বাংলাদেশে দুর্নীতি ও আর্থিক শাসনসংক্রান্ত সমস্যার ভুক্তভোগী মার্কিন ব্যবসা: যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস কর্মকর্তা

বাংলাদেশে ব্যবসায় আগ্রহ থাকলেও দুর্নীতি, আর্থিক শাসনসংক্রান্ত দুর্বলতা, জটিল করব্যবস্থা, অবকাঠামো ও লজিস্টিক সীমাবদ্ধতা এবং অতিরিক্ত আমলাতান্ত্রিক জটিলতা মার্কিন ব্যবসায়িক স্বার্থকে বাধাগ্রস্ত করছে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের সম্প্রতি নিয়োগপ্রাপ্ত বাণিজ্যিক কাউন্সেলর পল ফ্রস্ট।
আজ মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর এক হোটেলে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ (অ্যামচ্যাম)-এর মধ্যাহ্নভোজ সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, "আমরা সবাই জানি, বেসরকারি খাতকে নানান ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে — যার মধ্যে রয়েছে দুর্নীতি, আর্থিক শাসনসংক্রান্ত উদ্বেগ, জটিল করব্যবস্থা, অবকাঠামো ও লজিস্টিক সীমাবদ্ধতা এবং অত্যধিক আমলাতন্ত্র।"
তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস এসব সমস্যায় পড়া মার্কিন কোম্পানিগুলোকে সহায়তা করে আসছে। "আমরা ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছি এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে, যারা পেমেন্টে বিলম্ব, আয় ফেরত পাঠানোর জটিলতা এবং সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারদের সঙ্গে চুক্তি বাস্তবায়নে ব্যর্থতার মতো সমস্যায় ভুগছে," বলেন তিনি।

পল ফ্রস্ট বলেন, কিছু অগ্রগতি হলেও এ ধরনের চ্যালেঞ্জ সরাসরি মার্কিন কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক ফলাফলে প্রভাব ফেলছে এবং সমাধান না হলে ভবিষ্যতের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
"অন্তর্বর্তী সরকারকে ধন্যবাদ, তারা গঠনমূলক ভূমিকা নিচ্ছে এবং আমাদের সঙ্গে এসব সমস্যা সমাধানে আগ্রহ দেখাচ্ছে"- যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, অ্যামচ্যাম ও অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে মিলে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের পরিবেশকে শক্তিশালী করা এবং প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করাই মূল লক্ষ্য।
বাংলাদেশে মার্কিন ব্যবসার সুযোগগুলো তুলে ধরলেন ফ্রস্ট
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের বাণিজ্যিক কাউন্সেলর বলেন, "বাংলাদেশে মার্কিন কোম্পানিগুলোর জন্য সুযোগ অনেক বড় এবং তা ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছে। কৃষিপণ্য, উড়োজাহাজ ও জ্বালানি খাতে মার্কিন পণ্য রপ্তানির প্রবৃদ্ধি অর্জনের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। প্রচলিত খাত ছাড়াও অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রকৌশল সেবা, তথ্যপ্রযুক্তি, স্বাস্থ্যসেবা এবং প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম খাতে সম্ভাবনা খোঁজা হচ্ছে।"
তিনি কৃষিভিত্তিক অবকাঠামো—যেমন কোল্ড চেইন ও সংরক্ষণাগার নির্মাণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন, যা বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে সহায়ক হবে।
এছাড়া, বাংলাদেশি কোম্পানিগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি সিনথেটিক ফাইবার কিনে টেক্সটাইল উৎপাদনে ব্যবহারের আগ্রহ বাড়ছে বলেও জানান তিনি। বিষয়টিকে তিনি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্প্রসারণের একটি আশাব্যঞ্জক খাত হিসেবে উল্লেখ করেন।
তিনি আরও জানান, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের 'সিলেক্ট ইউএসএ ইনভেস্টমেন্ট সামিটে' বাংলাদেশি কোম্পানির রেকর্ড অংশগ্রহণ হয়েছে—৪০টি প্রতিষ্ঠান এতে যোগ দেয়। ২০২৬ সালের ৩–৬ মে ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠেয় পরবর্তী সামিটে আরও বেশি প্রতিষ্ঠানকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।
"এ সম্মেলন যুক্তরাষ্ট্রের অংশীজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, বাজার সম্পর্কে ধারণা নেওয়া এবং বিনিয়োগ ও সম্প্রসারণের সুযোগ খুঁজে পাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম," বলেন ফ্রস্ট।
শেষে তিনি বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও গভীর করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে বলেন, "এখানকার মার্কিন ব্যবসায়িক সম্প্রদায় প্রাণবন্ত এবং ইতিমধ্যেই কী সম্ভব সেটা তারা প্রমাণ করেছেন। আমি আশাবাদী, আমাদের অংশীদারিত্বের পরবর্তী অধ্যায় আরও ফলপ্রসূ হবে। আপনাদের সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ—আমরা আপনাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার অপেক্ষায় আছি।"
অ্যামচ্যামের সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন।