ইসরায়েলি হামলায় আহত হয়েছিলেন ইরানের প্রেসিডেন্ট

গত মাসে ইরানের ওপর ইসরায়েলের চালানো একটি হামলায় দেশটির প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান সামান্য আহত হয়েছিলেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
ইরানের বিপ্লবী গার্ড কোরের (আইআরজিসি) ঘনিষ্ঠ রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ফার্স নিউজ জানিয়েছে, গত ১৬ জুন তেহরানের একটি গোপন ভূগর্ভস্থ স্থাপনার প্রবেশ ও বের হওয়ার সব পথ লক্ষ্য করে ছয়টি বোমা হামলা চালানো হয়। ওই সময় প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান সেখানে সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের একটি জরুরি বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন।
একটি জরুরি বহির্গমন পথ দিয়ে অন্যদের সঙ্গে পালানোর সময় প্রেসিডেন্ট পায়ে আঘাত পান বলে জানা গেছে। ইরান এখন ইসরায়েলি এজেন্টদের অনুপ্রবেশের বিভিন্ন সূত্র ধরে তদন্ত করছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
ফার্স নিউজের এই প্রতিবেদন স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি। ইসরায়েলও এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেনি।
১২ দিন ধরে চলা যুদ্ধের সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে উত্তর-পশ্চিম তেহরানের একটি পাহাড়ের ওপর উপর্যুপরি হামলা চালাতে দেখা গিয়েছিল।
এখন জানা যাচ্ছে, যুদ্ধের চতুর্থ দিনে ওই হামলাগুলোর লক্ষ্য ছিল তেহরানের একটি গোপন ভূগর্ভস্থ স্থাপনা, যেখানে সেই মুহূর্তে ইরানের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
ফার্স নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় স্থাপনাটির প্রবেশ ও প্রস্থানের ছয়টি পথই বন্ধ হয়ে যায়। পাশাপাশি বায়ু চলাচল ব্যবস্থাও বিকল হয়ে পড়ে।
স্থাপনাটির বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছিল। তবে পেজেশকিয়ান নিরাপদে বেরিয়ে আসতে পারেন।
সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির পর ইরানের শীর্ষ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী ফোরাম হলো সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল।
গত সপ্তাহে পেজেশকিয়ান অভিযোগ করেন, ইসরায়েল তাকে হত্যার চেষ্টার করেছিল। তবে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ এই দাবি অস্বীকার করে বলেন, 'সরকার পরিবর্তন' তাদের যুদ্ধের লক্ষ্য ছিল না।
যুদ্ধের শুরুতেই আইআরজিসি ও সেনাবাহিনীর অনেক শীর্ষ কমান্ডারকে হত্যা করে ইসরায়েল।
ইরানের নেতারা স্বীকার করেছেন, এই হামলার সময় তারা সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত অবস্থায় ছিলেন এবং হামলার পর প্রথম ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে এক ধরনের স্থবিরতা দেখা দিয়েছিল।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন, আয়াতুল্লাহ খামেনিও তাদের লক্ষ্য ছিলেন। কিন্তু তাকে একটি নিরাপদ গোপন স্থানে সরিয়ে নেওয়ার পর তার অবস্থান শনাক্ত করা যায়নি। ওই সময় তাকে বহির্বিশ্ব থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছিল।
ইরানের শীর্ষ কর্মকর্তা ও কমান্ডারদের অবস্থান এবং সংবেদনশীল গোপন স্থাপনাগুলোর তথ্য ইসরায়েল কীভাবে এতটা নিখুঁতভাবে সংগ্রহ করেছিল, তা নিয়ে এখনও অনেক প্রশ্ন রয়েছে।
গত ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনাগুলোতে অতর্কিত হামলা চালায়। তাদের দাবি, তেহরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত রাখতেই এই হামলা চালানো হয়।
এর জবাবে ইরানও ইসরায়েলে আকাশপথে পাল্টা হামলা চালায়। ইরান বরাবরই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে এবং বলছে, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যেই করা হচ্ছে।
২২ জুন যুক্তরাষ্ট্রের বিমান ও নৌবাহিনী ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়।
পরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, এই হামলায় স্থাপনাগুলো 'সম্পূর্ণ ধ্বংস' হয়ে গেছে। যদিও কিছু মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এ বিষয়ে এতটা নিশ্চিত করে কিছু বলেনি।