নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা নেই এনসিপির, পুনর্গঠন করে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি; আজ কমিশনের সামনে বিক্ষোভ

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ওপর আস্থা নেই বলে মন্তব্য করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটি বলেছে, বর্তমান কমিশন 'অবৈধ ও পক্ষপাতদুষ্ট', তাই এটি পুনর্গঠন করে দ্রুত স্থানীয় সরকার নির্বাচনের উদ্যোগ নিতে হবে। এই দাবিতে দলটি বুধবার (২১ মে) নির্বাচন কমিশনের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশেরও ঘোষণা দিয়েছে।
মঙ্গলবার (২০ মে) রাত ৯টায় রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি ও কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, 'আমরা অনতিবিলম্বে সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব আমলে নিয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি দাবি জানাচ্ছি।'
তিনি জানান, এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এনসিপির ঢাকা মহানগর শাখার উদ্যোগে আগামীকাল সকাল ১১টায় নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা না থাকার কারণ ব্যাখ্যা করে আখতার হোসেন বলেন, 'বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে "প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২" অনুযায়ী, যা ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার প্রণয়ন করেছে। সে সময় এই আইনটি ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক দল ও পক্ষ প্রত্যাখ্যান করেছিল।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করেছি, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনার আগেই নতুন কমিশন গঠন করা হয়েছে। ফলে বিদ্যমান কমিশনের কার্যক্রমে সেই প্রস্তাবনার প্রতিফলন ঘটবে না। এই কমিশনের ওপর আস্থা রাখা সম্ভব নয় বলেই আমরা মনে করি।'
ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে সমর্থকদের টানা বিক্ষোভের বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, 'এখন যেটা হচ্ছে, একটা বৃহৎ রাজনৈতিক দল ও প্রতিষ্ঠিত দল হিসেবে যে ম্যাচিউরিটি (পরিপক্বতা) জনগণ তাদের কাছ থেকে আশা করে, তারা সেটা দেখাচ্ছে না। শাহবাগ বন্ধ হচ্ছে, নগর ভবন বন্ধ হচ্ছে, যমুনা ঘেরাওয়ের হুমকি দিচ্ছে, নানাভাবে দেশে একটা অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছে। সবাইকেই এই জায়গা থেকে সরে আসা উচিত।'
মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনের শপথ নিয়ে যে সংকট, তা সরাসরি ইসি তৈরি করেছে বলে উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, 'ইসি এই মামলায় কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি এবং আপিলও করেনি। ফলে এটা খুবই স্পষ্ট যে তারা একটা দলের পক্ষ নিচ্ছে, একটা প্রার্থীর পক্ষ নিচ্ছে। এই কমিশনের ওপর জাতীয় নির্বাচন বা যেকোনো নির্বাচনের আস্থা রাখা যাচ্ছে না। নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দিকে যেতে হবে।'
এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে 'অবৈধ' প্রক্রিয়ায় ভোট গ্রহণের ফলে একটি জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এবং এর জন্য নির্বাচন কমিশনের 'পক্ষপাতদুষ্ট' ভূমিকাকেই দায়ী করেন তিনি।
তিনি বলেন, '"ইশরাক হোসেন বনাম শেখ ফজলে নূর তাপস গং" মামলায় নির্বাচন কমিশন বিবাদী হওয়া সত্ত্বেও কোনো আইনগত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি। এর ফলে একতরফা রায় হয়েছে। এমনকি রায় ঘোষণার পর তারা উচ্চ আদালতে কোনো প্রতিকারও চায়নি। বরং মামলার বাদীকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে বলেই আমাদের মনে হয়।'
তিনি আরও বলেন, এর আগেও কমিশন এমন কিছু বক্তব্য দিয়েছে, যা একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের অবস্থানের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ ছিল। আমরা দেখতে পাচ্ছি, কমিশন নিরপেক্ষতার বদলে পক্ষপাতিত্ব করছে।
নির্বাচন কমিশনের এই ভূমিকার উদাহরণ দিয়ে আখতার হোসেন বলেন, '"ইশরাক বনাম তাপস" মামলার রায় ঘোষণার আগেই সংশ্লিষ্ট আইনের অধীনে ১৯ আগস্ট ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছিল, ফলে পুরো মামলাটিই কার্যকারিতা হারিয়েছে। এমনকি রায়ের পর গেজেট প্রকাশের আগে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত না নিয়েই হঠাৎ করে গভীর রাতে গেজেট প্রকাশ করা হয়। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সার্বিক ভূমিকা স্পষ্টতই পক্ষপাতমূলক।'
জনদুর্ভোগ প্রসঙ্গে আখতার হোসেন বলেন, 'জনপ্রতিনিধি না থাকায় নাগরিক সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির বাস্তবায়নেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে "ইশরাক বনাম তাপস" মামলাকে নজির হিসেবে ধরে সারাদেশে অবৈধ নির্বাচনের প্রার্থীরা আদালতের দ্বারস্থ হয়ে একটি সংকটময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে।'
এই সংকট নিরসনে স্থানীয় সরকার নির্বাচনকেই একমাত্র সমাধান হিসেবে দেখছে এনসিপি। তবে দলটি মনে করে, 'ফ্যাসিবাদী আইনে' গঠিত বর্তমান 'পক্ষপাতদুষ্ট' নির্বাচন কমিশনের পক্ষে এই নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করা সম্ভব নয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী, দক্ষিণাঞ্চলের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আদিব আরিফ প্রমুখ।