বিড়ালেরা কেন পানি ভয় পায়?

গৃহপালিত বিড়ালদের নিয়ে একটি বহুল প্রচলিত ধারণা হলো ওরা একেবারেই পানি সহ্য করতে পারে না। গোসল থেকে পালিয়ে যাওয়া হোক বা স্প্রে বোতলের হালকা পানি দেখে ভয়—প্রায় সব বিড়ালকেই পানির সঙ্গে বিবাদে দেখা যায়। যদিও কিছু বিড়াল যেমন তুর্কিশ ভ্যান বা মেইন কুন প্রজাতিগুলো পানিতে থাকতে পছন্দ করে। তবে বেশিরভাগ বিড়ালপ্রেমী জানেন, এই পুরনো বিশ্বাসটি এখনও বাস্তব।
এ বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণা নেই। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এর উত্তর লুকিয়ে থাকতে পারে বিড়ালের জৈবিক গঠন, বিবর্তনমূলক ইতিহাস ও বেড়ে ওঠার পদ্ধতিতে।
প্রাণী আচরণ বিশারদ ক্রিস্টিন ভিতালে মনে করেন, গৃহপালিত বিড়ালের পূর্বপুরুষ আফ্রিকান বুনো বিড়াল এবং এটি হতে পারে এর একটি বড় কারণ।
অনেক বন্য বিড়াল যেমন বাঘ, ফিশিং ক্যাট বা জাগুয়ার—সাঁতার কাটে পোকামাকড় থেকে বাঁচতে, শরীর ঠান্ডা রাখতে বা শিকার ধরতে। কিন্তু আফ্রিকান বুনো বিড়াল মূলত মরুভূমির কাছাকাছি পরিবেশে বাস করে, যেখানে বড় জলাশয় বা সাঁতার কাটা একেবারেই বিরল।
"ওরা সাধারণত পানির ধারে বা পানির ভেতরে শিকার করে না," বলেন ভিতালে, "আফ্রিকান বুনো বিড়ালের খাদ্যতালিকার বড় অংশ জুড়েই থাকে ভূমির প্রাণী, যেমন ইঁদুর। এই বিষয়টি মাথায় রাখলে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে গৃহপালিত বিড়ালরাও পানি এড়িয়ে চলে। কারণ, এই প্রজাতিটির পুর্বপুরুষ এমনভাবে গঠিত হয়নি।"
তবে ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি ইন সেন্ট লুইসে জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক এবং বিড়ালবিষয়ক বইয়ের লেখক জোনাথন লসস বলছেন, তিনি এই তত্ত্বে পুরোপুরি নিশ্চিত নন। তিনি বলেন, কোনো প্রাণী মরুভূমি থেকে এসেছে মানেই সে পানিকে ভয় পাবে এটা সবসময় সত্যি নয়। কারণ, আফ্রিকান বুনো বিড়ালের বিচরণক্ষেত্র কিছুটা কম শুষ্ক এলাকাকেও অন্তর্ভুক্ত করে, যেখানে এই প্রজাতির কিছু সদস্য জীবনে এক পর্যায়ে পানির মুখোমুখি হয়।
ওকল্যান্ড ইউনিভার্সিটির প্রাণীর বুদ্ধিমত্তাবিষয়ক গবেষক জেনিফার ভনক আরেকটি সম্ভাব্য কারণ উল্লেখ করেছেন—গৃহপালিত বিড়ালরা পানিতে ভেজা অবস্থায় শারীরিকভাবে অস্বস্তি বোধ করে এবং এটি তাদের ঘ্রাণশক্তিকে বিঘ্নিত করতে পারে।
"তাদের পশম পানি শুষে নেয় এবং ওজন বাড়ায়, যার কারণে চলাচল কঠিন হয়ে পড়ে। এতে বিড়াল নিজেকে অসহায় মনে করতে পারে," বলেন তিনি।
পানি বিড়ালের প্রাকৃতিক গন্ধ ঢেকে দিতে পারে, আবার নতুন কোনো গন্ধও আনতে পারে, যা বিড়ালের জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে। ভনক বলেন, বিড়াল নলের পানিতে থাকা কিছু রাসায়নিক সঙ্কেতও অনুভব করতে পারে যা ওদের অপছন্দ।
ভিতালে যোগ করেন, পানি ভেজানো অবস্থায় বিড়ালের প্রাকৃতিক ফেরোমোন (গন্ধযুক্ত রাসায়নিক) লুকিয়ে যেতে পারে, যা তাদের মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
সর্বোপরি, বিড়ালের পানির প্রতি ঘৃণা একক কোনো কারণে নয়—এটি অনেকগুলো কারণে মিলেমিশে হতে পারে। এছাড়াও ছোট বিড়ালের প্রাথমিক অভিজ্ঞতা তাদের জীবনের বাকী সময়ের জন্য পানির প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিতে বড় প্রভাব ফেলে। যদিও সরাসরি কোনো গবেষণা নেই যে বিড়ালছানাদের পানি দেখালে ওরা পানি পছন্দ করবে, তবে বিড়াল বিশেষজ্ঞরা জানেন, বিড়ালছানাদের বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি, শব্দ, গন্ধ, স্পর্শ ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে সোশ্যালাইজেশন বা সামাজিকীকরণ হলে তারা আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে।
"যদি কোনো বিড়ালছানা পানি ঘিরে বড় হয়, তবে সে বড় হওয়ার পর পানির সঙ্গে বেশি স্বস্তি বোধ করবে," তিনি বলেন।
তবে মনে রাখতে হবে, প্রতিটি বিড়াল আলাদা। পানি দেখানো সত্ত্বেও কিছু বিড়ালছানা পানি অপছন্দ করতে পারে, আবার কেউ কেউ যারা কখনো পানি দেখেনি, তারা পানি পছন্দও করতে পারে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
অনুবাদ :নাফিসা ইসলাম মেঘা