কার ইঙ্গিতে ইসির সামনে বিক্ষোভ হচ্ছে: প্রশ্ন বিএনপি নেতা ফারুকের

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনের শপথ আটকে রাখার অভিযোগ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক।
সেইসঙ্গে নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে নির্বাচন কমিশনের সামনে হওয়া আন্দোলন কী কারণে এবং কার ইঙ্গিতে হচ্ছে, সেই প্রশ্নও রাখেন তিনি।
আজ বুধবার (২১ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবে তৃণমূল নাগরিক আন্দোলন আয়োজিত এক সভায় তিনি এ অভিযোগ ও প্রশ্ন তোলেন।
জয়নুল আবদিন ফারুক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'শেখ হাসিনার বিচারের প্রতি আমাদের যেমন আস্থা ছিল না, তেমনি এখনো ভরসা পাচ্ছি না।'
সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের বিদেশ যাত্রা, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আইভী রহমানকে গ্রেপ্তার ও অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তারের পর জামিন দেওয়ার মতো দেশে একের পর এক নাটক চলছে উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, 'এগুলো জনগণের মূল দাবি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা কি না ভাববার বিষয়।'
'তাহলে গ্রেপ্তার করারই বা কী দরকার ছিল, আর জামিন দেবারও কী দরকার ছিল?', প্রশ্ন তোলেন তিনি।
বিএনপির এই নেতা বলেন, '৯ মাসে অন্তর্বর্তী সরকারের পরিচালনায় বিচার বিভাগের উপর মানুষের আস্থা, হাসিনা আমলের চেয়েও বেশি হওয়ার কথা ছিল।' কিন্তু বর্তমানে বিচারকদের রায় প্রভাবিত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রশ্ন রেখে সাবেক এই বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ বলেন, 'আপনার হাতে ক্ষমতা আল্লাহ দিয়েছেন, জনগণ পাশে আছে। তাহলে কীসের এত ভয়? আপনার তো ভয় পাওয়ার কথা না। কারণ সবাই আপনার সঙ্গে, শুধু আওয়ামী লীগ ছাড়া। তাহলে কেন ইশরাক শপথ নিতে পারছেন না? ইশরাকের সমর্থকদের কেন সিটি করপোরেশনে তালা দিতে হলো? ইশরাক কেন আজ মৎস্য ভবন থেকে শাহবাগ অভিমুখে মিছিল করছেন? আপনারা যদি কারও কান কথা শুনে ইশরাকের শপথ গ্রহণকে বন্ধ করে থাকেন, তাহলে এটি খুব ঘৃণিত কাজ করেছেন।'
তিনি প্রশ্ন রাখেন, 'যে নির্বাচন কমিশন একটি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, যার কোনো সমালোচনা ইতোমধ্যে হয়নি, ঠিক তখনই নির্বাচন কমিশন নিয়ে কেন, কী কারণে এবং কার ইঙ্গিতে কমিশনের সামনে বিক্ষোভ হচ্ছে?'
তিনি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, 'আপনাদের ওপর আস্থা, আপনাদের ওপর বিশ্বাস সবকিছুই মানুষ আজ হারিয়ে ফেলেছে। এসব হারিয়ে যাওয়ার পর কী হবে? কেউ লন্ডন চলে যাবে, কেউ আমেরিকা চলে যাবে। আপনার আশপাশের যারা কান কথা দিয়ে আপনাকে নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছে, তারা তখন কেউই আপনার পাশে থাকবে না। আপনার সুনাম এবং আপনার অর্জনকে এরা ক্ষুণ্ন করে চলে যাবে।'
জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সহসাধারণ সম্পাদক এবং আয়োজক সংগঠনের সভাপতি মফিজুর রহমান লিটনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন- বিএনপির শিশু বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামান, নির্বাহী কমিটির সদস্য আ ক ম মোজাম্মেল হক, তাঁতী দলের নেতা কাজী মনিরুজ্জামান মনির, কৃষক দল নেতা আব্দুল্লাহ আল নাইম, মৎসজীবী দলের সাবেক নেতা ইসমাইল হোসেন সিরাজী প্রমুখ।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, 'শুনতেছি অনেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন স্থানীয় সরকার নির্বাচনও চাচ্ছে। এটা সম্ভব না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তৈরি হয় শুধু জাতীয় নির্বাচনের জন্য। আমরা সবাই জানি, স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে এক বছরের বেশি সময় লাগবে। এসব বলার মানে, জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা করা।'
তিনি আরও বলেন, 'গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে নানা বাধা তৈরি করা হচ্ছে। সংস্কার আর গণতন্ত্রকে মুখোমুখি দাঁড় করানো হচ্ছে। অনেক রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে নানা কায়দায় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অভিযাত্রাকে বিলম্বিত করতে চায়।'
বাংলাদেশের কিছু রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তি নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে কিংবা গোষ্ঠীর স্বার্থে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করতে চায় বলে মন্তব্য করেন নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, 'অনেকে বলে আমরা নাকি সংস্কার চাই না, আমাদের চেয়ে বেশি সংস্কার তো কেউ চায় কি না, এমন প্রশ্ন তোলেন তিনি।'