রেমিট্যান্স ও রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে জুলাইয়ে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত

অর্থনীতির অন্যতম সূচক রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক থাকায় ব্যালেন্স অব পেমেন্টের (বিওপি) চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত দেখা দিয়েছে।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে চলতি হিসাব বা কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স দাঁড়িয়েছে ২৪৫ মিলিয়ন ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল ১৮১ মিলিয়ন ডলার।
চলতি বছরের জুলাইয়ে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ২ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার। আগের বছরের জুলাইয়ে এ অঙ্ক ছিল ১ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার।
অর্থনীতিবিদ ও ট্রেজারি প্রধানরা বলছেন, ডলারের দর স্থিতিশীল থাকায় ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়ছে। এর ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের মার্চে ৩ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স রেকর্ড হয়েছিল।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাইয়ে রপ্তানি আয় বেড়েছে ২৭ দশমিক ১০ শতাংশ। এ মাসে আয় হয়েছে ৪ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার।
একই সময়ে আমদানি বেড়েছে ১৯ দশমিক ৯০ শতাংশ। চলতি জুলাইয়ে আমদানি হয়েছে ৫ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলারের। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন মনে করেন, রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের ধারাবাহিক প্রবাহ বাড়ার কারণে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট উদ্বৃত্ত হয়েছে।
তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বাড়ায় কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স উদ্বৃত্ত অবস্থায় রয়েছে। এ দুই সূচকের কারণে ব্যালেন্স অব পেমেন্টের চলতি হিসাব উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। এটা ইতিবাচক দিক।"
ট্রেড ব্যালেন্স বা বাণিজ্য ঘাটতি কিছুটা বেড়েছে
রপ্তানি বাড়ার সঙ্গে আমদানিও বাড়ছে। ফলে বাণিজ্য ঘাটতি কিছুটা বেড়েছে। তবে আমদানির প্রবৃদ্ধি অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাইয়ে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল ১ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এক বছরে ঘাটতি বেড়েছে ২ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
ড. জাহিদ হোসেন বলেন, "বাণিজ্য ঘাটতি কিছুটা বেড়েছে। তবে এটি নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই, কারণ এ আমদানি বৃদ্ধি অর্থনীতিকে গতিশীল করবে।"
ফাইন্যানশিয়াল অ্যাকাউন্ট ঘাটতি
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম মাসে আর্থিক হিসাব বা ফাইন্যানশিয়াল অ্যাকাউন্ট ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৭১৮ মিলিয়ন ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল ২৬৩ মিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে জুলাইয়ে মিডিয়াম ও লং-টার্ম ঋণ এসেছে ২০২ মিলিয়ন ডলার। আগের বছরের একই সময়ে এসেছিল ২৮৭ মিলিয়ন ডলার। এতে ঋণ প্রবাহ কমেছে ২৯ দশমিক ৬০ শতাংশ।
সিপিডির বিশিষ্ট ফেলো প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান মনে করেন, যত ঋণ আসছে তার চেয়ে বেশি পরিশোধ করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, "রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশে আগের তুলনায় ঋণ আসা কমেছে। যত ঋণ আসছে, তার চেয়ে বেশি পরিশোধ করতে হচ্ছে। এজন্য ফাইন্যানশিয়াল অ্যাকাউন্ট ঘাটতিতে গেছে।"
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, "প্রকল্প বাস্তবায়ন না হলে এসব ঋণও আসবে কম। তবে আশা করা যায়, সামনে পরিবর্তন আসবে। বর্তমানে নেট নেগেটিভ রয়েছে, সামনে হয়তো তা কমে যাবে।"
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ফাইন্যানশিয়াল অ্যাকাউন্ট নেগেটিভ হওয়ায় সামগ্রিক ব্যালেন্সও ঘাটতিতে পড়েছে।
রিজার্ভ বৃদ্ধি
রেমিট্যান্স প্রবাহ ও রপ্তানি বাড়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যমতে, বিপিএম-৬ পদ্ধতি অনুসারে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৫ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার। আর গ্রস রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩০ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলার।
ডলার সরবরাহ বাড়ায় এ সময় ডলারের দর কমতে থাকে। পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক নিলামের মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে ১ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার কিনেছে।
একটি বেসরকারি ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধান বলেন, "বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ায় মূলধন যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে। এতে ডলারের চাহিদাও কমেছে। ফলে ডলার দর কমতে শুরু করেছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক নিলামের মাধ্যমে তা স্থিতিশীল রেখেছে।"