অবশেষে কুয়েটের ভিসি ও প্রো-ভিসিকে অব্যাহতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ কামাল ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ শরীফুল আলমকে অপসারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব এ এস এম কাসেম স্বাক্ষরিত দুটি পৃথক প্রজ্ঞাপনে তাদেরকে দায়িত্ব থেকে অপসারণ করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, 'খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০৩'-এর ১০(২) ধারা অনুযায়ী উপাচার্য এবং ১২(২) ধারা অনুযায়ী উপ-উপাচার্যকে প্রত্যাহার পূর্বক অব্যাহতি প্রদান করে নিজ নিজ বিভাগে প্রত্যাবর্তন করা হলো।
কুয়েট শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ ৬৫ দিনের আন্দোলন এবং ৫৮ ঘণ্টার অনশনের পর তাদের দাবি পূরণ করে বুধবার (২৩ এপ্রিল) দিবাগত রাতে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যকে অব্যাহতি প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু করে সরকার।
ওই রাতেই তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. মামুন অর রশিদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতির প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।
আরও বলা হয়, অনতিবিলম্বে একটি সার্চ কমিটি গঠন করে এ দুটি পদে নতুন নিয়োগ দেওয়া হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার স্বার্থে জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকদের মধ্য থেকে একজনকে সাময়িকভাবে উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হবে।
১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রদল ও বহিরাগত বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এতে প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।
এ ঘটনার পর থেকেই শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতা এবং ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি ফিরিয়ে আনার চেষ্টায় মদত দেওয়ার অভিযোগ এনে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন।
পরবর্তীকালে ২১ এপ্রিল সোমবার বিকেল ৩টায় শিক্ষার্থীরা অনশন শুরু করেন। ৩২ জন শিক্ষার্থী অনশনে অংশ নেন।
তাদের মধ্যে পাঁচজন অসুস্থ হয়ে মেডিকেলে ভর্তি হন এবং দুজন বাড়িতে ফিরে যান।
২৩ এপ্রিল থেকে অব্যাহতির প্রক্রিয়া শুরু হলেও শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) দিন পর্যন্ত উপাচার্য ড. মাছুদ কামাল ও উপ-উপাচার্য ড. শেখ শরীফুল আলম পদত্যাগ করেননি।
দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে তাদের পদত্যাগের খবর প্রকাশিত হলেও, তা ছিল তথ্য মন্ত্রণালয়ের এক ভুল উদ্ধৃতির ভিত্তিতে।
মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদত্যাগ বা অপসারণের বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য ছিল না।
পদত্যাগ বিষয়ে জানতে চেয়ে শুক্রবার সকালে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড ভিসি মাছুদ কামালের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি সংক্ষেপে বলেন, [পদত্যাগপত্র] 'দেননি'।
উপ-উপাচার্য শেখ শরীফুল আলমও বলেন, তিনি পদত্যাগ করেননি। বরং তিনি অব্যাহতির সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে অধিকতর তদন্তের আহ্বান জানিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে চিঠি দিয়েছেন।
কুয়েটের একাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তার বরাতে জানা যায়, বুধবার রাতে অপসারণ প্রক্রিয়া শুরুর খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের পর বৃহস্পতিবারও উপাচার্য ক্যাম্পাসের বাংলোতেই অবস্থান করেন এবং একাধিক দাপ্তরিক নথিতে স্বাক্ষর করেন।
তারা জানান, ওই দিন তিনি কয়েকজন কর্মকর্তাকে ব্যাকডেটে (পুরোনো তারিখে) বিভিন্ন দপ্তরে বদলির আদেশ দেন এবং চারজনের ব্যাকডেট নিয়োগেও স্বাক্ষর করেন।
এ স্বল্প সময়ে উপাচার্য যে-সব কার্যক্রম সম্পন্ন করেন, তার বেশিরভাগই ছিল নিয়োগ, আর্থিক লেনদেন ও বদলিসংক্রান্ত নথিপত্রে স্বাক্ষরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।