ট্রাম্প-মাখোঁর বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনা, তবে দেখা গেল ইউক্রেন নিয়ে স্পষ্ট মতপার্থক্যও

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনা হলেও, ইউক্রেন সংকট নিয়ে তাদের কিছু জায়গায় মতপার্থক্য রয়েছে। সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুই নেতার এক বৈঠকে রাশিয়ার সঙ্গে দ্রুত যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ট্রাম্পের প্রচেষ্টার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মধ্যে মতবিরোধ আরও স্পষ্ট হয়েছে।
দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও বৈঠকে মাখোঁ ইউক্রেন ইস্যুতে ট্রাম্পের সঙ্গে মতানৈক্য প্রকাশ করেন, যদিও আলোচনার পুরো সময় দুজনই হাসিখুশি ও বন্ধুত্বপূর্ণ ছিলেন।
ট্রাম্প রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে 'স্বৈরশাসক' বলতে অস্বীকৃতি জানালেও, গত সপ্তাহে তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে 'স্বৈরশাসক' বলে উল্লেখ করেছিলেন।
অন্যদিকে, মাখোঁ এ সংঘাতে রাশিয়াকে 'আগ্রাসী শক্তি' হিসেবে অভিহিত করে বলেন, 'প্রেসিডেন্ট পুতিন শান্তি লঙ্ঘন করেছেন।'
ট্রাম্প রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে দ্রুত যুদ্ধবিরতি চেয়ে একটি চুক্তি করানোর চেষ্টা করছেন এবং প্রয়োজনে মস্কো গিয়ে পুতিনের সঙ্গে দেখা করতেও প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন। তবে মাখোঁ দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের পক্ষে, যেখানে প্রথমে যুদ্ধবিরতি এবং পরে নিরাপত্তা নিশ্চয়তার ভিত্তিতে চুক্তি হবে।
তিনি বলেন, 'আমরা দ্রুত শান্তি চাই, তিনিও (ট্রাম্প) চান। তবে দুর্বল কোনো চুক্তি নয়—এটি অবশ্যই যাচাই-বাছাই ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে করতে হবে।'
দুই নেতা শান্তিচুক্তি হলে ইউরোপীয় শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে একমত হয়েছেন। মাখোঁ বলেন, 'তারা ফ্রন্টলাইনে থাকবে না বা কোনো লড়াইয়ে জড়াবে না, শুধু শান্তিরক্ষার দায়িত্ব পালন করবে।' ট্রাম্প জানান, তিনি মাখোঁর এই ধারণাকে সমর্থন করেন এবং রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনেরও এতে আপত্তি নেই।
মাসখানেক আগে ক্ষমতায় আসার পর ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা প্রথম ইউরোপীয় নেতা হলেন মাখোঁ। ট্রাম্প ও মাখোঁ দুজনেই তাদের প্রথম মেয়াদে গড়ে ওঠা পারস্পরিক সম্পর্ককে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন।
ওভাল অফিসের বৈঠকের এক পর্যায়ে ট্রাম্প বলেন, ইউরোপ ইউক্রেনকে দেওয়া সমস্ত সহায়তা ঋণ হিসেবে দিয়েছে। তখন মাখোঁ ট্রাম্পের হাত ধরে বলেন, 'সত্যি বলতে কী…,'—এরপর সতর্কতার সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ওই দাবি সংশোধন করে দেন।
ট্রাম্প জানান, ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ ভাগাভাগির মাধ্যমে যুদ্ধকালীন অস্ত্র সরবরাহের খরচ ফেরত পাওয়ার বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, জেলেনস্কি এ সপ্তাহ বা পরের সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র সফরে এসে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।
ট্রাম্প প্রশাসন ইউক্রেনের সঙ্গে এমন একটি চুক্তি করতে চায়, যাতে দেশটির খনিজ সম্পদের রাজস্বের একটি অংশ দিয়ে বাইডেন প্রশাসনের সময় দেওয়া সামরিক সহায়তার কিছুটা ফেরত আসে। তবে জেলেনস্কি গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ৫০০ বিলিয়ন ডলারের খনিজ সম্পদ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
ইউক্রেন রাশিয়াকে কিছু ভূখণ্ড ছেড়ে দেবে কি না—এমন প্রশ্নে ট্রাম্প বলেন, 'দেখা যাক কী হয়।' তবে মাখোঁ স্পষ্ট করে জানান, যেকোনো চুক্তিতে ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করতে হবে।