চাহিদার তুলনায় বেশি ডিমের উৎপাদন, তবু সংকটে খামারিরা

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) পরামর্শ অনুযায়ী, বছরে মাথাপিছু ১০৪টি ডিম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এই হিসাবে দেশে বছরে ডিমের প্রয়োজন ১৮৫ কোটি। তবে বাংলাদেশ এই চাহিদা ছাড়িয়ে ৫৯.৬৫ কোটি ডিম বেশি উৎপাদন করছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে বছরে ডিম উৎপাদন হয় ২৪৪.৬৫ কোটি। এর মধ্যে বাণিজ্যিক খামারগুলো থেকে দৈনিক ৩.৫ থেকে ৪ কোটি ও গ্রামীণ পরিবারগুলো থেকে ২ থেকে ২.৫ কোটি ডিম আসে।
২০১৫-১৬ অর্থবছরে ডিমের উৎপাদন ছিল ১১৯.২৪ কোটি। গত এক দশকে দেশে উৎপাদন বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি।
এর ফলে মাথাপিছু ডিমের প্রাপ্যতা এক দশক আগের ৩৫টি থেকে বেড়ে ১৩৭টিতে দাঁড়িয়েছে। এ হিসাবে বাংলাদেশ ডিমে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। কিন্তু এরপরেও ক্ষুদ্র খামারিরা টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছেন।
গত বছর একদিন বয়সী লেয়ার মুরগির বাচ্চার সংকট, খাদ্য ও ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি এবং ডিমের কম দামের কারণে অনেক খামারি ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন। খাতসংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, গত এক বছরে ২০-২৫ শতাংশ খামার বন্ধ হয়ে গেছে। এর আগে কোভিড মহামারির সময় প্রায় ৩০ শতাংশ খামার বন্ধ হয়েছিল।
দেশে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত মিলিয়ে ৫০ হাজারের বেশি খামারের মধ্যে মাত্র ১০-১২ শতাংশ কর্পোরেট মালিকানাধীন; বাকিগুলো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের। অনেকেই বাজারের অস্থিরতা ও ক্রমবর্ধমান উৎপাদন খরচে হিমশিম খাচ্ছেন।
রাউজানের খামারি দেবাশীষ ভট্টাচার্য টিবিএসকে বলেন, 'শুধু গত বছরেই বাচ্চার সংকট ও উৎপাদন খরচ বাড়ায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ খামার বন্ধ হয়েছে। এর ওপর বাচ্চার মান খারাপ। আমার প্রায় ৩০ শতাংশ বাচ্চা মারা গেছে। তাদের প্রোডাক্টিভিও কম। উৎপাদন বাড়লেও ছোট খামারিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে এটা টেকসই উন্নয়ন বলা যাবে না।'
বাংলাদেশ এগ প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তাহের আহমেদ সিদ্দিকী খামারি ও এই খাতের কর্মসংস্থান রক্ষায় নীতি সহায়তার ওপর জোর দেন।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ২০৩১ সালের মধ্যে মাথাপিছু ডিমের প্রাপ্যতা ১৬৫টি এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ২০৮টিতে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু উৎপাদন বাড়ালেই হবে না—খামারি সুরক্ষা, বাজার নিয়ন্ত্রণ, উৎপাদন খরচ কমানো এবং ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে না পারলে ডিম উৎপাদনের এই সাফল্য দীর্ঘস্থায়ী হবে না।