ইন্টারনেট বন্ধ করে দিল তালেবান সরকার, আফগানিস্তানজুড়ে টেলিযোগাযোগ ব্ল্যাকআউট

আফগানিস্তানে তালেবান সরকার সারা দেশে টেলিযোগাযোগ সেবা বন্ধ করে দিয়েছে। কয়েক সপ্তাহ আগে তারা 'অশ্লীলতা রোধ' করতে ফাইবার-অপটিক ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা শুরু করেছিল। বিষয়টি জানিয়েছে বিবিসি।
ইন্টারনেট নজরদারি সংস্থা নেটব্লক্স জানিয়েছে, দেশটি এখন সম্পূর্ণ ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট'-এর মধ্যে রয়েছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলো জানিয়েছে, তারা রাজধানী কাবুলে তাদের অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়েছে। দেশজুড়ে মোবাইল ইন্টারনেট ও স্যাটেলাইট টিভি সেবাও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে।
২০২১ সালে ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে তালেবানরা শরিয়াহ আইনের ভিত্তিতে একের পর এক বিধিনিষেধ জারি করেছে।
এক তালেবান কর্মকর্তা জানিয়েছেন, টেলিযোগাযোগ সেবা 'পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত' বন্ধ থাকবে।
বেসরকারি আফগান টেলিভিশন চ্যানেল টোলো নিউজ জানিয়েছে, তাদের টেলিভিশন ও রেডিও সম্প্রচারে বিঘ্ন ঘটতে পারে। তাই তারা দর্শকদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নজর রাখার আহ্বান জানিয়েছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, কাবুল বিমানবন্দর থেকেও ফ্লাইট চলাচল ব্যাহত হয়েছে। ফ্লাইট ট্র্যাকিং সেবা ফ্লাইটরাডার২৪-এর তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার কাবুল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে অন্তত আটটি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।
স্থানীয় সময় বিকাল ৫টার দিকে কাবুলের কয়েকজন বাসিন্দা বিবিসিকে জানিয়েছেন, তাদের ফাইবার-অপটিক ইন্টারনেট হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে ব্যাংকিং কার্যক্রম ও অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুললে মঙ্গলবার সকালের দিকে প্রকৃত প্রভাব অনেকেই টের পাবেন।
ফাইবার-অপটিক কেবল অত্যন্ত দ্রুত গতিতে ডাটা স্থানান্তর করে এবং বিশ্বের অধিকাংশ ইন্টারনেট সেবায় এ প্রযুক্তি ব্যবহার হয়।
নেটব্লক্স সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মাস্টোডন.সোশ্যালে জানিয়েছে, 'আফগানিস্তান বর্তমানে পূর্ণাঙ্গ ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের মধ্যে রয়েছে। তালেবান কর্তৃপক্ষ নৈতিকতার বিধিনিষেধ কার্যকর করার অংশ হিসেবে ধাপে ধাপে একাধিক নেটওয়ার্ক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে। টেলিফোন সেবাও এখন ক্ষতিগ্রস্ত।'
কয়েক সপ্তাহ ধরে আফগানিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশের মানুষ ধীরগতির ইন্টারনেট বা সম্পূর্ণ সংযোগহীনতার অভিযোগ করে আসছেন।
তালেবান আগেই জানিয়েছিল, বিকল্প পথে ইন্টারনেট সংযোগের ব্যবস্থা করা হবে। তবে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
সেসময় ব্যবসায়ীরা সতর্ক করেছিলেন, ইন্টারনেট বন্ধ থাকলে তাদের কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আফগান টেলিভিশন চ্যানেল ওয়ানটিভির সাবেক সম্পাদক হামিদ হায়দারি বলেন, 'ইন্টারনেট বন্ধ হওয়ার পর গোটা দেশ একাকিত্বে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। আফগানিস্তান এখন আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে ইন্টারনেট বিচ্ছিন্নতার প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান দখল করেছে।'
যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত আফগান সংসদের সাবেক সদস্য মারিয়াম সোলায়মানখিল এক পোস্টে লিখেছেন, 'আফগানিস্তানের ভেতর থেকে আফগান কণ্ঠস্বর ছাড়া অনলাইনের নীরবতা আরও বেশি কানে লাগে।' তিনি পোস্টে ইলন মাস্ককেও ট্যাগ করেছেন।
আফগানিস্তানে আবারও তালেবানরা ক্ষমতায় ফেরার পর নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা চালু হয়েছে। এর মধ্যে সর্বশেষ বিদ্যুৎ বন্ধের ঘটনা ঘটেছে।
এই মাসের শুরুতে তারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে নারী লেখকদের বই সরিয়ে দিয়েছে। এছাড়া মানবাধিকার ও যৌন হয়রানির ওপর শিক্ষা দেওয়াও বন্ধ করা হয়েছে।
নারী ও কন্যা শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তারা ১২ বছরের পর স্কুলে যেতে পারছেন না। শেষ সুযোগের একটি পথ—'মিডওয়াইফ' কোর্সও ২০২৪ সালের শেষে বন্ধ হয়ে গেছে।
তালেবান ২০২১ সালে মার্কিন ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক বাহিনী চলে যাওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দ্রুত আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে।