রপ্তানি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ২০ শতাংশ বা তার বেশি কাঁচামাল ব্যবহার করলে শুল্ক কমবে: ইউএসটিআর

বাংলাদেশ থেকে মার্কিন বাজারে রপ্তানি হওয়া পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামালের ২০ শতাংশ বা তার বেশি যদি যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা ইনপুট বা কাঁচামাল থাকে, তাহলে বর্ধিত ওই অংশের উপর আনুপাতিক হারে হ্রাসকৃত হারে শুল্ক সুবিধা পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছে ঢাকা সফররত যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তর (ইউএসটিআর) -এর প্রতিনিধি দল। তবে কাঁচামালের ট্রেসেবিলিটি বা উৎস কীভাবে নিশ্চিত করা হবে, তা নিয়ে বর্তমানে কাজ চলছে বলে জানান তারা।
আজ সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ইউএসটিআর কর্মকর্তারা তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন- বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) এর একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন। এসময় যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) ব্রেন্ডেন লিঞ্চ তাদের এসব কথা জানান। রাজধানীর গুলশানে চিফ অফ মিশন রেসিডেন্সে এই সভার আয়োজন করে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস।
বৈঠক শেষে বিজিএমইএ'র পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, "যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাহী আদেশ অনুসারে, বাংলাদেশ থেকে রপ্তানিকৃত পোশাকে যদি ২০ শতাংশ বা তার বেশি যুক্তরাষ্ট্রের কাঁচামাল ব্যবহৃত হয়, তবে সেই পণ্যের ওপর আরোপিত ২০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক থেকে আনুপাতিক হারে অব্যাহতি পাওয়া যাবে।"
আলোচনায় বিজিএমইএ নেতারা জানতে চান, কোন প্রক্রিয়া বা ফর্মুলায় যুক্তরাষ্ট্রের কাঁচামাল ব্যবহারের মূল্যায়ন এবং ট্রেসেবিলিটি তা নিশ্চিত করা হবে। জবাবে মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, "ইউএস কাস্টমস বিষয়টি নিয়ে বর্তমানে কাজ করছে। আশা করা যায় যে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এটি সম্পন্ন হবে।"
এছাড়া ইউএসটিআর প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের বিদ্যমান শ্রম আইন- আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) গাইডলাইন অনুযায়ী সংশোধনের উপরও গুরুত্ব দেন।
ব্রেন্ডেন লিঞ্চ বলেন, "আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সাথে সংগতি বজায় রেখে বাংলাদেশে শ্রম আইন সংস্কার করা হবে, এটি প্রত্যাশিত। তিনি আইএলও-র গাইডলাইন অনুসরণ করে বাংলাদেশের শ্রম আইন ২০০৬-এর সংশোধনী করার পরামর্শ দেন।"
দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য আলোচনার ফলে, যুক্তরাষ্ট্র গত আগস্টে বাংলাদেশের ওপর পাল্টা শুল্কের হার ২০ শতাংশে নামিয়ে আনে, যা শুরুতে ছিল ৩৫ শতাংশ। অবশ্য বিজিএমইএ'র পক্ষ থেকে বলা হয়, কমানোর পরও আগের শুল্কসহ সবমিলিয়ে দেশটির বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ৩৬.৫ শতাংশ শুল্ক রয়েছে। এই ট্যারিফ আরো কমানোর আহ্বান জানান তারা।
দেশ ও শিল্পের ক্ষেত্রে যে ইতিবাচক পরিবর্তনগুলো ক্রমান্বয়ে সাধিত হচ্ছে, সেগুলোকে ইতিবাচকভাবে দেখার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধিকে অনুরোধ জানান বিজিএমইএ সভাপতি ।
সভায় বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু ছাড়াও পোশাক শিল্পের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, "আমরা ইতিমধ্যেই ২০ শতাংশ ট্যারিফ সুবিধা অর্জন করেছি, যা একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে প্রকৃতপক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানির ওপর মোট শুল্কের পরিমাণ প্রায় ৩৬.৫ শতাংশ, যা বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।"
বিজিএমইএ সভাপতি অভিমত প্রকাশ করে বলেন, "স্ট্যাকিং মেথড' ব্যবহার করে অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে এই শুল্কের সমন্বয় করা যেতে পারে। এই কৌশলটি কেবল শুল্কের বোঝা কমাবে না, বরং মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা আরও বাড়িয়ে দেবে।"
এসময় বিজিএমইএ'র পক্ষ থেকে শ্রম আইনের সংস্কারে তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করা হয়।
"যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধিদল আলোচনায় সন্তোষ প্রকাশ করেন, এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়িয়ে বাণিজ্য ঘাটতি কমানো হলে- বাংলাদেশের জন্য পাল্টা শুল্ক হার আরও কমানোর বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন"- বলে বিজিএমইএ-র বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।