বিবিএস জরিপ: সরকারি সেবা পেতে ঘুষ দেওয়ায় শীর্ষে নোয়াখালী, সর্বনিম্ন চাঁপাইনবাবগঞ্জ
২০২৪ সালে সরকারি সেবা পেতে সবচেয়ে বেশি ঘুষ দেওয়া হয়েছে নোয়াখালী জেলায় এবং আর সবচেয়ে কম ঘুষ দেওয়া হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস)।
আজ বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বিবিএস মিলনায়তে প্রকাশিত সিটিজেন পারসেপশন সার্ভে (সিপিএস) ২০২৫- এর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায় সংস্থাটি।
জরিপে দেখা যায়, নোয়াখালীতে ঘুষ দেওয়ার হার সর্বোচ্চ ৫৭.১৭ শতাংশ, এরপরই রয়েছে কুমিল্লায় ৫৩.৪৭ শতাংশ, ফরিদপুরে ৫১.৭০ শতাংশ, ভোলা ৪৯.০১ শতাংশ এবং সিরাজগঞ্জে ৪৮.৩৭ শতাংশ।এসব জেলায় সরকারি সেবা পেতে যোগাযোগকারীদের প্রায় অর্ধেক বা তার বেশি নাগরিক ঘুষ দেওয়ার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন।
এসব জেলায় সরকারি সেবা পেতে যোগাযোগকারীদের অর্ধেকেরও বেশি কোনো না কোনোভাবে ঘুষের মুখোমুখি হয়েছেন। বিশেষ করে ভূমি, পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন সংশ্লিষ্ট সেবায় ঘুষের অভিযোগ বেশি এসেছে।
অন্যদিকে, কিছু জেলায় ঘুষের প্রবণতা তুলনামূলকভাবে অনেক কম।
জরিপ অনুযায়ী, চাপাইনওয়াবগঞ্জে ঘুষ দেওয়ার হার মাত্র ১০.৪৯ শতাংশ, মাগুরায় ১৩.৯৮ শতাংশ, লালমনিরহাটে ১৪.৫০ শতাংশ, গাজীপুরে ১৫.২৪ শতাংশ এবং সিলেটে ১৫.৬১ শতাংশ।
শীর্ষ ও তলানির জেলার মধ্যে পার্থক্য প্রায় ৪৭ শতাংশ পয়েন্ট, যা জেলা পর্যায়ে দুর্নীতির মাত্রায় গভীর বৈষম্য তুলে ধরে এবং লক্ষ্যভিত্তিক সংস্কার ও নজরদারির প্রয়োজনীয়তার কথা জোরালোভাবে নির্দেশ করে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, জেলাভিত্তিক এই ব্যবধান প্রশাসনিক সক্ষমতা, সেবার ডিজিটালাইজেশন, স্থানীয় তদারকি এবং নাগরিক সচেতনতার তারতম্যের প্রতিফলন।
তারা বলছেন, যেসব জেলায় ঘুষের হার বেশি, সেখানে লক্ষ্যভিত্তিক সংস্কার, সেবাদান প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং জেলা প্রশাসনের জবাবদিহি জোরদার করা জরুরি।
জেলা পর্যায়ে এই তথ্য ব্যবহার করে নীতিনির্ধারকরা আলাদা আলাদা অ্যাকশন প্ল্যান নিলে ঘুষ ও দুর্নীতি কমানোর বাস্তব সুযোগ তৈরি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিবিএস ২০২৫ সালের ৬-২৩ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী 'সিটিজেন পারসেপশন সার্ভে (সিপিএস)' পরিচালনা করে।
৬৪ জেলার ১ হাজার ৯২০টি প্রাইমারি স্যাম্পলিং ইউনিট (টিএসইউ) থেকে ৪৫ হাজার ৮৮৮টি খানার ১৮ বছর ও তদুর্ধ্ব বয়সী মোট ৮৪ হাজার ৮০৭ জন উত্তরদাতার সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
তবে বিবিএস বলছে, এই চিত্র বছরের অন্য সময়ের সঙ্গে মিলবে না। কারণ এসময়ে দেশের পরিস্থিতিও অনেক পরিবর্তন হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে জরিপের প্রতিবেদন প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সাচিব আলেয়া আক্তার।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা বিভাগের সচিব এস এম শাকিল আখতার এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মাসুদ রানা চৌধুরী।
