দিল্লিতে তালেবান মন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে রাখা হয়নি কোনো নারী সাংবাদিক, দায় নিচ্ছে না ভারত সরকার

দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার লক্ষ্যে আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি ছয় দিনের সফরে ভারতে এসেছেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকের পর শুক্রবার দিল্লির আফগান দূতাবাসে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন তিনি। ওই সংবাদ সম্মেলনে হাতে গোনা কয়েকজন সাংবাদিককে দেখা গেলেও, দেখা যায়নি কোনো নারী সাংবাদিককে। অভিযোগ উঠেছে, অনুমতি মেলেনি আফগানদের পক্ষ থেকে। এনিয়ে ভারতজুড়ে চলছে তোলপাড়।
নারী সাংবাদিকদের অনুপস্থিতিকে 'অগ্রহণযোগ্য' এবং 'নারীদের জন্য অপমানজনক' বলে অভিহিত করে সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছে কংগ্রেসসহ বিরোধী দলগুলো। তারা এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে তার অবস্থান স্পষ্ট করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে।
বিতর্কের মুখে শনিবার (১১ অক্টোবর) এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ ব্যাপারে তাদের কোনো হাত নেই।
বিবৃতিতে বলা হয়, 'অনুষ্ঠানটি আফগান দূতাবাসে অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং এর আয়োজন করেছে সফররত আফগান প্রতিনিধিদল। গণমাধ্যমকর্মী আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়টি সম্পূর্ণ তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত ছিল। এতে আমাদের কোনো ভূমিকা ছিল না।'
তবে এ বিষয়ে অবগত সূত্র জানিয়েছে, অনুষ্ঠানে নারী সাংবাদিকদেরও আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ভারতীয় পক্ষ থেকে আফগান পক্ষকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তালেবান কর্মকর্তারাই নিয়েছেন বলে জানা যায়।
ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর শনিবার কংগ্রেসসহ ভারতের বিরোধী দলগুলো তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায়।
কংগ্রেস বলেছে, দিল্লিতে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ভারত সরকার 'নারী সাংবাদিকদের ওপর নিষেধাজ্ঞায়' সম্মত হয়েছে, যা অত্যন্ত মর্মান্তিক ও অগ্রহণযোগ্য।
কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র বলেন, 'যদি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নারী অধিকার রক্ষার অবস্থান কেবল নির্বাচনী কৌশল না হয়, তবে ভারতের মাটিতে আমাদের সবচেয়ে দক্ষ নারী সাংবাদিকদের প্রতি এই অপমান কেন ঘটতে দেওয়া হলো?'
কংগ্রেসের যোগাযোগবিষয়ক সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, 'ভারতের রাজধানীতে তালেবান নারী সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিল—এটি অত্যন্ত লজ্জাজনক ও অগ্রহণযোগ্য। সরকার এ ঘটনার অনুমতি দিল কীভাবে, তাও আবার আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবসের প্রাক্কালে!'
নারীদের অধিকার সংকোচনের কারণে আফগানিস্তানে তালেবান সরকারের সমালোচনা করে আসছে জাতিসংঘসহ নানা আন্তর্জাতিক সংস্থা। তবে দিল্লির সংবাদ সম্মেলনে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি সরাসরি জবাব এড়িয়ে যান।
তিনি বলেন, 'প্রতিটি দেশেরই নিজস্ব রীতি, আইন ও নীতি রয়েছে—এগুলোকে সম্মান করা উচিত।' তার দাবি, ২০২১ সালের আগস্টে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর আফগানিস্তানের সামগ্রিক পরিস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে।
মুত্তাকি বলেন, 'তালেবান শাসনের আগে প্রতিদিন ২০০ থেকে ৪০০ জন মানুষ মারা যেত। গত চার বছরে এমন ঘটনা ঘটেনি। দেশে আইন কার্যকর আছে, সবাই তাদের অধিকার পাচ্ছে। যারা অপপ্রচার চালাচ্ছে, তারা ভুল করছে।'
তিনি আরও বলেন, 'যদি মানুষ এই ব্যবস্থায় অসন্তুষ্ট হতো, তবে দেশে শান্তি ফিরত না। প্রতিটি দেশ তাদের নিজস্ব আইন ও রীতিনীতির ভিত্তিতে পরিচালিত হয়।'