এলজিইডির সড়ক ও সেতুর তিন প্রকল্পে ৩৪৩ কোটি টাকা উধাও, কাজের বাস্তবায়নই নেই

কাগজে-কলমে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার নদমূল্লা ইউনিয়নের নদমূল্লা মাদরাসা হাট–চিংগুড়িয়া–কলোনি বাজার সড়কে ৩০ মিটার দীর্ঘ একটি আরসিসি গার্ডার ব্রিজ রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে নির্ধারিত স্থানে সেতুটির কোনো অস্তিত্ব নেই।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে "দেশের দক্ষিণাঞ্চলে আয়রন ব্রিজ পুনঃনির্মাণ" প্রকল্পের আওতায় এ সেতু নির্মাণে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ৩.৭১ কোটি টাকার চুক্তি সই হয়। এই কাজের কোনো অগ্রগতি না থাকলেও ৯৫ শতাংশ অগ্রগতি দেখিয়ে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) এই প্রকল্প থেকে ঠিকাদারকে ৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা পরিশোধও করা হয়েছে। অথচ সেতুটি আজও গড়ে ওঠেনি।
ভান্ডারিয়ার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিরাজুল ইসলামের মালিকানাধীন ইফতি ইটিসিএল প্রাইভেট লিমিটেড এ কাজ পায়। মিরাজুল ইসলাম বিগত আওয়ামী সরকারের সময়ে পিরোজপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য থাকা মহিউদ্দিন মহারাজের ভাই। ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এই ব্রিজের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও—তা করেনি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।
একই সড়কে ৩০ মিটার দৈর্ঘ্যের আরো একটি সেতুরও কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এটিরও ২০২২ সালেই নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। ঠিকাদার হিসাবে কাজটি পায় মেসার্স ইশান এন্টারপ্রাইজ। এই প্রতিষ্ঠানটির মালিক মহিউদ্দিন মহারাজের আরেক ভাই সালাউদ্দিন।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) পরিদর্শনে গিয়ে শুধু এই দুই সেতুই নয়, আরও দুটি সেতুরও কোনো হদিস পায়নি। এগুলো হলো- চরখালি-মঠবাড়িয়া সড়কের বিনাপানি বাজার-চৌহুরিয়া বাজার এলাকায় ১৫ মিটার দীর্ঘ ব্রিজ এবং মালিয়ারহাট–নতুন নলবুনিয়া সড়কে ২৫ মিটার দীর্ঘ আরসিসি ব্রিজ।
টিবিএসের পক্ষ থেকেও সরেজমিনে গিয়ে ওই এলাকায় এসব ব্রিজের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। অথচ প্রকল্পের কাগজপত্রে এসব প্রকল্পের ৯০ থেকে ১০০ শতাংশ ভৌত অগ্রগতি দেখিয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে কাজের বিপরীতে বিল পরিশোধ করা হয়েছে। আইএমইডির প্রতিবেদন বলছে, প্রকল্পের অধীন অনেক প্যাকেজে কোনো কাজ না করেই ১২১ কোটি টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী আমলে নেওয়া দেশের দক্ষিণাঞ্চলে আয়রন ব্রিজ পুনঃনির্মাণসহ এলজিইডির আরো দুটি প্রকল্পের ভান্ডারিয়ার অংশের কাজ সরেজমিনে পরিদর্শন করে আইএমইডি। তিন প্রকল্পের ১৩৭টি প্যাকেজে কোনো কাজ না করেই ৩৪৩.৬৮ কোটি টাকা তুলে নেওয়ার তথ্যও উঠে এসেছে আইএমইডির প্রতিবেদনে। একেকটি প্যাকেজের আওতায় কোনো না কোনো সেতু, সড়ক বা অন্য কোনো অবকাঠামো নির্মাণের কথা ছিল।
দক্ষিণাঞ্চলে আয়রন ব্রিজ পুনঃনির্মাণ প্রকল্প ছাড়াও এর মধ্যে রয়েছে- "বরিশাল বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়ক প্রশস্তকরণ ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্প" এবং "পিরোজপুরের পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প।"এসব প্রকল্পের ভান্ডারিয়ার অংশে প্রায় সবগুলো স্কিমের কাজ পেয়েছে মহিউদ্দিন মহারাজের ভাইদের মালিকাধীন প্রতিষ্ঠান।
এসব প্রকল্পে আরো অধিকতর তদন্ত করে, স্কিম বাস্তবায়ন না করে— কী পরিমাণ বিল প্রদান করা হয়েছে তা পরিমাপ করে জড়িতদের কাছ থেকে আদায়ের ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে আইএমইডি। একইসঙ্গে প্রতিটি প্রকল্প পরিচালককে তার নিজ দায়িত্বে প্রতিটি স্কিম সরেজমিনে পরিদর্শন করে কী পরিমাণ কাজ হয়েছে এবং কী পরিমাণ ওভার পেমেন্ট করা হয়েছে— তার একটি তুলনামূলক বিবরণী তৈরির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিথ্যা তথ্য দেওয়ার কারণে প্রকল্প পরিচালকরা দায়ী থাকবেন।
স্থানীয় সরকার বিভাগকে উচ্চ পর্যায়ের টিম গঠন করে প্রকৃত আত্মসাৎকৃত অর্থের পরিমাণ নিরূপণ, দায়ীদের চিহ্নিতকরণ, অর্থ উদ্ধারের পদক্ষেপ ও প্রচলিত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশও করেছে আইএমইডি।
এরমধ্যে "বরিশাল বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পে" স্কিম বাস্তবায়ন না করে অর্থ আত্মসাতে জড়িতের বিরুদ্ধের ব্যবস্থা নিতে ১৩ মে এলজিইডিতে একটি চিঠি দেয় আইএমইডি। পিরোজপুর জেলার পল্লী অবকঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়মের ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেওয়া হয় ২৭ মার্চ। এবং আয়রন ব্রিজ প্রকল্পে দুর্নীতিতে জড়িতে বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেওয়া হয়েছে ৭ এপ্রিল।
জড়িতের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা— জানতে চাইলে এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন টিবিএস-কে বলেন, "এ বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে চিঠির বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হবে। প্রয়োজনে তদন্তের ব্যবস্থা করা হবে এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
এদিকে নাম না প্রকাশের শর্তে এলজিইডির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, "এই তিন প্রকল্পে অনিয়মের কোনো তথ্য এলজিইডির প্রধান কার্যালয় এবং উপজেলা এলজিইডির অফিসে পাওয়া যায়নি। তবে জেলা এলজিইডি অফিস এবং জেলা হিসাবরক্ষক অফিস এই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ছিল। প্রকল্প পরিচালকরা আগে জেলা হিসাবরক্ষক অফিসের মাধ্যমে স্থানীয় বরাদ্দ দিয়ে দেয়। আর এ সুযোগ নিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। ইতোমধ্যে এবিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ উত্থাপন করা করা হয়েছে।"
তবে প্রকল্প পরিচালকরা এর দায় এড়াতে পারেন না বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, "প্রকল্প পরিচালকদের উচিত ছিল, আগে সরেজমিনে কাজের অগ্রগতি দেখা, তারপর বিল পরিশোধে সম্মতি দেওয়া। কিন্তু এটা হয়নি।"
তিনি আরো বলেন, কাজ না করে পুরো টাকা হয়তো আত্মসাৎ করার অভিপ্রায় ছিল না ঠিকাদারদের। "২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান এবং সরকার পরিবর্তন না হলে হয়তো নিয়োগ পাওয়া ঠিকাদারা কাজ শেষ করত।"
কাজের অগ্রগতি শূন্য, তবু আয়রন ব্রিজ প্রকল্পে ৯৩টি কাজের বিল পরিশোধ
আইএমইডি পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আয়রন ব্রিজ পুনঃনির্মাণ প্রকল্পের প্রায় ৯৩টি প্যাকেজের ভৌত অগ্রগতি শূন্য হলেও, কর্মকর্তারা কাগজেকলমে ভৌত অগ্রগতি ৯০ - ১০০ শতাংশ দেখানোর পর ৮০ - ৮৫ শতাংশ চলতি বিল প্রদান করা হয়েছে।
