আমন সংগ্রহে কোনো প্রকার দুর্নীতি বরদাশত করা হবে না: খাদ্য উপদেষ্টা
খাদ্য ও ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেছেন, চলমান আমন মৌসুমের ধান-চাল সংগ্রহ কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে, যা আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সকলকেই এ সময়ের মধ্যে আমন মৌসুমের ধান ও চাল সংগ্রহ করতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো রকম অনিয়ম বা দুর্নীতি হলে তা বরদাশত করা হবে না, গ্রহণ করা হবে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) কুমিল্লা সার্কিট হাউস মিলনায়তনে কুমিল্লা জেলার ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের আমন সংগ্রহ ও খাদ্যশস্য মজুদ বিষয়ক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সামনে জাতীয় নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি আরও বলেন, 'ফেব্রুয়ারি যেহেতু জাতীয় নির্বাচনের জন্য নির্ধারিত। সুতরাং আমাদের মাঠ প্রশাসনের সাথে যত ডিপার্টমেন্ট আছে জেলা প্রশাসক তো বটেই, এছাড়া খাদ্য ডিপার্টমেন্টের লোকেরাও কিন্তু নির্বাচন কাজের সাথে জড়িত থাকবে। কেউ প্রিসাইডিং অফিসার হবে কেউ পোলিং অফিসার হবে। ফলে ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই চেষ্টা করতে হবে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী উল্লেখযোগ্য সংগ্রহ অভিযান সম্পন্ন করতে। এটাকে গুরুত্বের সাথে দেখতে হবে। খাদ্য অধিদপ্তর এবং খাদ্য মন্ত্রণালয় এক্ষেত্রে সকল প্রকার সহযোগিতা করবে।'
সংগ্রহ অভিযানে লক্ষ্যমাত্রা ও আমদানির বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, 'সংগ্রহের টার্গেট সম্পন্নকারী মিলারদের অতিরিক্ত বরাদ্দ প্রদান করতে হবে। আমরা যত বেশি সংগ্রহ করতে পারব তত বেশি বিদেশ থেকে আমদানি নির্ভরতা কমাতে পারব। আমাদের চেষ্টা থাকবে শুধুমাত্র টার্গেট পূরণ না, সর্বোচ্চ পরিমাণে সংগ্রহ করার। দেশের ইতিহাসে এবছর বোরোতে আমরা রেকর্ড পরিমাণ সংগ্রহ করেছি৷ সুতরং দেশের জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে।'
কৃষকদের অগ্রাধিকার ও চালের মানের বিষয়ে হুঁশিয়ারি দিয়ে খাদ্য উপদেষ্টা বলেন, 'কোনো কৃষক ধান বিক্রির জন্য ধান নিয়ে আসলে তাকে ফেরত দেওয়া যাবে না। শুধুমাত্র ধানের আদ্রতার বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে। এছাড়া কোনো গুদামে বস্তাবন্দি পঁচা চাল পাওয়া গেলে এটা বরদাশত করা হবে না।'
এবারের নির্ধারিত মূল্য ও পরবর্তী সরকারের জন্য মজুদ প্রসঙ্গে আলী ইমাম মজুমদার বলেন, 'কৃষকদের বিষয়টি বিবেচনা করে ধান চালের সংগ্রহ মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। এবছর ধান কেনা হবে প্রতি কেজি ৩৪ টাকা করে, সিদ্ধ চাল ৫০ টাকা কেজি এবং আতপ চাল ৪৯ টাকা কেজি। আমরা যখন চলে যাব তখন যেটুকু মজুদ থাকার কথা, যেটুকু মজুদ থাকা উচিত তার চেয়ে ইনশাল্লাহ বেশি রেখে যাব। বর্তমান সরকার কিন্তু পরবর্তী সরকারের জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে কাজগুলোকে কমফোর্টেবল রেখে যাবে। এ ব্যাপারে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।'
মতবিনিময় সভায় দেবিদ্বার উপজেলার কোম্পানীগঞ্জ এলএসডি'র রাস্তার জটিলতা নিয়েও আলোচনা হয়। এ বিষয়টি সমাধানের জন্য স্থানীয় পর্যায়ে সড়ক বিভাগের সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসককে নির্দেশনা দেন উপদেষ্টা।
সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবুল হাছানাত হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, 'ইতোমধ্যে মিলারদের সাথে চুক্তি মোতাবেক চাল সংগ্রহ শুরু হয়েছে। সবকিছুই মনিটরিং করা হচ্ছে। অনিয়ম করে পার পাওয়া যাবে না।' তিনি সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশনা মোতাবেক আমন সংগ্রহ অভিযান সফল করার জন্য অনুরোধ জানান।
কুমিল্লা জেলার জেলা প্রশাসক মু. রেজা হাসানের সভাপতিত্বে সভায় জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, উপপরিচালক (কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর), জেলার সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
