নাফ নদী থেকে ট্রলারসহ আরও ১২ জেলেকে ধরে নিয়ে গেল 'আরাকান আর্মি'

বঙ্গোপসাগর থেকে ফেরার পথে কক্সবাজারের টেকনাফের নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকায় নাফ নদী থেকে মাছ ধরার ট্রলারসহ আরও ১২ জেলেকে অপহরণ করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও ট্রলার মালিকদের অভিযোগ, এই অপহরণের সঙ্গে মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) সদস্যরা জড়িত। শনিবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।
এ নিয়ে গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত আরাকান আর্মির হাতে ২৩৫ জনেরও বেশি জেলে অপহরণের শিকার হলেন।
শাহপরীর দ্বীপ জেটি ঘাট ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গফুর আলম জানান, বঙ্গোপসাগর থেকে মাছ ধরে টেকনাফে ফেরার পথে শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে শাহপরীরদ্বীপের নাইক্ষ্যংদিয়া সংলগ্ন নাফ নদী থেকে জেলেদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। অপহৃত ট্রলারটির নাম 'এফবি ওসমান' এবং এর মালিক শাহপরীরদ্বীপের সুলতান আহমদের ছেলে মো. ওসমান।
গফুর আলম জানান, 'আরাকান আর্মির সদস্যরা ধাওয়া করে অস্ত্রের মুখে জিন্মি করে এই ১২ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে।' বিষয়টি প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের অবহিত করা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এ প্রসঙ্গে টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, "বিষয়টি তিনি শুনেছেন তবে পরিবারের পক্ষ থেকে তাদেরকে অবহিত করা হয়নি। এব্যাপারে আরাকান আর্মির সাথে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে।"
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, 'জেলে ধরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি শাহপরীর দ্বীপ কোস্টগার্ড ও স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে বিষয়টি শুনেছি এবং সংশ্লিষ্টদের অবহিত করা হয়েছে। তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন।'
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে কোস্টগার্ড টেকনাফ স্টেশনের কমান্ডারের সরকারি মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
অপহৃত জেলেরা হলেন: লাল মিয়ার ছেলে মো. আলি আহমদ (৩৯), মোহাম্মদ রশিদের ছেলে মোহাম্মদ আমিন (৩৪), মৃত আবদুল করিমের ছেলে ফজল করিম (৫২), আবদুল মজিদের ছেলে কেফায়েত উল্লাহ (৪০), শামসুল আলমের ছেলে সাইফুল ইসলাম (২৩), মৃত নুর বশরের ছেলে সাদ্দাম হোসেন (৪০), মুস্তাক আহমদের ছেলে মো. রাসেল (২৩), আব্দুর রহমানের ছেলে মো. সোয়াইব (২২), নুরু ইসলামের ছেলে আরিফ উল্লাহ (৩৫), ফরিদ আলমের ছেলে মোহাম্মদ মোস্তাক (৩৫), নুর আহমদের ছেলে নুরুল আমিন (৪৫) এবং মোহাম্মদ আমিনের ছেলে মো. আরফান (২৩)। তাঁদের সকলেরই বাড়ি শাহপরীরদ্বীপের বিভিন্ন এলাকায়।
এই ঘটনার আগেও দুই দফায় অপহৃত ৭ জেলে এখনও আরাকান আর্মির হাতে জিম্মি রয়েছেন, যাদের ফেরত আনা সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে গত ১২ আগস্ট নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকা থেকে ৫ জেলেকে এবং ৫ আগস্ট নাফ নদীর জলসীমানা থেকে আরও ২ জেলেকে নৌকাসহ ধরে নিয়ে যায় আরাকান আর্মি।
উল্লেখ্য, গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এই পর্যন্ত নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে আরাকান আর্মি ২২৩ বাংলাদেশি জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে। এর মধ্যে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের প্রচেষ্টায় কয়েক দফায় ১৮৯ জন জেলে এবং ২৭টি ট্রলার-নৌকা ফেরত আনা হয়েছে।