গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে ডিজিটাল রূপান্তর: তথ্যপ্রযুক্তিতে নব অভিযাত্রা

আওয়ামী লীগের ১৫ বছরে ফ্যাসিস্ট রেজিমের সময়ে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে যে বিনিয়োগগুলো হয়েছে, সেগুলো সংযোগের দিক থেকে বিচ্ছিন্ন, নিরাপত্তার দিক থেকে ঝুঁকিপূর্ণ এবং খরচের দিক থেকে লুটপাট এবং দুর্নীতিপ্রবণ।
এই সময়ে নিপীড়নমূলক একটি সাইবার নিরাপত্তা আইন দিয়ে সমুদয় টেলিযোগাযোগ এবং আইসিটি খাতকে বিপথগামী করে রাখা হয়েছিল। ঝুঁকিপূর্ণ কনসালট্যান্ট এবং অযোগ্য ভেন্ডার নিয়োগ করে ব্যাপক অর্থ খরচ করে মন্ত্রণালয়, দপ্তর, সংস্থা ও বিভাগভিত্তিক কিছু ডিজিটাল আইল্যান্ড তৈরি করা হয়েছে, যেখানে ইন্টার অপারাবিলিটি কিংবা আন্তসংযোগ গুরুত্ব পায়নি। ন্যাশনাল কানেক্টিভিটি বাস (বিএনডিএ) কিংবা ন্যাশনাল সার্ভিস বাসের (এনইএ) মতো কনসেপ্টগুলো কাগজে ছিল, কিন্তু বাস্তবতা পায়নি।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্বে এসে আমরা দেখতে পেয়েছি ন্যাশনাল লেটার সেন্টারে সক্ষমতা একেবারেই সীমিত, সিকিউরিটি মেজার অপ্রতুল এবং এনলাইটিকস অনুপস্থিত। ডেটা সেন্টারের ন্যাটিভ ফ্যাসিলিটিগুলোর মেমোরি, প্রসেসিং পাওয়ার, স্টোরেজ- তিন জায়গাতেই ক্যাপাসিটি ঝুঁকিপূর্ণ পর্যায়ে চলে গেছে।
উপরন্তু ডিজাস্টার রিকভারি সেন্টারের সক্ষমতা মূল সক্ষমতার মাত্র ১২-১৫ শতাংশ। ডেটা সেন্টার এবং ক্লাউড ফ্যাসিলিটির এনভায়রনমেন্টাল ড্যাশবোর্ড, পেলোড ডিস্ট্রিবিউশন, ইন্টারনেট থ্রুপুট অ্যালোকেশন, অ্যান্টি ডিডস মেজার ইত্যাদি মৌলিক বিষয়াদি অনুপস্থিত ছিল। ন্যাটিভ ক্লাউডের সার্ভারগুলোর ভার্চুয়াল মেশিনগুলোর পারফরম্যান্স মনিটরিং ছিল না।
বাংলাদেশ ডেটা সেন্টার কোম্পানিতে দুর্নীতি-লুটতরাজবান্ধব দুটি চুক্তি করা হয়েছে। প্রায় ৭ মিলিয়ন ডলারে চীনা প্রতিষ্ঠানের সাথে একটা চুক্তি করা হয়েছে, যেটার সার্ভারগুলো কখনোই ব্যবহৃত হয়নি এবং প্রকল্প হস্তান্তরের আগেই হার্ডওয়্যারের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছিল।
একটি মার্কিন প্রতিষ্ঠানের সাথে অন্য চুক্তিতে ক্লাউড ক্রেডিট কেনার নামে বিদ্যুৎ খাতের ক্যাপাসিটি চার্জের আদলে এমন অন্যায় চুক্তি করা হয়েছে, যেখানে সরকারকে তিন বছরে ২৩.৯ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হবে। অথচ সেই ক্লাউড ফ্যাসিলিটি তিন বছরে সর্বমোট ৬ মিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করার কোনো সম্ভাবনা নেই, যেখানে ক্লাউড হচ্ছে 'পে অ্যাজ ইউ গো'। অর্থাৎ যতটুকু ব্যবহার ততটুকুর ওপর বিল পরিশোধ। সেখানে ক্ষমতাচ্যুত সরকার এমন চুক্তি করেছে, যার মাধ্যমে ক্লাউড ব্যবহার হোক বা না হোক, সেখানে ১৮ মিলিয়ন ডলার পেমেন্ট করতেই হবে। কোনো ক্রেডিট ফরোয়ার্ডিং হবে না এবং হার্ডওয়্যারের মালিকানা না থেকেও বাংলাদেশ সরকারকে ডিউটি পেমেন্ট করতে হয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের বিডিজি-ই-গভ সার্টের মানসম্পন্ন কোনো সিকিউরিটি সফটওয়্যার পাওয়া যায়নি, যার গার্টনার র্যাংকিংয়ে লিডিং পজিশনে আছে। জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা কাউন্সিলের জনবল, কম্পিউটার ল্যাব এবং টুলগুলো অত্যন্ত সাধারণ মানের ছিল।
এটুআইয়ে ইনোভেশনের নামে নামে বৈধ এবং অবৈধভাবে বেশ কিছু প্রকৃত ইনোভেশন নয় এমন প্রকল্প নিয়েছে, মার্কেট প্লেস-ভিত্তিক প্রকল্প নিয়েছে। গেমিং প্রকল্প করে দেশের গেমিং ইন্ডাস্ট্রি ডেভলপমেন্ট সফটওয়্যার, ট্রেনিং ফ্যাসিলিটি, ভৌত অবকাঠামো ইত্যাদি সরবরাহ না করে শেখ মুজিবুর রহমান, শেখ হাসিনা এবং শেখ রাসেলের নামে সিনেমা বানানো হয়েছিল।
বাংলাদেশ হাইটেক পার্কের অধীনে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে জমি নির্বাচন করে ২০টির বেশি সফটওয়্যার ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপনের জন্য একাধিক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পগুলোর ভূমি নির্বাচন এতটাই দুর্নীতি হয়েছে যে লোকালয় কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে দূরবর্তী স্থানে অবস্থিত এসব সফটওয়্যার সেন্টারে বিনিয়োগকারী, শিক্ষার্থী কিংবা আইটি কোম্পানি কাউকে আকৃষ্ট করানো যাচ্ছে না। সিলেটের হাইটেক পার্ক নগর থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরে। সাভারের কালিয়াকৈর হাইটেক পার্ক ব্যাপক পরিমাণ জমি শুধু দুটি কোম্পানিকে বরাদ্দ দিয়ে রাখা।
ডিপার্টমেন্ট অব আইসিটি এমন প্রকল্প করেছে তার ইনপুট ২০১৬/১৭ সালে দেওয়া, ফলে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে প্রকল্পটির উপযোগিতা অবশিষ্ট নেই।
বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল ইনফো সরকার নামে ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে ফাইবার সংযোগের জন্য অপটিক্যাল ফাইবার সংগ্রহের জন্য বড় প্রকল্প করেছে, কিন্তু সেটিও পাঁচ বছর সময় ক্ষেপণ করে মাত্র ১০ শতাংশ রিভিউ শেয়ারিংয়ে দুটি কোম্পানিতে ভাগাভাগি করে দেওয়া হয়েছে।
ডিজিটাল স্বাক্ষরের জন্য সিসএ নামক প্রতিষ্ঠানটিকে পুরোপুরি অকার্যকর রেখে দেওয়া হয়েছে, যার কোনো সিকিউর ওয়েব ট্রাস্ট সার্টিফিকেট নেই, ডিএনএস কিংবা এসএসএল সিকিউরিটি নেই, নেই আন্তর্জাতিক পিকেআই ফোরামের স্বীকৃতি।
অর্থাৎ একদিকে ইন্টার অপারাবিলিটি নেই, অন্যদিকে নেই ডেটা সেন্টার ও ক্লাউড ক্যাপাসিটি, নেই সক্ষম সাইবার নিরাপত্তা টুলস, নেই কার্যকর সাইবার অপারেশন সেন্টার। এর মধ্যেই শুরু হয়েছে কোটি কোটি নাগরিকের তথ্য ডার্ক ওয়েবে বেচাকেনার মহামারি। নামসর্বস্ব নির্মাতা প্রতিষ্ঠান যাদের ন্যূনতম ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা কিংবা সাইবার সুরক্ষা নেই কিংবা এপিআই সুরক্ষা ইত্যাদির ব্যাপারে ন্যূনতম জ্ঞান নেই, দক্ষ কর্মী নেই, আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেট নেই, তাদের গুরুত্বপূর্ণ কাজ দেওয়া হয়েছে।
অনেক ক্ষেত্রে সোর্স কোডগুলো অপরিপক্ক। যে কোম্পানির বিরুদ্ধে আদালতে নাগরিকের তথ্য বিক্রির অভিযোগ তাকেই বিসিসি এজ প্রজেক্টের কম্পোনেন্ট হিসেবে কৌশলগত ইন্টার অপারাবিলিটির কাজ দেওয়ার ফন্দি হয়েছে বিগত সরকারের আমলে।
বিভিন্ন পর্যায়ে আইসিটি ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছিল। ট্রেনিং কারা দেয়, কীভাবে দেয়, আদৌ দিচ্ছে কি না, লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার না করে ভুল প্রক্রিয়ায় ট্রেনিং আয়োজন চলছিল। দেখা গেছে ট্রেনিং না দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। একই এনআইডির বিপরীতে একাধিকবার ট্রেনিং সংক্রান্ত টাকা উত্তোলনের ঘটনা ঘটেছে।
ফ্রিল্যান্সার তৈরির জন্য যেসব কম্পিউটার দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো এতই নিম্নমানের যে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কাজ করা যায় না, ওপেন করা যায় না কম্পিউটার।
শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব সাপোর্ট প্রকল্পে দেশব্যাপী ৯ হাজার স্কুলে যেসব ল্যাপটপ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর প্রায় ৫০-৬০ শতাংশ আজ অকেজো।
একেবারে লেজগোবরে এবং ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় দায়িত্ব নিয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি মৌলিক পরিবর্তন আনার।
তাই আমরা শুরু করেছি নিন্মুক্ত কাজসমূহ-
১। ভ্যালু অব মানি, নাগরিক সেবার জন্য যৌক্তিক কোনো ভ্যালু তৈরি করে না এ ধরনের সব প্রকল্প বন্ধ করা, প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প আমরা বন্ধ করেছি। এটুআই এবং গেমিং প্রকল্প যে ভ্যানডর নির্ভর, অযৌক্তিক যেসব অ্যাপগুলো তৈরি করত, সেসব বন্ধ করা হয়েছে।
ক। আইসিটির চলমান ২০টি প্রকল্পের প্রতিটির সাব কম্পোনেন্ট এবং কম্পোনেন্টগুলোকে ক্রিটিক্যাল রিভিউ করা হয়েছে।
খ। প্রতিটাতে অ্যাকসেপ্টস ক্রাইটেরিয়াগুলো নতুনভাবে ডিফাইন করা হয়েছে।
গ। প্রতিটা প্রকল্পের এক্সিট প্ল্যান তৈরি করা হয়েছে।
ঘ। যেসব প্রকল্পের ভৌত অবকাঠাম হিসেবে হার্ড ফ্যাসিলিটি আছে, কিন্তু সেখানে সফট স্কিল ডেভেলপমেন্ট ফেসিলিটি নাই। সেজন্য নতুন করে স্কিল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এভাবে একদিকে রাষ্ট্রের কষ্টার্জিত অর্থের সাশ্রয়, অন্যদিকে ব্যয়িত অর্থের বিপরীতে 'ভ্যালু অব মানি' অ্যান্ড 'ভ্যাল্যু অফ সার্ভিস' তৈরির পথ খোঁজা হয়েছে।
২। জরুরি ভিত্তিতে ন্যাশনাল ডেটা সেন্টারের এক্সপানশন কর্মকাণ্ড চলছে, ডিজাস্টার রিকভারি এক্সপনশনের কার্যক্রম শুরু করেছি আমরা আইসিটি থেকে।
পাশাপাশি কালিয়াকৈর হাইটেক পার্কের ডেটা সেন্টারে ক্লাউড ফ্যাসিলিটি নির্মাণে দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সাথে আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছি। দেশে যাতে পূর্ণমাত্রায় সিডিএন ক্যাশ, এজ রাউটার, হাইপার স্কেলার ফ্যাসিলিটি আনা যায়।
৩। প্রতিটি অসম চুক্তি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইনফো সরকার-৩, ডেটা সেন্টার, ক্লাউড, হাইটেক পার্কের জমি বরাদ্দ ইত্যাদি চুক্তি পূনর্বিবেচনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভেন্ডরের সাথে স্পেসিফিকেশন রিভিউয়ের মতো কাজ আমরা হাতে নিয়েছি। সফটওয়্যার স্পেসিফিকেশন থেকে শুরু করে ডেটা সেন্টার স্পেসিফিকেশন ডকুমেন্ট রিভিউ করে সেগুলো সংশোধন করে আপডেট করেছি।
৪। ভেন্ডর লক পরিস্থিতি থেকে বেরুতে সোর্স কোড সংগ্রহ এবং গিট হাব প্রতিষ্ঠা
এটুআই ও বিসিসির ভেন্ডরগুলো থেকে সোর্স কোড টেকওভার করা, যাতে সফটওয়্যার লক এবং ভেন্ডর লকড না হয়ে যায়। এজন্য এটুআই ও বিসিসির যৌথ উদ্যোগে 'গিট হাব' তৈরি করা হয়েছে।
আইসিটি থেকে আমরা দেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের সফটওয়্যার সিস্টেমের উন্নয়নে সাপোর্ট দেওয়া শুরু করেছি। বিআরটিএ, বাংলাদেশ রেলওয়ে, ভূমি মন্ত্রণালয়, বিটিসিএল, চট্রগ্রাম পোর্ট অথোরিটির সফটওয়্যার সমূহের সোর্স কোড পুনরুদ্ধার, সফটওয়্যার সিস্টেম সহজীকরণ এবং নিরাপত্তা সংযোজন নিয়ে কাজ করছি। এছাড়া বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়, ঢাকা রোড ট্রান্সপোর্ট অথোরিটি, ঢাকা উত্তর সিটিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে এঙ্গেইজ হচ্ছি।