এসব প্যাকেজের ঠিকাদারের সঙ্গে মোট ২২০.১৭ কোটি টাকার নির্মাণ চুক্তি করেছিল এলজিইডি। এরমধ্যে ২০৫.৬৩ কোটি টাকা উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে।
এক্ষেত্রে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বড় ধরণের আর্থিক অনিয়ম সংগঠিত হয়েছে। এ অনিয়মের সাথে এলজিইডির প্রকল্প বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী জড়িত বলে প্রতীয়মান হয়। বিষয়টি অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
প্রকল্পের ১১৯টি প্যাকেজ হেড ফর প্রকিউরিং এনটিটি বা হোপ এর অনুমোদন ছাড়াই অফ লাইনে দরপত্র আহবানের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস (পিপিআর) অনুযায়ী, প্রতিটি প্রোকিউরিং এনটিটির (যে দপ্তর/সংস্থা সরকারি ক্রয় কার্যক্রম সম্পন্ন করে) একজন প্রধান থাকেন। তিনি হচ্ছেন হোপ।
প্রকল্পটির অনুকূলে শুধুমাত্র পিরোজপুর জেলাতেই ২০১৯-২০ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত ৯২৩.৪৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। একটি প্রকল্পের আওতায় একটি জেলায় এ বরাদ্দ অতিরিক্ত বলে প্রতীয়মান হয়। কীভাবে এক জেলাতে এত বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তার দায়-দায়িত্ব এলজিইডি প্রধানের উপর বর্তায়। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে আইএমইডি।
এই বিষয়ে মন্তব্য জানতে প্রকল্পের পরিচালক শরিফুল জামাল অলোককে একাধিক দিন ফোন করেও পাওয়া যায়নি। প্রকল্প অফিসে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
কোনো কাজ না করেই ২১২ কোটি টাকার বিল পরিশোধ বরিশালের আরেক প্রকল্পে
"বরিশাল বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়ক প্রশস্তকরণ ও শক্তিশালীকরণ" প্রকল্পে ৩৮টি প্যাকেজের ভৌত অগ্রগতি শূন্য হলেও— কাগজেকলমে ভৌত অগ্রগতি ৯০ - ১০০ শতাংশ দেখিয়ে ৮০ - ৯৫ শতাংশ চলতি বিল প্রদান করা হয়েছে। কোনো কাজ না করেই এই প্রকল্প থেকে বিল পরিশোধ করা হয়েছে ২১২ কোটি টাকা।
আইএমইডির তার প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করেছে, এ অনিয়মের সাথে এলজিইডির প্রকল্প বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী জড়িত বলে প্রতীয়মান হয়। বিষয়টি অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে প্রণীত আইনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
আলোচ্য প্রকল্পটির অনুকূলে শুধুমাত্র পিরোজপুর জেলাতেই ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৫৮০.৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কেবল ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরেই বরাদ্দ দেওয়া হয় ৪৯৯.৫৪ কোটি টাকা। আইএমইডি বলছে, একটি প্রকল্পের আওতায় একটি জেলায় এ বরাদ্দ অতিরিক্ত বলে প্রতীয়মান হয়। কীভাবে এক জেলাতে এত বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তার দায়-দায়িত্ব স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধানের উপর বর্তায়।
এই প্রকল্পের পরিচালক আদনান আকতারুল আজম সম্প্রতি অবসরে যাওয়ায় বর্তমানে প্রকল্পের কোনো পরিচালক নেই। আদনান আকতারুল আজমের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।
পিরোজপুরে পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে ১৭ কোটি টাকা বিল, কাজ হয়নি
আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আলোচ্য প্রকল্পের প্রায় ৬টি প্যাকেজের ভৌত অগ্রগতি শূন্য শতাংশ হলেও ঠিকাদারদের ৮০ - ৯৫ শতাংশ বিল প্রদান করা হয়েছে, যার পরিমাণ ১৬.৮৫ কোটি টাকা। এছাড়া ৩৭টি প্যাকেজের ভৌত অগ্রগতির তুলনায় আর্থিক অগ্রগতি অনেক বেশি। এক্ষেত্রে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বড় ধরণের আর্থিক অনিয়ম সংগঠিত হয়েছে।
প্রকল্পটিতে ৪৫টি প্যাকেজে হোপ -এর অনুমোদন নেওয়া হয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী প্রশাসনিক এবং আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে আইএমইডি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এক অর্থবছরে একটি জেলায় কোনো প্রকল্পের সর্বোচ্চ কত টাকা খরচ হতে পারে তা প্রধান প্রকৌশলীর দেখা উচিত ছিল। যদি দিনরাত চব্বিশ ঘন্টাও কাজ চলে—তাতেও কোনো প্রকল্পের স্কিম বাবদ ১০০ কোটি টাকার বেশি খরচ হতে পারে না। এই জেলায় একটি প্রকল্পের খরচ তিন অর্থবছরে ৪২০.৬৩ কোটি টাকা। কাজেই এর দায়-দয়িত্ব সেই সময়ের প্রধান প্রকৌশলীদেরও রয়েছে।
এই প্রকল্পের পরিচালক ইব্রাহিম খলিলকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেননি।
সরেজমিনে টিবেএসের অনুসন্ধান
পিরোজপুরের নদমূল্লা ইউনিয়নের বাসিন্দা কামাল হাওলাদার টিবিএসকে বলেন, "এখানে ২০১৬ সালে একটি সেতু হয়েছিল। এরপর নতুন করে আরেকটি সেতুর কথা ছিল। প্রায় দেড় বছর আগে কয়েকজন ইঞ্জিনিয়ার এসে মাপজোখ করে গেছেন। সড়কের কাজও ধরেছিল। তারপর আর কোন খোঁজ নেই।"
এলাকাবাসী জানান, শুধু এই ব্রিজই নয়, এলাকায় অনেক ব্রিজ, সড়কে দরপত্র আহ্বানের কথা জানা গেলেও বাস্তবে এসব অবকাঠামোর উন্নয়ন হয়নি। এতে জনদুর্ভোগ আরও বেড়েছে।
স্থানীয় এলজিইডি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, সাবেক এমপি মহিউদ্দিন মহারাজের সরাসরি হস্তক্ষেপে, জেলায় সরকারের সব প্রকল্পে লুটপাট করেছে তার পরিবারের লোকজন। প্রায়ই কোনো কাজ না করেই টাকা তুলে নেওয়া হতো।
এলজিইডির প্রায় সবগুলো কাজই তার এবং তার ভাইয়ের প্রতিষ্ঠানগুলো পেতো। মহিউদ্দিন মহারাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স তেলিখালি এন্টারপ্রাইজ, মেজ ভাই মিরাজুল ইসলামের মালিকানাধীন মেসার্স ইফতি ইটিসিএল প্রাইভেট লিমিটেড, সেজ ভাই শামসুদ্দিনের মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স তেলিখালি কনস্ট্রাকশন এবং ছোট ভাই সালাউদ্দিনের মালিকানাধীন মেসার্স ইশান এন্টারপ্রাইজ।
স্থানীয় এলজিইডি অফিসের কর্মকর্তারা জানান, পিরোজপুর এলজিইডির সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুস সাত্তার, হিসাবরক্ষক মোজাম্মেল হক খানসহ অন্যান্য কর্মকর্তার যোগসাজশে কাজ না করেই মহিউদ্দিন মহারাজের ভাইয়েরা টাকা তুলে নিয়ে গেছে।
এরমধ্যে দুর্নীতির মামলায় কারাগারে থাকা অবস্থায় চলতি বছরের জুলাই মাসে মারা যান মোজাম্মেল হক। আব্দুস সাত্তারের বিরুদ্ধে দুদকে মামলা হওয়ার পর থেকে তিনি আত্মগোপনে চলে যান। এছাড়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিকরা ও সাবেক এমপি পলাতক থাকায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
পিরোজপুর এলজিইডির বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আজিজুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, বিগত সময়ে মহিউদ্দিন মহারাজ ও তার ভাইদের আতঙ্কে থাকতেন তারা। আওয়ামী লীগের পতনের পরও সেই আতঙ্ক কাটেনি। এখন নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে দুর্নীতির মামলায় ফাঁসানোর।