ডাকসু নির্বাচন: কেমন হবে ভোটকেন্দ্র, প্রার্থীদের মানতে হবে যেসব আচরণবিধি

দীর্ঘ ৬ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। এতে কারা ভোটার হবেন, প্রার্থী কীভাবে হবেন, ভোটকেন্দ্র কোথায় হবে, প্রচারণাতেই বা কী কী মানতে হবে- এসব নিয়ে শিক্ষার্থীদের স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সর্বশেষ ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৯ সালে। এই নির্বাচনে প্রার্থীর সর্বোচ্চ বয়স ছিল ৩০ বছর। তবে আসন্ন ডাকসু নির্বাচনে প্রার্থীর সর্বোচ্চ বয়সসীমা তুলে দেওয়া হয়েছে।
গত মঙ্গলবার (২৯ জুুলাই) ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ১৯ আগস্ট পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে। প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে ২৫ আগস্ট। আর ভোটগ্রহণ হবে ৯ সেপ্টেম্বর।
ভোটার বা প্রার্থী হতে পারবেন যারা
গত ১৬ জুন অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নির্বাচনে কেবল পূর্ণকালীন শিক্ষার্থীরাই ভোটার বা প্রার্থী হতে পারবেন। যারা ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়ে বর্তমানে স্নাতক, মাস্টার্স বা এমফিল পর্যায়ে অধ্যয়নরত এবং কোনো আবাসিক হলে অবস্থানরত বা সংযুক্ত, তারাই নির্বাচনে ভোটার বা প্রার্থী হতে পারবেন।
সান্ধ্যকালীন, পেশাদার, এক্সিকিউটিভ মাস্টার্স, ডিপ্লোমা, সার্টিফিকেট ও ভাষা কোর্সের শিক্ষার্থীরা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ও সংযুক্ত কলেজ/ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
প্রতি ৭৫ জন শিক্ষার্থীর জন্য একটি বুথ
ডাকসুর প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, প্রতি ৭৫ জন শিক্ষার্থীর জন্য একটি বুথ রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। সে অনুযায়ী প্রায় ৪০ হাজার ভোটারের জন্য ৫০০টির বেশি বুথ স্থাপন করা হবে। প্রত্যেক ভোটারের ভোট দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ ৫ মিনিট সময় বরাদ্দ থাকবে।
প্রতিটি হলের জন্য থাকবেন দুইজন করে রিটার্নিং কর্মকর্তা, যাদের নিয়োগ দেবে ডাকসু নির্বাচন কমিশন। পোলিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন শিক্ষকরা এবং তাদের সহায়তায় থাকবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে কমপক্ষে একজন করে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের সদস্য উপস্থিত থাকবেন এবং পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়া সমন্বয় করবেন প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা।
ভোটকেন্দ্র কোথায়?
আগামী ৯ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ২০১৯ সালের নির্বাচনের তুলনায় এবার ভোটের সময় এক ঘণ্টা বাড়ানো হয়েছে। এবার প্রতিটি ভোটকেন্দ্র থাকবে হলের বাইরে। ১৯টি আবাসিক হলকে ৬টি কেন্দ্রে ভাগ করে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
এ বছর সংশোধিত বিধিমালায় নতুন চারটি পদ যুক্ত করা হয়েছে। একজন শিক্ষার্থী কেন্দ্রীয় সংসদে ২৮টি পদে এবং হল সংসদে ১৩টি পদসহ সর্বমোট ৪১টি পদে প্রার্থী নির্বাচন করবেন।
প্রার্থীর তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পর নির্বাচন কমিশন ব্যালট পেপারের মডেল প্রকাশ করবে। একইসঙ্গে একটি ভিডিওবার্তার মাধ্যমে ভোট দেওয়ার প্রক্রিয়াও দেখানো হবে।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রে প্রতিটি ভোটার তথ্যের পাশে কিউআর কোডের মাধ্যমে ভোটারের যাবতীয় তথ্য থাকবে। কোনো ভোটারের পরিচয় সম্পর্কে সন্দেহ হলে কিউআর কোড স্ক্যানের মাধ্যমে কেন্দ্রে তা যাচাই করা যাবে।
মনোনয়ন সংগ্রহ ও জমার সময়সীমা
আগামী ১২ আগস্ট থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হবে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ১৯ আগস্ট বিকেল ৩টা।
মনোনয়ন ফরমের জন্য নামমাত্র মূল্য (টোকেন মানি) রাখা হতে পারে। তবে এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
