জেলেনস্কি–ট্রাম্প বৈঠকের আগে ইউক্রেনে শত শত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা রাশিয়ার
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের আগে শনিবার ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভসহ বিভিন্ন এলাকায় শত শত ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, প্রায় চার বছর ধরে চলা যুদ্ধের অবসান ঘটাতে একটি পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতেই এই বৈঠকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জেলেনস্কির ভাষ্য অনুযায়ী, রাতভর চালানো এই ব্যাপক হামলায় প্রায় ৫০০টি ড্রোন ও ৪০টি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়। এতে কিয়েভের বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ ও তাপ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তিনি এই হামলাকে ওয়াশিংটনের মধ্যস্থতায় চলমান শান্তি প্রচেষ্টার প্রতি রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া হিসেবে উল্লেখ করেন।
জেলেনস্কি বলেন, রোববার যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় অনুষ্ঠিতব্য আলোচনায় যুদ্ধ শেষে—ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা এবং ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ—এই দুটি বিষয়ই মূল আলোচ্য হবে।
শনিবার সকালজুড়েই হামলা অব্যাহত থাকে। কিয়েভে প্রায় ১০ ঘণ্টাব্যাপী বিমান হামলার সতর্কতা স্থানীয় সময় সকাল ১১টা ২০ মিনিটে প্রত্যাহার করা হয়। কর্তৃপক্ষ জানায়, কিয়েভ ও আশপাশের এলাকায় অন্তত দুইজন নিহত এবং দুই শিশুসহ কমপক্ষে ৪৬ জন আহত হয়েছে।
জেলেনস্কি সাংবাদিকদের বলেন, "আজ রাশিয়া দেখিয়ে দিল—ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শান্তিপূর্ণ আলোচনার প্রতি তারা কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়।"
শনিবার ভোর থেকে কিয়েভজুড়ে একের পর এক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়, এসময় ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় হয়ে ওঠে। দেশটির বিমান বাহিনী জানায়, রুশ ড্রোনগুলো রাজধানী কিয়েভের পাশাপাশি উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন অঞ্চলকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে।
রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ গ্রিড অপারেটর ইউক্রেনারগো জানায়, দেশব্যাপী জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা চালানো হয়েছে এবং কিয়েভের বিভিন্ন এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে হয়েছে।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, হামলার ফলে কিয়েভের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এলাকা তাপ সরবরাহহীন হয়ে পড়ে। শনিবার সকালে তাপমাত্রা ছিল শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইউলিয়া স্বিরিদেনকো জানান, কিয়েভ ও আশপাশের এলাকায় প্রায় ছয় লাখ পরিবার বিদ্যুৎ সংযোগ হারিয়েছে।
এই হামলার জেরে ইউক্রেনের পশ্চিমে অবস্থিত পোল্যান্ডের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের রেজেশুভ ও লুবলিন বিমানবন্দর সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়, যদিও পরে সেগুলো আবার চালু করা হয়।
ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ ঘিরে কূটনৈতিক অচলাবস্থা
অডিও বার্তায় জেলেনস্কি সাংবাদিকদের জানান, তিনি বিমানে করে ফ্লোরিডায় ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে যাচ্ছেন। পথে তিনি প্রথমে কানাডায় থেমে সেদেশের প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এবং ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে ফোনে আলোচনা করবেন।
ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ এবং রাশিয়ার দখলে থাকা জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভবিষ্যৎ এখনো কূটনৈতিক আলোচনার প্রধান বাধা হয়ে আছে। তবে জেলেনস্কি শুক্রবার কিয়েভে সাংবাদিকদের জানান, যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে প্রণীত শান্তি চুক্তির মূল ভিত্তি হিসেবে থাকা ২০ দফা খসড়া নথির কাজ প্রায় ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে।
জেলেনস্কি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া নিরাপত্তা নিশ্চয়তার ধরন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি নির্ভর করবে ট্রাম্পের ওপর—"তিনি কী দিতে প্রস্তুত, কখন দিতে প্রস্তুত এবং কতদিনের জন্য।"
এই সপ্তাহের শুরুতে মার্কিন গণমাধ্যম অ্যাক্সিওসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি জানান, যুক্তরাষ্ট্র ১৫ বছরের জন্য একটি নিরাপত্তা নিশ্চয়তা চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে, যা নবায়ন করা যাবে। তবে কিয়েভ আরও দীর্ঘমেয়াদি এবং আইনি বাধ্যবাধকতাসম্পন্ন চুক্তি চায়, যাতে ভবিষ্যতে রাশিয়ার আগ্রাসন ঠেকানো যায়।
ট্রাম্প বলেন, পুরো প্রক্রিয়াটির চালিকাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রই। পলিটিকোকে তিনি বলেন, "আমি অনুমোদন না দিলে তার (জেলেনস্কির) কিছুই করার নেই। দেখা যাক, সে কী নিয়ে আসে।"
জেলেনস্কি জানান, যুদ্ধ-পরবর্তী পুনর্গঠনে ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সহযোগিতা নিয়ে উভয় পক্ষের একটি "অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি" রয়েছে, যার আওতায় একাধিক বিনিয়োগ তহবিল গঠনের পরিকল্পনা আছে।
ট্রাম্প বলেন, তিনি মনে করেন রোববারের বৈঠক ভালোই হবে। একই সঙ্গে তিনি জানান, তিনি "যতটা সম্ভব শিগগিরই" রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গেও কথা বলতে চান।
