১৭ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে চট্টগ্রামের ইপিজেডের কারখানার আগুন

চট্টগ্রামের রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (সিইপিজেড) একটি পোশাক কারখানায় লাগা আগুন দীর্ঘ ১৭ ঘণ্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে এসেছে। বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে লাগা এই আগুন শুক্রবার সকাল ৭টা ২৫ মিনিটে নিয়ন্ত্রণে আসে। অগ্নিকাণ্ডে কারখানাটির উপরের কয়েকটি তলা ধসে পড়লেও কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
অগ্নিকাণ্ডের খবর পাওয়ার পর ফায়ার সার্ভিসের বিভিন্ন ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু করে। সময়ের সাথে সাথে আগুনের ভয়াবহতা বাড়লে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, সিইপিজেড, চট্টগ্রাম বন্দর ও কর্ণফুলী ইপিজেডের (কেইপিজেড) ফায়ার সার্ভিস ইউনিটও এই অভিযানে যোগ দেয়। ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিটের পাশাপাশি উদ্ধার সহায়তায় ২ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়।
ঘটনাস্থলে থেকে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, 'এডাম ক্যাপস এন্ড টেক্সটাইল মিলসের যেই অগ্নিকাণ্ডটা ঘটেছে এটা সেই আমরা খবর পেয়েছি ২টা ১০ মিনিটে। আগুন নিয়ন্ত্রণ এসেছে ৭টা ২৫ মিনিটে। দীর্ঘ ১৭ ঘন্টা লেগেছে।'
তিনি এই সমন্বিত চেষ্টার জন্য সংশ্লিষ্ট সব বাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, 'ইপিজেড কর্তৃপক্ষ, সশস্ত্র বাহিনী, আর্মি, নেভি এয়ারফোর্স আমাদের অন্যান্য প্যারামিলিটারি ফোর্স যারা আছেন সবাইকে আমরা বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি কারণ আপনারা আমাদের সাথে ছিলেন আমরা একটা টিম হিসেবে কাজ করেছি।'

লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী জানান, অগ্নিকাণ্ডের পরপরই কারখানা ভবন থেকে সবাইকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, 'অ্যাডাম ক্যাপস এন্ড টেক্সটাইল মিলসে কোনো ধরনের কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ইপিজেড কর্তৃপক্ষকে সময়মতো আর্মি, পুলিশ জানিয়েছে। দ্রুত এই বিল্ডিং থেকে সবাইকে উদ্ধার করা হয়েছে। এটি একটি বিশাল পাওয়া।'
আগুন নিয়ন্ত্রণে বিলম্বের কারণ
আগুন নিয়ন্ত্রণে এত লম্বা সময় লাগার পেছনে একাধিক কারণ উল্লেখ করেছে ফায়ার সার্ভিস। তাজুল ইসলাম জানান, ভবনটি এক ধরনের 'মিশ্র ব্যবহার' ভবন ছিল—অর্থাৎ সেখানে একই সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম চলত। উপরের চারটি তলা ছিল পুরোপুরি স্টোররুম, কিন্তু সেগুলো ঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি।
তিনি ব্যাখ্যা করেন, স্টোরে রাখা জিনিসগুলো—যেমন ডাক্তারদের এপ্রোন, মেডিকেল গাউন ইত্যাদি—আগুনে পুড়ে রাসায়নিক পদার্থে পরিণত হয়। ফলে আগুন আরও ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং নিয়ন্ত্রণে আনতে অনেক বেশি সময় লাগে।
ভবনটির নির্মাণত্রুটিও আগুন নিয়ন্ত্রণে বাধা সৃষ্টি করে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, 'ভবনটির দুই পাশ খোলা থাকলেও বাকি দুই পাশে বিল্ডিং কোড অনুযায়ী সেটব্যাক [ফাঁকা জায়গা] রাখা হয়নি। কারণ পার্শ্ববর্তী যে বিল্ডিংটা ছিল খুবই সন্নিকটে। ফায়ার ফাইটাররা আশপাশে অবস্থান নিতে পারেননি।'
আরেকটি বড় সমস্যা ছিল তীব্র তাপমাত্রা। তিনি বলেন, 'দীর্ঘ সময় আগুন জ্বলার কারণে ভবনের ভেতরের তাপমাত্রা ৮০০ থেকে ১০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে যায়। এতে কংক্রিটের স্তম্ভগুলো দুর্বল হয়ে যায়, ফলে ৫ম তলা থেকে ৮ম তলা পর্যন্ত এটা একটা স্যান্ডউইচ হয়ে ফ্লোরগুলো সব একাকার হয়ে গিয়েছে এবং ভেঙে নিচে পড়েছে। এতে উদ্ধার কাজ আরও কঠিন হয়ে পড়ে।'
তিনি যোগ করেন, 'আমরা নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে দূর থেকে কাজ করেছি, তাই সময় বেশি লেগেছে। তবে আগুন পার্শ্ববর্তী অন্য কোনো ভবনে ছড়াতে দেওয়া হয়নি।'
অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, 'আগুনের সূত্রপাতের কারণসহ সার্বিক বিষয় জানতে ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবেন।'