চুরি হওয়া তহবিল উদ্ধারে আন্তর্জাতিক চাপ ও লন্ডনে সম্পদ জব্দের প্রশংসা করলেন গভর্নর

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর আজ (২৪ মে) যুক্তরাজ্যে অবৈধ সম্পদ জব্দের ঘটনাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারে রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখা জরুরি।
'আপনারা জানেন, লন্ডন সফরের সময় আমি এবং প্রধান উপদেষ্টা একটি বিবৃতি দিয়েছিলাম আমাদের প্রচেষ্টা নিয়ে। যুক্তরাজ্যে গতকাল যে সম্পদ জব্দ হয়েছে, এতে আমরা খুবই উৎসাহিত,' বলেন তিনি।
আজ রাজধানীর পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) মিলনায়তনে 'ক্রেডিট এনহান্সমেন্ট স্কিম (সিইসি)' উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, "আমাদের যে চুরি করা অর্থ আমরা ফেরত নিয়ে আসব। এটা আমাদের পলিটিক্যাল কমিটমেন্ট। সব সরকারেরই এটা পলিটিক্যাল কমিটমেন্ট থাকা উচিত। এটারই অংশ হিসেবে আমরা এখন দেখছি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও কিন্তু একটা চাপের মধ্যে আছে।"
"ফাইনান্সিয়াল টাইমস বলি, আমাদের লন্ডন টাইমস বলি কিংবা আলজাজিরা বলি- এরা কিন্তু বাংলাদেশের এই অর্থ পাচার করা অর্থ নিয়ে বড় বড় আর্টিকেল লিখছে। আগামীতে আরও আসবে।"
"ব্রিটিশ এমপি উনারাও কিন্তু এখানে সাপোর্ট দিচ্ছেন। ব্রিটিশ প্রেসের বাইরে এনজিও যারা আছে, তারাও এটাকে সাপোর্ট করছে। ফলে আমি মনে করি যে একটা চাপ সৃষ্টি হয়েছে। এটা খুবই এনকারেজিং। এটা সামনের দিকে আরও বেগবান করতে হবে," যোগ করেন তিনি।
অর্থ ফেরত আসতে কতদিন লাগতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, "এটা আসার সাথে সম্পর্কিত নয়। আসবে বিচারের পরে। কিন্তু এখন যেটা হচ্ছে যে তারা এই সম্পদগুলো বিক্রি করতে পারবে না, আইনী প্রক্রিয়া যতদিন না শেষ হয়। কাজেই আমরা লিগ্যাল প্রসেসটা শুরু করব। এটার পরবর্তী ধাপে আমাদের লয়ার থাকবে। কিন্তু সেটা (সম্পদ) যদি তারা বিক্রি করে চলে যায়, তাহলে তো লিগ্যাল প্রসেস শুরু করে আমাদের লাভ হবে না। সুতরাং, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা ধাপ, সম্পদটা আটকে গেল আর নড়াচড়া করতে পারবে না। বিচারক সিদ্ধান্ত নেবেন যে সেই সম্পদ তার না বাংলাদেশের সেটার ভিত্তিতে।"
"আরও বেশ কিছু দেশে এ ধরনের সম্পদ রয়েছে—সেগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমি দুবাই গিয়েছিলাম গত সপ্তাহে। প্ল্যান করছি সিঙ্গাপুরে যাব। আমার লন্ডনে যাওয়ার প্ল্যান আছে। আবার আমাদের ইন্টারন্যাশনাল একটা কনফারেন্স করারও প্ল্যান আছে। এগুলো আমাদের কর্মসূচিতে আছে। এটাকে আমাদের একটিভলি পলিটিক্যাল সার্কেল রাখতে হবে।"
"এটা না রাখলে, পরে ভুলে গেলে এই সম্পদ আসবে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এটা স্মরণ করে দিতে হবে যে, এটা নৈতিকতা বিরোধী। এটা যার সম্পদ, জনগণের সম্পদ ডিপোজিটরদের টাকা- এটা তাদেরকে ফিরত দিয়ে দেওয়া উচিত এবং সেই ব্যাপারে তারা যেন তাদের তৎপরতা দেখান এটাই আমাদের আশা," যোগ করেন গভর্নর।
এদিকে, ব্যাংকিং লিটারেসি বাড়াতে প্রতিটি স্কুলকে ব্যাংকের সাথে যুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
তিনি বলেন, "প্রতিটি স্কুলকে কোনো না কোনো ব্যাংকের আওতায় আপনারা (ব্যাংকগুলো) নিয়ে আসবেন। ব্যাংকের একজন কর্মকর্তাকে প্রতিটি স্কুলে বছরে ২/৩ বার পাঠাবেন। প্রতিটি ক্লাসে তারা ঘুরবে, তাদেরকে (শিক্ষার্থীদের) অ্যাকাউন্ট খোলাবেন, তাদেরকে ব্যাংকিং এর সঙ্গে যুক্ত করে নেবেন।"
গভর্নর বলেন, "স্কুলের শিক্ষার্থীদের ব্যাংকিংয়ে আগ্রহী করে তুলতে তাদের মধ্যে ব্যাংকিং লিটারেসি এবং আগ্রহ জাগিয়ে তোলার বিকল্প নেই। বর্তমানে এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ও লিটারেসি শূন্যের কোঠায়। শিক্ষার্থীরা ২০ টাকা, ৫০ টাকা, ১০০ টাকা রাখুক এরপরেও তাদের নিয়ে কাজ করুন।"
তিনি আরও বলেন, "প্রতিটি ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে ৫০ শতাংশ নারী দিতে হবে। আমাদের স্যোশ্যাল ট্যাবু থেকে নারীদের বের করে নিয়ে আসতে হবে। এজেন্ট ব্যাংকিং এর কর্মকর্তারা বাড়িতে গিয়ে বাসার বেডরুমে যেন চলে যেতে পারে। তারা নারীদের বুঝাবেন যে বাসায় টাকা না রেখে যেন ব্যাংকে রাখে এবং ব্যাংক সুরক্ষিত। দরকার হলে তারা গোপনে ব্যাংক কর্মকর্তাদের কাছে টাকা জমা দেবে।"
তিনি ক্যাশলেস ট্রানজেকশন নিয়ে বলেন, "কীভাবে বাংলাদেশকে ক্যাশলেস ট্রানজেকশনে নিয়ে আসা যায় সে বিষয়ে কাজ হচ্ছে। প্রতি বছর ক্যাশ ম্যানেজমেন্টে আমরা হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করছি। ক্যাশলেস ট্রানজেকশন হলে সব ধরনের ঝামেলামুক্ত এবং ম্যানেজমেন্ট সহজ।"