ট্রাম্পের বিশেষ দূতের সঙ্গে হামাস নেতাদের সরাসরি যে বৈঠক যুদ্ধবিরতি চূড়ান্ত করল

গাজায় দীর্ঘ প্রতীক্ষিত শান্তি চুক্তি চূড়ান্ত করতে গত বুধবার (৮ অক্টোবর) মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার হামাস নেতাদের সঙ্গে এক নাটকীয় ও বিরল বৈঠক করেছিলেন। সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমেই এই চুক্তি সম্ভব হয়েছে বলে মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওসকে নিশ্চিত করেছে তিনটি নির্ভরযোগ্য সূত্র।
এই চুক্তি সম্পাদনের পথে প্রধান বাধা ছিল হামাসের গভীর উদ্বেগ। তাদের আশঙ্কা ছিল, জিম্মিদের মুক্তি দেয়ার পর ইসরায়েল আবারও যুদ্ধ শুরু করতে পারে। এই অচলাবস্থা নিরসনে উইটকফ এবং কুশনারকে ব্যক্তিগতভাবে হামাস নেতাদের সাথে দেখা করতে হয়।
সূত্রগুলো জানায়, উইটকফ ও কুশনার সরাসরি হামাসকে এই নিশ্চয়তা দিয়েছেন যে, হামাস যদি চুক্তির শর্তাবলী মেনে চলে, তাহলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইসরায়েলকে আর যুদ্ধ করতে দেবেন না।
বৈঠকের প্রেক্ষাপট
মিশরে রওনা হওয়ার আগের দিন ওভাল অফিসে উইটকফ ও কুশনারের সঙ্গে একান্তে কথা বলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সেখানেই তিনি দূতদের হামাস নেতাদের সাথে প্রয়োজনে সরাসরি দেখা করার অনুমতি দেন, যদি তা চুক্তি সচলের জন্য অপরিহার্য হয়।
শার্ম আল-শেখে পৌঁছানোর পর উইটকফ কাতারি, মিশরীয় এবং তুর্কি মধ্যস্থতাকারীদের ট্রাম্পের এই সবুজ সংকেত সম্পর্কে অবহিত করেন। গত বুধবার রাত প্রায় ১১টার দিকে কাতারি মধ্যস্থতাকারীরা উইটকফের 'ফোর সিজনস' ভিলায় আসেন।
তারা জানান, আলোচনা আটকে গেছে। বরং প্রশ্ন করেন, মার্কিন দূতেরা হামাসের সঙ্গে বৈঠক করতে প্রস্তুত কিনা। এক জ্যেষ্ঠ কাতারি কর্মকর্তা উইটকফকে বলেন, 'আমরা মনে করি, যদি আপনারা তাদের সঙ্গে দেখা করেন এবং হাত মেলান, তাহলে একটি চুক্তি হয়ে যাবে।'
কয়েক মিনিট পর উইটকফ ও কুশনার লোহিত সাগরের তীরবর্তী আরেকটি ভিলার দিকে হেঁটে যান। সেখানে তাদের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন মিশরীয় ও তুর্কি গোয়েন্দা প্রধান, জ্যেষ্ঠ কাতারি কর্মকর্তারা এবং হামাসের চারজন জ্যেষ্ঠ নেতা, যারা এই আলোচনায় জড়িত ছিলেন। হামাস দলের নেতৃত্বে ছিলেন খলিল আল-হায়া, যিনি তিন সপ্তাহ আগে দোহায় ইসরায়েলি গুপ্তহত্যার চেষ্টা থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন।
প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে চলা এই বৈঠকে উইটকফ হামাসের কর্মকর্তাদের বলেন, জিম্মিরা এখন তাদের জন্য 'সম্পদের চেয়ে বেশি দায়'। তিনি আরও বলেন, এখন চুক্তির প্রথম ধাপে এগিয়ে যাওয়ার এবং 'সীমান্তের উভয় পাশের মানুষকে ঘরে ফিরিয়ে আনার' সময় এসেছে।
আল-হায়া উইটকফ ও কুশনারকে প্রশ্ন করেন, তাদের কাছে ট্রাম্পের কোনো বার্তা আছে কিনা। জবাবে উইটকফ বলেন, 'প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বার্তা হলো, আপনাদের সঙ্গে ন্যায্য আচরণ করা হবে এবং তিনি তার ২০-দফা শান্তি পরিকল্পনার সবকটি পয়েন্টের প্রতিই সমর্থন দেন এবং নিশ্চিত করবেন যে সেগুলো বাস্তবায়িত হয়।'
বৈঠক শেষ হওয়ার পর হামাস নেতারা মিশরীয়, কাতারি ও তুর্কি মধ্যস্থতাকারীদের সাথে একটি আলাদা কক্ষে যান। কয়েক মিনিট পর মিশরীয় গোয়েন্দা প্রধান হাসান রশাদ তার তুর্কি ও কাতারি প্রতিপক্ষের সাথে ফিরে এসে উইটকফ ও কুশনারকে জানান, 'আমরা মাত্র যে বৈঠক করেছি, তার ভিত্তিতে আমাদের একটি চুক্তি হয়েছে।'
শার্ম আল-শেখের এই বৈঠকটি ছিল ট্রাম্প প্রশাসন এবং হামাসের মধ্যে দ্বিতীয় উল্লেখযোগ্য সরাসরি যোগাযোগ। গত মার্চ মাসে মার্কিন জিম্মি বিষয়ক দূত অ্যাডাম বোহলার দোহায় হামাস নেতাদের সঙ্গে অভূতপূর্ব বৈঠক করেছিলেন।
এর উদ্দেশ্য ছিল আমেরিকান জিম্মি ইদান আলেকজান্ডারকে মুক্ত করা এবং হামাসের হাতে অপহৃত অন্য চার আমেরিকান নাগরিকের মরদেহ উদ্ধার করা। ইসরায়েল সরকারের প্রবল আপত্তির কারণে সেই চুক্তিটি প্রাথমিকভাবে সফল হয়নি, কারণ তারা সরাসরি আলোচনার বিষয়টি জানত না।
সূত্রগুলো বলছে, রাজনৈতিক ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও উইটকফ ও কুশনারের হামাস নেতাদের সঙ্গে দেখা করার এই সদিচ্ছা গোষ্ঠীটিকে এটা বোঝাতে সক্ষম হয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্র একটি চুক্তি কার্যকর করতে এবং তা বাস্তবায়ন করতে কতটা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সূত্রগুলোর মতে, 'এ কারণেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দূতেরা যখন তাদের কথা দিয়েছিলেন যে এই চুক্তি সম্পূর্ণরূপে কার্যকর করা হবে, তখন হামাস তা বিশ্বাস করেছিল।'