ইতোমধ্যেই আইসিটির ডিজাইনে একটি পুলিশ কমিউনিকেশন অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে, যা ওল্ড স্কুল ওয়াকিটকিকে রিপ্লেইস করবে, বাংলাদেশ পুলিশকে অ্যাপভিত্তিক 'পুশ টু টক' সেবা দেবে। ঢাকা সিটির জন্য একটা রিকশা রেজিস্ট্রেশন অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে, যা কিউআর কোডভিত্তিক নম্বর প্লেট জেনারেট করবে।
বর্তমানে ইউনিফায়েড টিকেটিংয়ের কাজ হাতে নিয়েছি আমরা, যাতে বিমান, রেল, বাস, ট্রাক, লঞ্চ, টোলসহ সব ধরনের সরকারি ট্রান্সপোর্টেশনের একটা মার্কেট প্লেস তৈরি হয়।
এর পাশাপাশি বেসরকারি বাসের টিকেটিং সিস্টেমের জন্য কিউআর কোডভিত্তিক পস-টার্মিনাল এবং বাস-ভ্যালিডেটর সেট মিলিয়ে অ্যাপভিত্তিক টিকেটিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে।
৫। এক ঠিকানায় সব নাগরিক সেবা আনার স্বপ্নযাত্রা
আমরা চেষ্টা করেছি সব মন্ত্রণালয়ের সবগুলো সেবার ফ্রন্ট ডেস্ক সার্ভিস নাগরিক সেবা প্ল্যাটফর্মে এনে প্রাথমিক পর্যায়ের আবেদন নবায়ন ইত্যাদি গ্রহণ করা। ইন্টার অপারাবিলিটির মাধ্যমে একটি ন্যাশনাল কানেক্টিভিটি হাব বা ন্যাশনাল এপিআই হাব বা ন্যাশনাল সার্ভিস হাব তৈরি করে নাগরিক সেবা প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসা। যাতে করে মানুষ তো অফিসে না গিয়ে শুধু একটি সার্ভিস সেন্টারে গিয়ে বিভিন্ন সেবার আবেদন এবং নবায়ন করতে পারেন। এটিকে আমরা নাম দিয়েছি নাগরিক সেবা বাংলাদেশ, এক ঠিকানায় সব সেবা।
অর্থাৎ প্রতিটি সরকারি অফিসের সেবাকে এক জায়গায় এনে নাগরিকদেরকে হয়রানিমুক্ত সেবাদানের লক্ষ্যে নাগরিক সেবার মাধ্যমে ন্যাশনাল এপিআই কানেক্টিভিটি হাব তৈরি করা হচ্ছে। এর ফলে ভিন্ন ভিন্ন অফিসের শত শত ওয়েবসাইটে গিয়ে আলাদাভাবে সেবার আবেদন করার প্রয়োজন পড়বে না। বরং এক জায়গায় সব সেবা পাওয়ার জন্য একটা ন্যাশনাল কানেক্টিভিটি হাব দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। অতীতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অনলাইন সেবা, ডিজিটাল সেন্টারসহ যেসব ডিজিটাল আইল্যান্ড করা হয়েছে নাগরিক সেবা সেগুলোকেও ইন্টারকানেক্ট ও ইন্টারঅপারেবল করবে। নাগরিকদেরকে প্রয়োজনীয় সব সেবা এক জায়গায় দিতে এটি বাংলাদেশের প্রথম সিটিজেন সার্ভিস কানেক্টিভিটি হাব।
বিচ্ছিন্নভাবে সব মন্ত্রণালয়ের সব ওয়েবসাইটে আলাদা আলাদা ভাবে না গিয়ে একটি ন্যাশনাল এপিআই হবে সবাইকে সংযোগ করা গেলে। একটি জাতীয় সার্ভিস প্লাটফর্ম তৈরি হবে, প্লাটফর্মে বসে সব মন্ত্রণালয়ের সব সেবার অ্যাক্সেস পাওয়া যাবে, ইতোমধ্যে আমরা ৬টা মন্ত্রণালয়কে এই কমন প্লাটফর্মে যুক্ত করতে পেরেছি, চেষ্টাটা অব্যাহত থাকবে।
আমরা স্বপ্ন দেখি একদিন জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন কিংবা এ সংক্রান্ত তথ্য সংশোধন, জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডি সংক্রান্ত যেকোনো ধরনের সেবা, পাসপোর্টের আবেদন নবায়ন, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ট্রেড লাইসেন্স, ট্রেডমার্ক, বিভিন্ন কোম্পানির পরিবেশগত ছাড়পত্র, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ইত্যাদির ইউনিটি সংক্রান্ত আবেদন নবায়ন, পরিবর্তন, সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ধরনের অ্যাটেস্টেশন কিংবা পুলিশের মামলা জিডি ইত্যাদি সবকিছু একটা মাত্র সেবাকেন্দ্রে গিয়েই সম্ভব হবে, এই স্বপ্ন যাত্রাটা নাগরিক সেবার মাধ্যমে শুরু হয়েছে।
৬। আইসিটি মাস্টার প্ল্যান
আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পরে আইসিটি মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করেছি। দুটি স্টেজে এটা করা হয়েছে। প্রথমে জাইকা সীমিত পরিসরে কান্ট্রি স্ট্যাডি করে একটা প্ল্যান দিয়েছে। সেখানে পূর্ণ ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন মাস্টার প্ল্যান এবং আইসিটির রিফর্ম রোডম্যাপের অনেক এলিমেন্ট অনুপস্থিত বলে আমরা নিজেরা আরেকটি আইসিটি মাস্টার প্ল্যান করেছি। এর খসড়া ইতোমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে। এই মাস্টারপ্ল্যানে ২০২৭ এবং ২০৩০ সালে আইসিটি খাতে দক্ষ জনবল, সফটওয়্যার পার্ক তৈরি, আইসিটি রপ্তানি বৃদ্ধিসহ ভিশনারি টার্গেট সেট করা হয়েছে।
আমরা চাই আগামী ৫ বছরে আইসিটি খাতে অন্তত ৬ মিলিয়ন দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে এবং একই সাথে ৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে দিতে। সেজন্য ঢাকায় একাধিক সফটওয়্যার পার্ট নির্মাণের জন্য গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, রাজউক এবং সিটি কর্পোরেশনকে জমির চাহিদাপত্র দেওয়া হয়েছে, পাশাপাশি বিটিসিএল ও ডাক বিভাগসহ সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জমিতে সফটওয়্যার পার্ক নির্মাণ করে সেখানে বেসরকারি কোম্পানিগুলোর জন্য মেট্রোপলিটন সেন্ট্রিক ওয়ার্ক স্পেস তৈরির (অফিস ভাড়া) উদ্যোগ নিচ্ছি। এর সাথে আমরা সেমিকন্ডাক্টর খাতকে একটি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে সেজন্য কিছু ল্যাব তৈরি করা, মেকারস স্পেস তৈরি করাকে গুরুত্ব দিচ্ছি।
৭। স্কিল গ্যাপ পূরণে ইন্ডাস্ট্রি সার্টিফায়েড ট্রেনিং
নতুন ধরার ট্রেনিং প্রকল্প শুরু করেছি। বর্তমানে আমরা সবগুলো ট্রেনিং ডিপিপির কাজ করছি, এখানে আমরা আন্তর্জাতিক মানের ফ্রিল্যান্সার, মাই এসকিউএল, পাইথন প্রোগ্রাম, ক্লাউড ভিত্তিক ডিজিটাল কনটেন্ট ক্রিয়েটিং, সাইবার সিকিউরিটি, কনটেন্ট বেজড মোজো জার্নালিজম, ডিজিটাল ভেরিফিকেশন ইত্যাদির ওপরে এমন ট্রেনিং কারিকুলাম সাজাচ্ছি, যাতে দুটি সার্টিফিকেশন নিশ্চিত থাকবে।
ক। হয় ট্রেনিংগুলো ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট অথোরিটি) এনএসডিএ কর্তৃক স্বীকৃত হবে;
খ। অথবা ট্রেনিংগুলোর কোনো আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেশন থাকবে।
এর উদ্দেশ্য ইন্ডাস্ট্রির জন্য দরকারি তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক এলিমেন্টারি স্কিল গ্যাপ পূরণ করা। পাশাপাশি আমাদের শিক্ষার্থীরা এই ট্রেনিং করে পরে যাতে এই সার্টিফিকেট কর্মজীবনে কাজে লাগাতে পারেন।
আমরা নিয়ম করেছি এখন থেকে আইসিটি ডিভিশন থেকে জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃত সার্টিফিকেটবিহীন কোনো ট্রেনিং দেওয়া হবে না। ডিপিপি সংশোধন শেষ করে আমরা অচিরেই হার পাওয়ার, লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং, অ্যাডভান্স ফ্রিল্যান্সার ট্রেনিং, অ্যাডভান্স প্রোগ্রামিং ট্রেনিং, মোবাইল আইসিটি ট্রেনিং ইত্যাদি ট্রেনিং কার্যক্রম শুরু করব। ট্রেনিংগুলো শেষ করে পরীক্ষা হবে। পরীক্ষায় যারা একটা মানসম্পন্ন স্কোর করবে তাদের কিছু সম্মানী দেওয়া হবে এবং প্রয়োজনে ল্যাপটপ দেওয়া হবে, যার মালিকানা আইসিটির থাকবে। তবে শর্ত এমন হবে যে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে মেইনটেনেন্স চুক্তি থাকবে। তাতে ল্যাপটপগুলো সচল থাকে এবং দরকারে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ল্যাপটপ প্রতিস্থাপন করতে পারে।
