রাজনীতি নিয়ে তর্কের জেরে সহপাঠীদের ওপর হামলা; আসামের এনআইটি থেকে ৫ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী সাময়িক বহিষ্কার

ভারতের আসামের শিলচরে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে (এনআইটি) অধ্যয়নরত পাঁচজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাসে সহপাঠীদের সঙ্গে সহিংসতায় জড়ানোর অভিযোগে দুই সেমিস্টারের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। তারা সবাই ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশনস (আইসিসিআর) স্কলারশিপে সেখানে পড়াশোনা করছিলেন।
ঘটনাটি ঘটে ৮ সেপ্টেম্বর। ওই দিন তৃতীয় বর্ষের কয়েকজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী তাদেরই সহপাঠী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়।
এনআইটি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ওই শিক্ষার্থীদের কাছে মাদকদ্রব্যও পাওয়া গেছে। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক দিলীপ কুমার বৈদ্য জানিয়েছেন, এ কারণে তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে।
তিনি বলেন, 'এদের বিরুদ্ধে অতীতে অনেক অভিযোগ ছিল। বিশেষ করে তাদের দেশে রাজনৈতিক পালাবদলের পর অনেকেই এখানে নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করেছে। কেউ কেউ নিজেদের বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের লোক বলে, আবার কেউ কেউ অতীতের সরকারের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রয়েছে বলে। তাদের তর্ক থেকে ঝগড়া বহুবার মারামারি পর্যন্ত গেছে। তবে তাদের ব্যক্তিগত ঝগড়াকে আমরা গুরুত্ব দিইনি।'
বৈদ্য বলেন, '৮ সেপ্টেম্বর যেটা ঘটেছে সেটা একসময় ভয়ংকর রূপ নেয়। তারা হাতে অস্ত্র নিয়ে অন্যদের ধাওয়া করেছে এবং বেশ কিছুক্ষণ ধরে মারপিট করেছে। এই ঘটনার পর্যাপ্ত প্রমাণ পেয়েছি আমরা। তদন্তের পর প্রতিষ্ঠানের নিয়ম অনুযায়ী শাস্তিমূলক পদক্ষেপ হিসাবে দুই সেমিস্টারের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে তাদের। সঙ্গে হোস্টেল থেকেও বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।'
পরিচালক বৈদ্য আরও জানান, তদন্ত শেষে পাঁচজনকে মূল অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের এক বছরের জন্য ক্লাসে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ১২ সেপ্টেম্বর থেকে তাদের হোস্টেল থেকেও বহিষ্কার করা হয়েছে।
এনআইটির ডিন অব স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এস. এস. ধর জানিয়েছেন, অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের কক্ষে মাদকদ্রব্য পাওয়া গেছে। শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে বিষয়টি বিবেচনায় আনা হয়েছে। তিনি বলেন, 'মূলত ক্যাম্পাসে সহিংসতার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তবে মাদকের বিষয়টিও ধরা হয়েছে।'
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ৮ সেপ্টেম্বর রাত ১১টা ৩০ মিনিটের দিকে পাঁচজন শিক্ষার্থী মাদকাসক্ত অবস্থায় তাণ্ডব চালায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, 'তারা লোহার রড, ছুরি ও স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে চূড়ান্ত বর্ষের বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। প্রায় ৩০ মিনিট ধরে চলা এ ঘটনায় গুরুতর আহত হন কয়েকজন।'
আরেকজন শিক্ষার্থী জানান, প্রথমে অভিযুক্তরা নিজেদের ব্যাচমেটদের ওপর হামলা চালায়। পরে সিনিয়ররা বাধা দিতে গেলে তাদের আলোচনার জন্য একটি কক্ষে ডেকে নেয়। হঠাৎ লাইট বন্ধ করে আবার অস্ত্র নিয়ে হামলা শুরু করে, এতে আরও অনেকে আহত হন।
আহতদের শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে দুজনের মাথায় গুরুতর আঘাত লাগে এবং তাদের আইসিইউতে রাখা হয়।
ঘটনার পর এনআইটি কর্তৃপক্ষ নিজস্ব তদন্ত চালায়। তদন্তে সহায়তার জন্য গৌহাটির আইসিসিআর কার্যালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ক্যাম্পাস পরিদর্শন করেন। এস. এস. ধর বলেন, 'আমরা আমাদের তদন্ত ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থায় সন্তুষ্ট। তাই পুলিশকে জানানো হয়নি।'
তিনি আরও জানান, 'শনিবার গৌহাটির আইসিসিআর পরিচালকও ক্যাম্পাসে এসে তদন্ত ও আমাদের নেওয়া ব্যবস্থায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।'
উল্লেখ্য, এনআইটি শিলচরের ক্যাম্পাসে এর আগেও সহিংসতা হয়েছে। কয়েক বছর আগে এক সাবেক শিক্ষার্থীকে মাদক বিক্রির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তিনি দাবি করেছিলেন, ক্যাম্পাসে নিয়মিত মাদক সরবরাহ করতেন তিনি।