দেশবন্ধু গ্রুপকে সহায়তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকে শ্রম মন্ত্রণালয়ের চিঠি

দেশবন্ধু গ্রুপভুক্ত কারখানাগুলোর উৎপাদন কার্যক্রম সচল রাখতে ঋণ পুনঃতফসিলের পাশাপাশি কাঁচামাল আমদানির জন্য চলতি মূলধন সরবরাহ ও ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি খোলার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ করেছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
গত বছরের ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে দেশবন্ধু গ্রুপের বেশ কিছু কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে রপ্তানিমুখী পাঁচটি তৈরি পোশাক কারখানা আংশিকভাবে চালু রয়েছে।
চলতি মূলধনের ঘাটতি ও ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি খুলতে না পারায় প্রায় ২৫,০০০ শ্রমিকের কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী এসব কারখানা সক্ষমতার মাত্র ২৫ শতাংশে টিকে আছে।
কারখানাগুলোর বর্তমান আয়ে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে শ্রমিক অসন্তোষের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, যা নিয়ে উদ্বিগ্ন মালিকপক্ষ ও শ্রম মন্ত্রণালয়।
এ অবস্থায় গত ১৪ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরকে লেখা এক চিঠিতে শ্রম মন্ত্রণালয় জানায়, 'দেশবন্ধু গ্রুপ দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী। ১৯৮৯ সাল হতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বৃহৎ ও মাঝারি আকারে শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে ২৫,০০০ জনবলের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করাসহ দেশের অর্থনীতিতে অবদান রেখে আসছে। প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ও চলতি মূলধনের অভাবে বিভিন্ন কারখানা বন্ধ রয়েছে এবং পাঁচটি কারখানা উৎপাদন ক্ষমতার সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ উৎপাদন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।'
শ্রম মন্ত্রণালয় চিঠিতে আরও উল্লেখ করে, শ্রমিক অসন্তোষ নিরসন ও কারখানাগুলোর উৎপাদন সচল রাখতে চলতি মূলধনের যোগান এবং ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি সুবিধা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতা প্রয়োজন।
সংকটের জন্য ব্যাংকগুলোকে দুষছে ব্যবস্থাপনা
দেশবন্ধু গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম রহমান টিবিএসকে বলেন, স্বাভাবিক উৎপাদন কার্যক্রম চালু থাকাকালে তাদের রপ্তানিমুখী কারখানাগুলো প্রতিবছর প্রায় ৫০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করত। বর্তমানে সেই রপ্তানি সক্ষমতার ২৫ শতাংশও অর্জন করা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, "দেশবন্ধু গ্রুপ কখনো সরকারের কাছ থেকে অবৈধ সুবিধা নেয়নি। আমরা সব সময় নিয়মকানুন মেনে ব্যবসা পরিচালনা করেছি।"
গোলাম রহমান জানান, দেশবন্ধু গ্রুপ যেসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিয়মিত ব্যবসা করত, তারা গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সহযোগিতা বন্ধ করে দিয়েছে। কিছু প্রতিষ্ঠান খেলাপিও হয়ে গেছে।
"আমরা ঋণ পুনঃতফসিল ও ব্যবসা পুনরায় চালুর আবেদন করলেও তাদের পক্ষ থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া পাইনি। এ কারণেই বর্তমান সংকটের সৃষ্টি হয়েছে," বলেন তিনি।
ঋণ বনাম সম্পদ
দেশবন্ধু গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম রহমান জানান, প্রতিষ্ঠানটি ২০০৫ সাল থেকে বিভিন্ন ব্যাংকের সঙ্গে ব্যবসা শুরু করে ২০২৪ সাল পর্যন্ত মোট ১৩,৭৮৭ কোটি টাকা ঋণ নেয়। এর মধ্যে ১২,৭৬৫ কোটি টাকা ইতোমধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে। বর্তমানে সুদ বাদে বকেয়া ঋণের পরিমাণ মাত্র ১,২৭৮ কোটি টাকা।
তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক অডিট ফার্ম আর্নেস্ট অ্যান্ড ইয়ংয়ের অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশবন্ধু গ্রুপের বর্তমান সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১৪,০০০ কোটি টাকা।
গোলাম রহমান জানান, দেশবন্ধু গ্রুপের ২৭টি প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৩০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী সরাসরি কাজ করছেন, আর পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থান হয়েছে আরও ৫ থেকে ৭ লাখ মানুষের।
"যদি ব্যাংকগুলো থেকে ২,০০০ কোটি টাকার চলতি মূলধন (ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল) ও ঋণ পুনঃতফসিলের সুবিধা পাওয়া যায়, তবে আর কোনো সংকট থাকবে না," বলেন তিনি।
গোলাম রহমান আরও বলেন, দেশবন্ধু সুগার মিল বিএমআরই (ব্যালান্স, মডার্নাইজেশন, রিহ্যাবিলিটেশন অ্যান্ড এক্সপ্যানশন) করার পর নতুন ও পুরনো যন্ত্রপাতির সংমিশ্রণে প্রত্যাশিত উৎপাদন ফল পাওয়া যায়নি, ফলে বড় ধরনের লোকসান গুনতে হয়েছে।
এছাড়া ব্যাংকের সুদের হার ১৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৮ শতাংশ হয়েছে এবং ডলারের দাম ৮৪ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১২৩ টাকা; ফলে আমদানি ব্যয়ও অনেক বেড়ে গেছে। এসব কারণে দেশবন্ধু গ্রুপ ৮২৫ কোটি টাকার লোকসানে পড়ে, যা শেষ পর্যন্ত বড় আর্থিক সংকটে রূপ নেয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।