার ১১২ বলে ১১টি চার ও ৫টি ছক্কায় অপরাজিত ১২৫ রান করেন। লিস্ট 'এ' তে এটা তার ২৩তম সেঞ্চুরি, প্রিমিয়ার লিগে অষ্টম। তাওহিদ হৃদয় ৩৭ ও মুশফিকুর রহিম অপরাজিত ৩৫ রান করেন। পারটেক্সের জাওয়াদ, মোহর ও নাঈম ইসলাম জুনিয়র একটি করে উইকেট নেন।
বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে ৪ উইকেটের জয় পেয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আবাহনী। ৪৯.৪ ওভারে ২৬০ রানে অলআউট হয় রূপগঞ্জ। অধিনায়ক আল আমিন ৮৯ বলে ১০টি চার ও ২টি ছক্কায় ১০৪ রানের দারুণ ইনিংস খেলেন। মাহমুদুল হাসান ২৫ ও ফয়সাল ৪৯ রান করেন। জবাবে ১৫ বল হাতে রেখে জয় তুলে নেয় আবাহনী। জিসান আলম ৩৯, পারভেজ হোসেন ইমন ৪৭, অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ৩৭, মোহাম্মদ মিঠুন ৬০ ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ৪৭ রান করেন। রূপগঞ্জের ফয়সাল ২টি উইকেট নেন। একটি করে উইকেট নেন ফাহাদ ও মাহমুদুল।