ইনসাফভিত্তিক গণতান্ত্রিক মানবিক বাংলাদেশ গড়েই শহীদদের ঋণ পরিশোধ সম্ভব: তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান বলেছেন, 'দেশে জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি ইনসাফভিত্তিক গণতান্ত্রিক মানবিক বাংলাদেশ গঠনের মাধ্যমেই আমরা শহীদদের প্রতি ঋণ পরিশোধ করতে পারি।'
৫ আগস্ট 'জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস' উপলক্ষ্যে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভার্চুয়াল ভাষণে তিনি বলেন, ঠিক এক বছর আগে এই দিনে ফ্যাসিস্ট শাসনের পতনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ রাহুমুক্ত হয়েছিল। এ দিনটি স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রপ্রিয় জনগণের জন্য এক বিজয়ের দিন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তারেক রহমান বলেন, একুশ শতকের বাংলাদেশে গুম, খুন, অপহরণ, মামলা, নির্যাতন, নিপীড়নকে সাধারণ ঘটনায় পরিণত করেছিল পলাতক স্বৈরাচার। জনগণের কণ্ঠরোধে নির্মাণ করা হয়েছিল শত শত 'আয়নাঘর'। অনেকে আজও নিখোঁজ—যেমন বিএনপির সাবেক এমপি ইলিয়াস আলী ও কমিশনার চৌধুরী আলম।
তিনি অভিযোগ করেন, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশনসহ সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দেশের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। রাজনীতির নামে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল 'লগি-বৈঠা-হাতুড়ি-চাপাতি'। ব্যাংক খালি করে দেশ থেকে ২৮ লাখ কোটি টাকা পাচার করা হয়।
তারেক রহমান বলেন, '৭১ ছিল স্বাধীনতা অর্জনের যুদ্ধ, আর ২০২৪ ছিল স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধ।' ওই গণঅভ্যুত্থানে দেড় হাজারের বেশি মানুষ শহীদ এবং অন্তত ৩০ হাজার মানুষ আহত হয় বলেও দাবি করেন তিনি।
তিনি বলেন, 'এবার শহীদদের প্রতি আমাদের ঋণ পরিশোধের পালা। শহীদদের পরিবার ও দেশের মানুষের প্রতি আমাদের দায়িত্ব রয়েছে।'
তারেক রহমান মনে করেন, জনগণের ভোটে গঠিত, জবাবদিহিমূলক একটি সরকার প্রতিষ্ঠাই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রথম ধাপ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সে লক্ষ্যে কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, 'যারা বর্তমান সরকারের সঙ্গে পলাতক ফ্যাসিস্ট সরকারের তুলনা করেন, তাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই—৫ আগস্ট ইতিহাসের এক নজিরবিহীন ঘটনা। ওই দিন ফ্যাসিস্ট পালিয়েছে গণভবন, সংসদ ভবন, আদালত, এমনকি বায়তুল মোকাররম থেকে।'
তারেক রহমান বলেন, এখন বাংলাদেশে আর কখনো ফ্যাসিবাদ কায়েম হবে না। গণতন্ত্র হত্যা কিংবা দেশকে তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করার সুযোগও আর কাউকে দেওয়া হবে না।
তিনি জানান, ভিন্নমত গণতন্ত্রের সৌন্দর্য হলেও সেটি যেন কখনো ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ বা চরমপন্থার পুনর্বাসনের পথ তৈরি না করে, সে বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক থাকতে হবে।
তারেক রহমান বলেন, জনগণ যেন নিজের পছন্দের প্রার্থীকে সরাসরি ভোট দিয়ে সরকার গঠন ও পরিবর্তনের ক্ষমতা পায়—সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
ভাষণের একপর্যায়ে তিনি বলেন, 'মায়ের চোখে বাংলাদেশ' যেমন আমরা দেখতে চাই, তেমনি একটি নিরাপদ বাংলাদেশ গড়তে চাই যেখানে দলমত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষ নিরাপদে থাকবে।
তিনি আহ্বান জানান, কেউ যেন আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়, মব ভায়োলেন্সে না জড়ায় এবং নারীর প্রতি সহিংস আচরণ না করে।
ভাষণের শেষে তারেক রহমান বলেন, 'আগামী প্রতিটি ৫ আগস্ট হয়ে উঠুক গণতন্ত্র, সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও মানবিক মানুষ হয়ে ওঠার অঙ্গীকারের দিন। এই যাত্রায় বিএনপি দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণের সমর্থন ও সহযোগিতা প্রত্যাশা করে।'