বাংলাদেশকে ই-কমার্স হাবে পরিণত করে অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনতে চায় বিএনপি: এফটিকে তারেক রহমান

বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, কেবল তৈরি পোশাক রপ্তানির ওপর নির্ভরশীলতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে বাংলাদেশকে, এজন্য বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নতুন খাতগুলোর দিকে এগোতে হবে। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক পরিকল্পনার কিছু দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, 'শুধু পোশাক রপ্তানির ওপর নির্ভর না করে আমাজন, ই-বে ও আলিবাবার মতো ই-কমার্স জায়ান্টদের সরবরাহকেন্দ্র হতে পারে বাংলাদেশ।'
প্রভাবশালী ব্রিটিশ দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল টাইমস (এফটি)–কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, যা আজ সোমবার (৬ অক্টোবর) প্রকাশিত হয়েছে। এই সাক্ষাৎকারে তারেক রহমান আরও বলেছেন, তাঁর দল ক্ষমতায় গেলে ভারতের সঙ্গে 'সবার আগে বাংলাদেশ' পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করবে, যা শেখ হাসিনার সময়কার 'একপেশে' সম্পর্ককে পুনর্গঠন করবে।
২০০৮ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত জীবন কাটানো তারেক রহমান বলেন, তিনি শিগগিরই দেশে ফিরে আসবেন এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবেন। "আমরা আত্মবিশ্বাসী যে জিতব। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এককভাবে সরকার গঠন করতে পারব। আমি মনে করি, বাংলাদেশের মাটিতে আমার ফেরার সময় এখন খুব কাছে।"
তারেক রহমান বলেন, গত বছরের জুলাই মাসে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে যে গণ-অভ্যুত্থান শেখ হাসিনার "স্বৈরশাসন"কে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল, সেই আন্দোলনের লক্ষ্য তখনই পূর্ণতা পাবে, যখন দেশে অবাধ ও "বিশ্বাসযোগ্য" নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমস লিখেছে, বাংলাদেশের পরবর্তী সরকারকে একটি নাজুক অর্থনৈতিক বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হবে—বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপে দেশের তৈরি পোশাক খাত ক্ষতিগ্রস্ত, এবং প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সম্পর্কও উত্তেজনাপূর্ণ, যেখানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে অবস্থান করছেন।
ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পর বিএনপি'রই সরকার গঠন করার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি বলে বিভিন্ন জরিপে উঠে এসেছে, আর তারেক রহমানকেই ব্যাপকভাবে সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে দেখা হচ্ছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার—যার প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূস—ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে।
সাক্ষাৎকারে তারেক রহমান ড. ইউনূসের বক্তব্য প্রতিধ্বনিত করে বলেন, আওয়ামী লীগ একটি "ফ্যাসিস্ট" দল। তিনি আরও বলেন, বিএনপি অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকার গঠনে প্রস্তুত, বিশেষত গত বছরের ছাত্র আন্দোলনের অগ্রভাগে থাকা নেতাদের নিয়ে গঠিত নতুন রাজনৈতিক দলটির সঙ্গেও।
"আমরা তাদের রাজনীতিতে স্বাগত জানাব, তারা তরুণ, তাদের ভবিষ্যৎ আছে" - তিনি এফটি'কে বলেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের জ্যেষ্ঠ পুত্র তারেক রহমান দাবি করেন, তাঁর বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির মামলাগুলো ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি বলেন, বিএনপি সরকারে এলে প্রতিহিংসার চক্র বন্ধ করবে, এবং দলটি ইতোমধ্যেই ২০২৪ সালের আগস্টের পর থেকে দুর্নীতির অভিযোগে ৭,০০০ জন নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার বা শাস্তি দিয়েছে।
তবে আওয়ামী লীগকে পুনরায় রাজনীতিতে ফিরে আসার সুযোগ দেওয়া হবে কি না—এই প্রশ্নে তিনি সরাসরি জবাব দেননি। বরং তিনি বর্তমানে বিভিন্ন মামলায় আওয়ামী নেতাদের অভিযুক্ত থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, "যদি তারা অপরাধী হিসেবে দণ্ডিত হয়, তাহলে আওয়ামী লীগ কীভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে?"
তারেক রহমান আরও বলেন, তাঁর সরকার ক্ষমতায় এলে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠদের মাধ্যমে বিদেশে পাচার করা বলে অভিযোগ থাকা শত শত কোটি ডলার ফেরত আনতে বর্তমান ইউনূস প্রশাসনের উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।
তবে বিএনপি'র আগের আমলে (২০০১–২০০৬) বাংলাদেশ টানা পাঁচ বছর বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের তালিকায় ছিল।
এছাড়া, এফটি'র প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৮ সালে ফাঁস হওয়া একটি মার্কিন কূটনৈতিক বার্তায় তারেক রহমানকে বর্ণনা করা হয়েছিল "দুর্নীতিগ্রস্ত শাসন ও সহিংস রাজনীতির প্রতীক"হিসেবে, এবং সেখানে বলা হয় যে তিনি ঘুষ নেওয়ার জন্য "প্রকাশ্য ও নিয়মিতভাবে কুখ্যাত" ছিলেন।
এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তারেক রহমান স্বীকার করেন, "যে কোনো সরকারেরই কিছু দুর্বলতা থাকে," তবে তিনি দাবি করেন, বিএনপি সরকারের সময়ই বাংলাদেশে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রতিষ্ঠা করা হয়—যা প্রমাণ করে তাঁদের দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের গণমাধ্যমে তাঁর বিরুদ্ধে "মিথ্যা বয়ান" প্রচার করা হয়েছিল, যা পরবর্তীতে সেই মার্কিন কূটনৈতিক বার্তার ভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। "আমার বিরুদ্ধে আনা সব মামলাই এখন বাতিল হয়েছে," তিনি যোগ করেন।