বৈরী আবহাওয়ার কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে ৩ দিন ধরে পণ্য খালাস বন্ধ

চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে গত তিন দিন ধরে পণ্য খালাস কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। টানা ভারী বৃষ্টি ও সাগরের উত্তাল অবস্থার কারণে এ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। সেখানে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা জারি রয়েছে।
এর ফলে, লাইটার জাহাজগুলো সাগরে নোঙর করা বড় জাহাজ (মাদার ভেসেল) থেকে পণ্য সংগ্রহ করে দেশের নৌপথে পরিবহন করতে পারছে না। এই ব্যাঘাতের কারণে বন্দরের বহির্নোঙরের কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে পণ্য পরিবহন বন্ধ হয়ে গেছে।
বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক নবি আলম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-কে বলেন, 'গত তিন দিন ধরে বহির্নোঙরে পণ্য খালাস বা লাইটার জাহাজ চলাচল কিছুই সম্ভব হচ্ছে না। সাগর খুবই উত্তাল, সাধারণত হালকা বৃষ্টি বা ভাটার সময়েও যে পণ্য খালাস করা সম্ভব হয়, লাইটার জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় সেগুলোও এখন আটকে আছে।'
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বেশিরভাগ লাইটার জাহাজ পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের কাছে বা কর্ণফুলী নদীর নির্ধারিত অঞ্চলে নোঙর করা আছে।
তিনি জানান, 'মঙ্গলবার মাত্র ১১টি তেলবাহী ট্যাংকার বহির্নোঙর থেকে ছেড়ে যেতে পেরেছে। এর বাইরে কোনো লাইটার জাহাজ অতিরিক্ত শক্তিশালী ঢেউয়ের কারণে নড়াচড়া করার সাহস পায়নি। গত চার মাসে এত ভয়ংকর ঢেউ আমি দেখিনি।'
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ৮ জুলাই পর্যন্ত বহির্নোঙরে ৯৭টি জাহাজ ছিল, যার মধ্যে কনটেইনার জাহাজ, বাল্ক ক্যারিয়ার ও তেলবাহী ট্যাংকার রয়েছে। এর মধ্যে ১৮টি কনটেইনার জাহাজ জেটিতে নোঙর করার জন্য অপেক্ষা করছে। অন্যগুলোর মধ্যে রয়েছে ৩৩টি সাধারণ কার্গো জাহাজ, ৮টি খাদ্যশস্যবাহী জাহাজ, ৩টি সারবাহী জাহাজ, ২৪টি সিমেন্ট ক্লিঙ্কারবাহী জাহাজ, ২টি চিনি বহনকারী জাহাজ ও ৯টি তেল ট্যাংকার।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বহির্নোঙরে পণ্য খালাস বন্ধ থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, বিশেষ করে চাল, ডাল, গম ও চিনি জাতীয় পণ্যের ক্ষেত্রে। তিনি বলেন, 'তবে বন্দরের মূল জেটিতে কনটেইনার হ্যান্ডলিং স্বাভাবিকভাবেই চলছে।'
বাংলাদেশ ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন সেলের (বিডাব্লিউটিসিসি) নির্বাহী পরিচালক জিএম খানও একই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, 'অপ্রীতিকর আবহাওয়ার কারণে বহির্নোঙরে পণ্য খালাস সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। সাগরের অবস্থা স্বাভাবিক হলে কার্যক্রম পুনরায় শুরু হবে।'
এই ব্যাঘাত সক্রিয় দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর কারণে হচ্ছে। এর কারণে চট্টগ্রামসহ আরও তিনটি বিভাগে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর আগামী ২৪ ঘণ্টায়ও বৃষ্টি অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান জানান, বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত শেষ ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। তিনি বলেন, 'বৃষ্টি চলমান রয়েছে এবং বন্দর এলাকায় ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত বহাল রয়েছে।'