৮। ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার তৈরির ভবিষ্যৎ মহাযাত্রা
যেহেতু বাংলাদেশের ডিজিটাল ট্রান্সফর্মেশন কিছু ডিজিটাল আইল্যান্ডে ফ্রাগমেন্টেড হয়েছে, এত ইন্টারকানেক্টিভিটি এবং ইন্টার অপারাবিলিটি পর্যাপ্তভাবে তৈরি হয়নি। প্রতিষ্ঠানগুলো বিচ্ছিন্নভাবে নিজেদের মতো করে এপিআই সংযোগের মতো একটা অনিরাপদ যাত্রায় নিয়োজিত ছিল। আমাদের মনে হয়েছে এর পরিবর্তে বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের ডেটা গভর্নেন্স এবং ইন্টার অপারেবল ব্যবস্থা দরকার।
সেজন্য ডেটা গভর্নেন্সের ন্যাশনাল রিকোয়ারমেন্টগুলো আমরা তিন স্তরে সাজিয়েছি।
ক। ডিপিআই সংশ্লিষ্ট আইনি কাঠামোগুলো ঠিক করা
- সাইবার নিরাপত্তা আইন যা আমরা ইতোমধ্যেই পাশ করেছি।
- ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা আইন যা আমরা সব ধরনের কনসালটেশন শেষ করে ক্যাবিনেটে (অক্টোবরের প্রথমার্ধে) উপস্থাপনের পর্যায়ে আছি।
- ন্যাশনাল ডেটা গভর্নেন্স এবং ইন্টারঅপারেবিলিটি অথরিটি আইন। এটি নিয়ে আমরা এখন কাজ করছি।
- হাইটেক পার্ক আইন। এটিকে আমরা আপডেট করছি।
- পোস্টাল অ্যান্ড ই-কমার্স আইন। এটিকে আমরা ওর পরপর সব আইনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে নতুন করে সংশোধন করছি।
- টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক এবং লাইসেন্সিং পলিসি ইতোমধ্যেই আমরা পাশ করেছি।
ডিজিটাল ইকোনমির ভিত্তি রচনার জন্য মানসম্পন্ন ইন্টারনেট অবকাঠামো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য আমরা সার্ভিস বেস্ট একটা ডিজিটাল ইকোনমির সূত্রপাত করার জন্য, হায়ারার্কিকেল এবং কমপ্লেক্স টেলিযোগাযোগ লাইসেন্স ইন স্ট্রাকচারকে সহজ করেছি।
এখানে দেশের ফাইবার কানেক্টিভিটিকে সহজ করার জন্য ন্যাশনাল ফাইবার ব্যাংক নিয়ে কাজ করছি। এখানে প্রতিটি সরকারি এবং বেসরকারি কোম্পানির অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক একটা কেন্দ্রীয় ডিজিটাল ম্যাপিং সফটওয়্যার থাকবে, যার মাধ্যমে ফাইবার কোম্পানিগুলো একে অপরের সাথে ফাইবার শেয়ারিং ফাইবার ইন্টার কানেক্টিভিটি নিশ্চিত করে দেশের ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান এবং সরকার সরকারি অফিসগুলোকে সহজেই ফাইবার সংযোগের আওতায় নিয়ে আসতে পারে।
পাশাপাশি দেশের মাত্র ২০ শতাংশ টেলিকম টাওয়ার ফাইবারের আওতায় বলে, নতুন পলিসিতে আগামী তিন বছরের মধ্যে ৮০ শতাংশ মোবাইল টাওয়ার ফাইবারাইজেশনের টার্গেট দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের ডিজিটাল সার্ভিসের ক্রমবিকাশ এবং ডিজিটাল ইকোনোমির ভিত্তি প্রস্তুত করার জন্য সস্তায় ইন্টারনেট নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য ন্যাশনাল ফাইবার ব্যাংক একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হয়ে উঠতে পারে। অ্যাক্সেস টু ফাইবার ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার সম্প্রসারণের পথ প্রশস্ত হবে।
খ। ডিজিটাল ইনফ্রাস্ট্রাকচারগুলোর ইন্টার অপারাবিলিটি
এই স্তরের দেশের সব মন্ত্রণালয়ের, সব তথ্য সংস্থা কিংবা বিভাগের, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাসহ সব সরকারি এবং বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ সেবা দাতা প্রতিষ্ঠানের সার্ভারগুলো আন্তসংযুক্ত করে, একটি জাতীয় কানেক্টিভিটি এক্সচেঞ্জ তৈরি করা হবে। এটা একটা ন্যাশনাল কানেক্টিভিটি বাস হয়ে উঠবে, যা সেবার জন্য নতুন পুরনো সরকারি ও বেসরকারি সেবাসমূহের জন্য একটি সার্ভিস বাসের সূচনা করবে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ডেটাবেজ এবং সফটওয়্যারগুলো দুই ভাগে ভাগ করা যায়- একটা হরিজন্টাল, আরেকটা ভার্টিকাল।
ষড়যন্ত্র লেয়ারে এমন কিছু ডেটাবেজ আছে, যা সব নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং শেয়ার বিনিময় বিতরণ করে, এখানে আছে জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডি সিস্টেম ও ডেটাবেজ, নাগরিকের জন্ম এবং মৃত্যু নিবন্ধন ডেটাবেজ, পাসপোর্ট ডেটাবেজ, শিক্ষা ডেটাবেজ, স্বাস্থ্য ডেটাবেজ, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ডেটাবেজ ইত্যাদি।
বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে এই ডেটাবেজ গুলো প্রায় সব নাগরিকের কিছু না কিছু তথ্য ধারণ করে।
বিপরীতে ভার্টিক্যাল লেয়ার এর ডেটাবেজগুলো শুধু আংশিক নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ, বিনিময় কিংবা বিক্রয় করে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো তিন ধরনের-
- বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ডেটাবেজ
- বিভিন্ন সরকারি সেবা ডেটাবেজ
- বিভিন্ন বেসরকারি সেবা ডেটাবেজ
ন্যাশনাল ইন্টারকানেক্টিভিটি এক্সচেঞ্জ এই সবগুলো ডেটাবেজকে কানেক্টিভিটির মধ্যে নিয়ে আসবে। ডিজিটাল সার্টিফাইড পিকেআই ভেরিফিকেশন সিস্টেমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সব ভার্টিক্যাল এবং হরিজেন্টাল ডেটাবেজ পরস্পর আন্তসংযুক্ত হবে। এতে করে একটা ন্যাশনাল এপিআই কানেক্টিভিটি হাব তৈরি হবে। এটা দেশের প্রথম ইন্টারপারাবিলিটি এক্সচেঞ্জ, যার ওপর ভিত্তি করে একটি ডিজিটাল সার্ভিস বাস তৈরি করা সম্ভব হবে।
অর্থাৎ ন্যাশনাল কানেক্টিভিটি বাস এবং ন্যাশনাল কানেক্টেভিটি এক্সচেঞ্জ তৈরি হলে তার ওপরে ডিজিটাল সেবা যেমন ফিনটেক, এডটেক বা এডুকেশন টেকনোলজি, হেলথ টেক, এগ্রিকালচার টেক, গভ-টেকসহ যাবতীয় ডিজিটাল সেবা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পরিচালিত সেবাসমূহ, এআই পরিচালিত দুর্নীতি দমন, এআই পরিচালিত পাবলিক প্রকমেন্ট, এআইভিত্তিক ট্যাক্স নেট ও ভ্যাট নেট ডিসকভারি, এআইভিত্তিক হেলথ-টেক ডিসকভারি সব বিভিন্ন মন্ত্রণলায়ের সেবার এআইভিত্তিক রূপান্তরের পথ সুগম হবে।
বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যে ডেটার ওপরে কাজ করে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই ডেটাগুলোর সোর্স বা উচ্চ থেকে সংগ্রহকৃত প্রাইমারি ডেটা নয়। আমাদের ডেটা মানের কোয়ালিটি প্রশ্ন যুক্ত থাকায় ডেটাবেজড ডিসিশন অনেক সময় ভুল হয়। এক্ষেত্রে ন্যাশনাল কানেক্টিভিটি হাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, যা উৎস থেকে এটা সংগ্রহ করে দিবে। উচ্চ থেকে সংগৃহীত প্রাইমারি ডেটা উত্তেজককরণের মাধ্যমে ডেটার ডিফেন্ড ডিসিশনের একটা পথ উন্মুক্ত হবে।
এর বাইরে যেটা গভর্নেন্সের জন্য আমাদের একটি কেন্দ্রীয় রেগুলেশন দরকার, যেটা নির্ধারণ করবে-
- কোন প্রতিষ্ঠান কোন সেবার বিপরীতে বা নিড বেজড ডেটা সংগ্রহ করবে
- কাকে কখন কীভাবে ডেটা দেবে, কীভাবে ডেটা সংগ্রহ সংরক্ষণ, ডেটা প্রক্রিয়াজাতকরণ, স্টোরেজ, বিনিময় এবং বিক্রয় করবে
- কোন প্রতিষ্ঠান কাকে কীভাবে ডেটা শেয়ার করবে
