জুলাই অভ্যুত্থানের পর দুর্নীতি কমলেও পুরোপুরি নির্মূল হয়নি: টিআই প্রধান ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়াঁ

জুলাই আন্দোলনের পরও দেশ পুরোপুরি দুর্নীতিমুক্ত হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) চেয়ারম্যান ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়াঁ। তিনি বলেন, দুর্নীতি এখনও আছে। তবে এটা বেড়েছে নাকি কমেছে—তা এখনই বলাটা অনেক দ্রুত হয়ে যাবে।
বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। টিআই চেয়ারম্যানের বাংলাদেশ সফর উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
ভ্যালেরিয়াঁ বলেন, 'আমাদের জানতে হবে অর্থ কোথায় আছে, কারা এর প্রকৃত মালিক। কেবল তখনই আন্তর্জাতিক সহযোগিতা পুনরুদ্ধার নিশ্চিত করতে পারবে।'
আওয়ামী লীগ আমলের শাসনকে 'স্বৈরাচারী ও ব্যাপক দুর্নীতিগ্রস্ত' হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, 'ক্ষমতার অপব্যবহার করা হয়েছে জনগণের সেবা করার পরিবর্তে মুনাফা অর্জনের জন্য।'
'বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার প্রতি বছর পাচার হয়েছে এবং দুর্নীতির বৈশ্বিক অর্থনীতির অংশ হয়ে উঠেছে', যোগ করেন তিনি।
টিআই-এর অনুমান অনুযায়ী, এসব অবৈধ অর্থের বেশিরভাগই অফশোর অ্যাকাউন্ট, ক্রিপ্টোকারেন্সি প্ল্যাটফর্ম এবং ট্যাক্স হেভেনের মাধ্যমে দুবাই, সিঙ্গাপুর, হংকং, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো আর্থিক কেন্দ্রগুলোতে স্থানান্তরিত হয়েছে।
এই অর্থ শিক্ষা, স্বাস্থ্য বা জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতার মতো জনকল্যাণমূলক খাতে বিনিয়োগ না হয়ে প্রধানত রিয়েল এস্টেট এবং বিলাসবহুল সম্পত্তিতে বিনিয়োগ করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন ভ্যালেরিয়াঁ।
সম্প্রতি লন্ডনে ১৮৫ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের সম্পত্তি জব্দ হওয়ার একটি সফল ঘটনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, 'এটি প্রমাণ করে যে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ফলাফল দিতে পারে। কিন্তু এখন মূল চ্যালেঞ্জ হলো ক্ষতিপূরণ — নিশ্চিত করা যে চুরি করা অর্থ বাংলাদেশের জনগণের কাছে ফিরে আসে, বিদেশি কোষাগার সমৃদ্ধ না হয়।'
তিনি আরও বলেন, সম্পদ পুনরুদ্ধার অবশ্যই বাংলাদেশের জনগণের জন্য ক্ষতিপূরণের দিকে পরিচালিত করতে হবে। আমরা চাই না বাজেয়াপ্ত অর্থ উত্তরের কোষাগার সমৃদ্ধ করুক। এটি সুশীল সমাজের নজরদারিতে নাগরিকদের কাছে ফিরে যেতে হবে।
টিআই চেয়ারম্যান বাংলাদেশে উপকারী মালিকানা স্বচ্ছতা সংক্রান্ত একটি খসড়া আইন অবিলম্বে পাসেরও আহ্বান জানিয়েছেন। এই আইন শেল কোম্পানিগুলোর পেছনে থাকা প্রকৃত ব্যক্তিদের উন্মোচন করবে, যা প্রায়শই অবৈধ অর্থ পাচারের জন্য ব্যবহৃত হয়।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, 'আমাদের জানতে হবে সম্পদ কোথায় এবং কার মালিকানাধীন। কেবল তখনই সুশীল সমাজ পুনরুদ্ধারের জন্য চাপ দিতে পারবে।'
টিআই প্রধান আরও বলেন, 'বাংলাদেশ একটি ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে রয়েছে। নাগরিকদের আত্মত্যাগ বৃথা যেতে দেওয়া উচিত নয়। চুরি করা সম্পদ পুনরুদ্ধার করা যেমন ন্যায়বিচারের বিষয়, তেমনি গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতার ভিত্তিও বটে।'