নতুন চুক্তির প্রেক্ষিতে ইন্দোনেশিয়ার পণ্যে ১৯% শুল্ক ঘোষণা ট্রাম্পের

ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা বেশ কয়েকটি পণ্যে ১৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দক্ষিপূর্ব এশীয় দেশটির নতুন চুক্তির আওতায় এই শুল্ক দিতে হবে। আগামী ১ আগস্ট থেকে এই হারে শুল্ক কার্যকর হবে।
মঙ্গলবার (যুক্তরাষ্ট্র সময়) ট্রাম্প এই চুক্তির কথা জানান।
ওভাল অফিসের বাইরে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, "তারা (ইন্দোনেশিয়া) ১৯ শতাংশ শুল্ক দেবে, আর আমরা (যুক্তরাষ্ট্র) কোনো শুল্ক দেব না … আমরা ইন্দোনেশিয়ায় পূর্ণ বাজার প্রবেশাধিকার পাব, এবং বেশ কয়েকটি চুক্তিরও সামনে ঘোষণা আসছে।"
পরে তার সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে ট্রাম্প জানান, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলারের জ্বালানি পণ্য এবং সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের কৃষিপণ্য কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইন্দোনেশিয়া। এছাড়া বোয়িংয়ের ৫০টি উড়োজাহাজ কিনতেও চুক্তি করেছে দেশটি।
ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতিকে কমাতে চান। সেজন্যই রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ বা পারস্পরিক শুল্কের নয়া এই কৌশল নেন তিনি— যার আওতায়, শুল্ক এড়াতে চাওয়া দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার ভিত্তিতে শর্ত নির্ধারণের সুবিধা পাচ্ছে ওয়াশিংটন। তার আলোকেই ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে এই চুক্তিতে উপনীত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে চীন থেকে ইন্দোনেশিয়া হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করা হলে— সেক্ষেত্রে বাড়তি শুল্ক গুনতে হবে জাকার্তাকে—চুক্তিতে এমন শর্তও আছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাল্টা প্রস্তুতি
ইউরোপীয় কমিশন হুঁশিয়ার করে দিয়েছে, যদি ওয়াশিংটনের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনায় চূড়ান্ত সমঝোতা না হয়, তাহলে তারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৭২ বিলিয়ন ইউরো মূল্যের আমদানি পণ্যে পাল্টা-শুল্ক আরোপ করতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে– বোয়িং এর উড়োজাহাজ, গাড়ি, ওয়াইন ও বিস্কুটসহ অন্যান্য খাদ্য ও শিল্পপণ্য। ট্রাম্প চলতি জুলাই মাসেই ইইউ থেকে আমদানিতে ৩০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করার হুমকি দেন।
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তগুলো বিশ্ব অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা বয়ে নিয়ে এসেছে। ইয়েল বাজেট ল্যাব-এর এক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এই শুল্ক বৃদ্ধির ফলে যুক্তরাষ্ট্রের গড় কার্যকর শুল্কের হার আগের ২–৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০.৬ শতাংশে পৌঁছাতে পারে, যদিও ভোক্তা চাহিদা এর ফলে প্রভাবিত হলে তা ১৯.৭ শতাংশে দাঁড়াতে পারে — যা ১৯৩৩ সালের মহামন্দার সময়ের পর সর্বোচ্চ। ট্রাম্প প্রশাসনের এই তীব্র শুল্ক কৌশলের কারণে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে অন্যান্য দেশে।
ইন্দোনেশিয়ার সাথে চুক্তির অর্থনৈতিক গুরুত্ব
২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র–ইন্দোনেশিয়ার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার; যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানির পরিমাণ ছিল ১৮ বিলিয়ন ডলার। দেশটি থেকে মার্কিন বাজারে শীর্ষ রপ্তানি পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে পাম তেল, ইলেকট্রনিক জিনিসপত্র, রাবার, জুতা, মোটর টায়ার ও হিমায়িত চিংড়ি।
ইন্দোনেশিয়ার অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র কর্মকর্তা সুশি বিজোনো মুগিয়ার্সো এক বার্তায় জানিয়েছেন, আমরা যুক্তরাষ্ট্র–ইন্দোনেশিয়া বাণিজ্য চুক্তির যৌথ বিবৃতি প্রস্তুত করছি যাতে উভয় পক্ষের শুল্ক, অ-শুল্ক ও বাণিজ্য সংক্রান্ত বিস্তারিত থাকবে। শীঘ্রই জনগণকে এসব বিষয়ে জানানো হবে।