বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুনে পোশাক রপ্তানি ব্যাহত

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর পণ্য ও সামগ্রীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
শিল্প নেতারা আজ রোববার বলছেন, এতে কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তাদের আশঙ্কা- এ ঘটনায় বাণিজ্যে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুর আড়াইটার দিকে বিমানবন্দরের ৮ নম্বর গেটসংলগ্ন কার্গো ভিলেজে আগুন লাগে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ১৩টি ফায়ার স্টেশনের ৩৭টি ইউনিটসহ বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর একাধিক ফায়ার ইউনিট যোগ দেয়। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বিমানবন্দরে কয়েক অন্তত ছয় ঘণ্টা ফ্লাইট চলাচল বন্ধ ছিল।
বাংলাদেশের ৪৭ বিলিয়ন ডলার মূল্যের তৈরি পোশাক খাতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল, রপ্তানির জন্য তৈরি পোশাক ও পণ্যের স্যাম্পল (নমুনা) রাখা গুদামগুলো এ আগুনে পুড়ে যায়।
তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহ-সভাপতি ইনামুল হক খান বলেন, 'এ ঘটনায় দেশের রপ্তানি বাণিজ্যের, বিশেষ করে পোশাক খাতের ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে।'

তিনি জানান, অনেক ব্যয়বহুল মালামাল, জরুরি চালান এবং পণ্যের নমুনা পুড়ে গেছে। এই নমুনাগুলো নতুন ক্রেতা পেতে এবং আরও বেশি অর্ডার আনতে সাহায্য করে। এগুলো পুড়ে যাওয়ায় ভবিষ্যতে অনেক কাজ হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে।
ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে তথ্য সংগ্রহ করছে বিজিএমইএ
ইনামুল হক খান জানান, ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য বিজিএমইএ ক্ষতিগ্রস্তদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে এবং এসব তথ্য সংগ্রহের জন্য একটি অনলাইন পোর্টালও খুলেছে।
শাহজালাল বিমানবন্দরের এই কার্গো ভিলেজ দেশের অন্যতম ব্যস্ত কার্গো ভিলেজগুলোর একটি। বছরের এই সময়ে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) প্রতিদিন প্রায় এক হাজার ২০০ মেট্রিক টন মালামাল এখানে ওঠানো-নামানো হয়।
বিজিএমইএর এই নেতা বলেন, 'প্রতিদিন ২০০-২৫০টি কারখানা উড়োজাহাজে তাদের পণ্য পাঠায়। এই পরিমাণ বিবেচনায় নিলে আর্থিক ক্ষতিটা অনেক বড়।'
তবে এখনো এ অগ্নিকাণ্ডের কারণ এখনো জানা যায়নি। তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) থেকে ছয়দিনের মধ্যে এটি বাংলাদেশে তৃতীয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। গত মঙ্গলবার ঢাকায় একটি রাসায়নিক কারখানার গুদাম ও পাশের একটি কারখানায় আগুন লাগে। এতে অন্তত ১৬ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন আরো অনেকে।

এরপর গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় একটি কারখানায় আগুন লাগে।
বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। ওয়ালমার্ট, এইচঅ্যান্ডএম ও গ্যাপের মতো আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোকে পোশাক সরবরাহ করে থাকে বাংলাদেশ। এ খাতে প্রায় ৪০ লাখ মানুষ কাজ করেন এবং বছরে প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার আয় হয়, যা দেশের মোট জিডিপির এক-দশমাংশেরও বেশি।
বছরের সবচেয়ে ব্যস্ত সময়ে এই আগুন লাগায় পণ্য পাঠাতে দেরি হবে এবং ক্রেতাদের কাছে সময় মতো পণ্য পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।