- ডেটার টিয়ার নির্ধারণ করবে, কোন মন্ত্রণালয় কীভাবে অন্য মন্ত্রণালয়কে বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে, সরকারের প্রতিষ্ঠান কীভাবে অন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে, এবং দেশের অভ্যন্তরের কোম্পানি কীভাবে বিদেশের কোম্পানির কাছে ডেটা সংগ্রহ, হস্তান্তর এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের বিষয়াদি শেয়ার করবে এবং
- প্রতিষ্ঠান কীভাবে ব্যক্তির যেটার ওপরে হস্তক্ষেপ করতে পারবে
- তাদের সুবিশাল রেগুলেটরের নিয়ন্ত্রণের জন্য চাই একটি ডেটা গভর্নেন্স অথরিটি (এখানে থাকে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা উইং, ডেটা ব্রোকার)
ডেটা গভর্নেন্স অথরিটিতে থাকবে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা উইং, ডেটা ব্রোকার উইং (ডেটা গভর্নেন্স বিষয়ে প্রশিক্ষিত আইনজীবী ও ডেটা সায়েন্টিস্ট), কমপ্লায়েন্স ও এনফোর্সমেন্ট টিম।
সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে এই পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল রূপান্তরটি সম্ভব বলে আমরা মনে করি।
গ। ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচারের অথেনটিকেশন লেয়ারের দরকার ন্যাশনাল ইলেকট্রনিক আইডেন্টিটি ম্যানেজমেন্ট লেয়ার
এই লেয়ারের মাধ্যমে ব্যক্তির এনআইডিসহ বিভিন্ন ধরনের আইডির তথ্যগুলো ভেরিফাই করা সম্ভব হবে। তবে ইলেকট্রনিক আইডি অথেন্টিকেশনের একটা মূলনীতি হচ্ছে, এটা শুধু হরিজন্টাল কিংবা ভার্টিক্যাল স্তরের একটিমাত্র ডেটাবেজ থেকে ডেটা নিয়ে সেটা অথেন্টিকেট করে দেয় না। বরং সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ব্যক্তির একই ডেটার ভিন্ন ভিন্ন ভার্শন থাকলে সেই ডেটাগুলোর মধ্যে ক্রস ডোমেইন ভেরিফাই করে, সবচেয়ে অ্যাকুরেট তথ্যটি যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে পরবর্তীতে সেটা ব্লকচেইন বা সমজাতীয় প্রযুক্তির মাধ্যমে সব জায়গায় সঞ্চালন করা হবে। যাতে করে ব্যক্তির ঠিকানাসহ তথ্য ফিল্ডগুলোর মধ্যে ভিন্নতা না থাকে।
এটি ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচারের গুরুত্বপূর্ণ স্তর। তবে বাংলাদেশে ন্যাশনাল ইন্টারকানেক্টিভিটি লেয়ার এবং ডিজিটাল গভর্নেন্স না থাকায়, অতীতে বিভিন্ন বিচ্ছিন্নভাবে পরিচয় যাচাইয়ের উদ্যোগ ব্যাহত হয়েছিল। পাশাপাশি অনিয়ন্ত্রিত, অযোগ্য কনসালট্যান্টের মাধ্যমে নাগরিক তথ্য ও সংরক্ষণ প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং বিনিময় একটা নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে।
তিন স্তর বিশিষ্ট ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার এই সমস্যাগুলোর সমাধান করে বাংলাদেশের ডিজিটাল সিস্টেমকে ভবিষ্যৎ মুখে করে তুলবে।
ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচারের একটা মধ্যবর্তী স্তরে মন্ত্রণালয়গুলো নিজে ডেটা স্টোর তৈরি না করে বরং ন্যাশনাল ডেটা সেন্টারকে ব্যবহার করবে। ন্যাশনাল ডেটা সেন্টার সাইবার অপারেশন সেন্টার, সাইবার সেন্সর, সাইবার টুলসহ বিভিন্ন ঝুঁকি মোকাবিলা করে মন্ত্রণালয়গুলোকে নিরাপদ ডেটা স্টোরেজ সার্ভিস প্রদান করবে। এর মাধ্যমে আলাদা আলাদা ভাবে ডেটা স্টোরেজ করতে সরকারের মোট খরচ কমে আসবে।
তথ্য প্রযুক্তি বিভাগ থেকে যে উদ্যোগগুলো নেওয়া হয়েছে, এই সবগুলো উদ্যোগ প্যারালালে চলতে পারলে, আমরা মনে করি বাংলাদেশের আইসিটির ভবিষ্যৎ ডিজিটাল ইকোনমির জন্য প্রস্তুত হবে।