টহল গাড়ির সামনে ছিনতাই, ভুক্তভোগীকে সহায়তা না করে চলে গেল পুলিশ

রাজধানীর মগবাজার লাইট হাউজের ব্যবসায়ী শামীম আহমেদ। গেল কোরবানির ঈদে গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল না তার। তবে ঈদের দিন ফজরের নামাজের সময় বাড়ি থেকে খবর আসে তার বাবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাই তখনই বাড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
ওই দিন (৭ জুলাই) ফজরের নামাজের পর খিলগাঁও তালতলার বাসা থেকে বেরিয়ে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের উদ্দেশে রওনা দেন শামীম। হঠাৎ মালিবাগ রেলগেট পার হতেই রাস্তার পাশ থেকে চাপাতি হাতে দৌড়ে আসে তিন যুবক।
ছিনতাইকারী বুঝতে পেরে রিকশা থেকে লাফ দিয়ে নেমে তাদের হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করেন শামীম। কিন্তু ছিনতাইকারীরা দৌড়ে গিয়ে তাকে ধরে ফেলে। তাকে মারধর করে কেড়ে নেওয়া হয় তার আইফোন ও নগদ টাকাসহ মানিব্যাগ।
ঘটনাস্থলের আশপাশে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরায় ছিনতাইয়ের এ দৃশ্য ধরা পড়েছে।
ভুক্তভোগী শামীম জানান, সবকিছু কেড়ে নেওয়ার পর ছিনতাইকারীরা তার পায়ে একটি আঘাত করে চলে যায়। ঘটনাস্থলের ৩০ থেকে ৪০ গজ দূরেই দাঁড়িয়ে ছিল শাজাহানপুর থানা পুলিশের একটি টহল গাড়ি। সিসিটিভি ক্যামেরাতেও পুলিশের গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
শামীমের অভিযোগ, তিনি চিৎকার করলেও পুলিশ এগিয়ে আসেনি। এরপর তিনি খোঁড়াতে খোঁড়াতে পুলিশের গাড়ির কাছে গিয়ে সাহায্য চান। তখন দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা জানান, তারা কিছুই দেখেননি। এরপর তাকে ঘটনাস্থল দেখানোর কথা বলে একটু সামনে গিয়েই পুলিশ সেখান থেকে চলে যায়।
ছিনতাইকারীদের হেঁটে চলে যাওয়া এবং পুলিশের টহল গাড়ির চলে যাওয়ার দৃশ্যও ধরা পড়েছে সিসিটিভি ক্যামেরাতে। ফুটেজটি টিবিএসের হাতে এসে পৌঁছেছে।
এরপর শামীম আর চাঁদপুর না গিয়ে রিকশায় করে বাসায় ফিরে যান।
নুরুল ইসলাম নামের এক নিরাপত্তা প্রহরী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'মালিবাগে ছিনতাইয়ের শিকার হয়ে শামীম আহমেদ আহত হয়ে বাসার সামনে আসেন। তিনি তখন কান্নাকাটি করছিলেন। পরে আমরা তাকে তার বাসা পর্যন্ত পৌঁছে দেই।'
সেদিন পুলিশ কেন তাকে সাহায্য না করে চলে গিয়েছিল, সেটা জানা নেই শামীমের। কিন্তু পরের ঘটনা আরও রহস্যময়। ছিনতাইয়ের ঘটনায় থানায় মামলা করতে গেলেও পুলিশ মামলা নেয়নি বলে অভিযোগ তার। উলটো ছিনতাইয়ের ঘটনায় মোবাইল হারিয়ে গেছে মর্মে একটি জিডি নেয় পুলিশ। গত ১২ জুন শাজাহানপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন শামীম।
ঘটনার এক মাস পর গত রোববার (১৩ জুলাই) একটি মামলা নিয়েছে পুলিশ।
ভুক্তভোগী শামীমের অভিযোগ সূত্রে মালিবাগের ওই ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রেলগেটের দুই পাশেই প্রতিনিয়ত অস্ত্র দেখিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে।
সাইদুর রহমান নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা টিবিএসকে বলেন, 'পুরো মালিবাগে ছিনতাইকারী চলাফেরা করে। পুলিশ প্রশাসন গুরুত্ব দেয় না। সাধারণ মানুষেরা ভয়ে আতঙ্কিত। আমরা ঠিকমত চলাফেরা করতে পারি না। পুরো রাতে একই অবস্থা। ছিনতাইকারী এই রেলগেট এলাকায় ঘোরাফেরা করে, মাদকদ্রব্য গ্রহণ করে।'
জাহিদ হোসেন নামের স্থানীয় আরেক বাসিন্দা টিবিএসকে বলেন, 'প্রতিনিয়ত ছিনতাই হচ্ছে এই রেললাইনে। প্রতিদিন একটা না একটা ঘটনা ঘটেই।'
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কিছুদিন আগেও একই এলাকায় সেনাবাহিনীর সাবেক এক কর্মকর্তাকে নিজ বাড়ির গেটের সামনে কুপিয়েছে ছিনতাইকারীরা। সেই ঘটনাতেও শাজাহানপুর থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে।
মালিবাগ, মৌচাক ও মগবাজার এলাকায় ছিনতাইকারীর ভয়ে আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা জোরদারের দাবি জানিয়েছেন তারা।
শামীমের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানান, পুলিশের অসহযোগিতার বিষয়টি জানা নেই। এ ঘটনায় একটি মামলা নেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, ছিনতাইয়ের ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে এবং আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
প্রকাশ্যে ছিনতাইয়ের এমন ঘটনা ঘটলেও পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, রাজধানীতে ছিনতাই, ডাকাতি, লুটপাট ঠেকাতে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান টিবিএসকে বলেন, 'আমরা নগরবাসীকে স্বস্তি দিতে এবং মানুষের নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য রাত-দিন নিরলসভাবে কাজ করছি। সমগ্র ঢাকা মহানগরে পুলিশের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। জনজীবনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে আমার চেষ্টা করে যাচ্ছি।