অধ্যাপক জসীম উদ্দিন জানান, হল সংসদের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দেওয়া হবে সংশ্লিষ্ট হল থেকেই। আর কেন্দ্রীয় সংসদের প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়া হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবন থেকে।
আচরণবিধি: প্রার্থী ও ভোটারদের যা মানতে হবে
নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহীদের জন্য প্রার্থিতা ও প্রচারণা সংক্রান্ত বেশ কিছু আচরণবিধি নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন। যেমন- মনোনয়নপত্র জমা, প্রত্যাহার বা নির্বাচনী প্রচারণায় শোভাযাত্রা, শোডাউন বা মিছিল করা যাবে না। মোটরসাইকেল, রিকশা, ঘোড়ার গাড়ি, হাতি বা ব্যান্ডপার্টি ব্যবহার নিষিদ্ধ।
প্রার্থীর তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার দিন থেকে ভোটের আগের রাত পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত প্রচারণা চালানো যাবে। তবে রাত ১০টার পর মাইক ব্যবহার করা যাবে না।
সভা, সমাবেশ বা শোভাযাত্রার জন্য কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা আগে অনুমতি নিতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার চালানো যাবে, তবে তা হতে হবে আইনসিদ্ধ ও ইতিবাচক পদ্ধতিতে।
ছেলে প্রার্থীরা মেয়েদের হলে ও মেয়ে প্রার্থীরা ছেলেদের হলে প্রবেশ করতে পারবেন শুধু প্রজেকশন সভায় যোগদানের উদ্দেশ্যে এবং রিটার্নিং অফিসারের অনুমতি নিয়ে। প্রতিটি হলে একটি প্রজেকশন সভা এবং বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে সর্বোচ্চ তিনটি সভা আয়োজন করা যাবে। তবে সংশ্লিষ্ট হলের নিজস্ব নিয়ম অনুসারে রিটার্নিং অফিসারের অনুমতিতে ব্যতিক্রম হতে পারে।
শ্রেণিকক্ষ, করিডোর, পাঠাগার বা পরীক্ষা কক্ষে কোনো সভা, প্রচারণা বা মিছিল নিষিদ্ধ। ধর্মীয় উপাসনালয়েও নির্বাচনী প্রচার চালানো যাবে না। প্রচারপত্রের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র সাদা-কালো পোস্টার, লিফলেট বা হ্যান্ডবিল ছাপানো ও বিতরণ করা যাবে।
ব্যক্তিগত আক্রমণ, গুজব, উসকানিমূলক বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে এমন বক্তব্য নিষিদ্ধ। এসব বক্তব্য গণমাধ্যম বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও প্রচার করা যাবে না।
ভোটের দিনের নির্দেশনা
ভোটের দিন ভোটারদের আনা-নেওয়ার জন্য যানবাহন ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, ভোটার ও অনুমতিপ্রাপ্ত ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে না। ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের অনুমতি থাকবে কেবল নির্বাচনী কর্মকর্তা, প্রার্থী, পোলিং এজেন্ট ও অনুমোদিত ব্যক্তিদের। ভোটের সময় মোবাইল ফোন বা কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার এবং বুথের ভেতরে ছবি তোলা নিষিদ্ধ।
গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য যেসব বিধি-নিষেধ
গণমাধ্যমকর্মীরা চিফ রিটার্নিং অফিসারের দেওয়া পরিচয়পত্র দেখিয়ে এবং সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের অনুমতি নিয়ে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে ও ছবি তুলতে পারবেন। তবে বুথে প্রবেশ করতে পারবেন না। বুথ ছাড়া ভোটকেন্দ্রের ভেতরে লাইভ সম্প্রচার চালানো যাবে।
একই সময়ে একটি কেন্দ্রের ভেতরে একটি টিভি চ্যানেলের দুজন এবং একটি সংবাদমাধ্যমের একজন প্রতিনিধি থাকতে পারবেন।
আচরণবিধি ভঙ্গ করলে শাস্তি
নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার লিখিত অভিযোগ পেলে বা স্বপ্রণোদিতভাবে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে পারবেন। শাস্তি হিসেবে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা জরিমানা, প্রার্থিতা বাতিল, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার কিংবা রাষ্ট্রীয় বা বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী অন্য যেকোনো শাস্তি দেওয়া হতে পারে।