Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Sunday
August 10, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
SUNDAY, AUGUST 10, 2025
সত্যিকারের নায়কেরা যখন রোড ডিভাইডারে অপেক্ষায়…

ফিচার

সালেহ শফিক
05 August, 2023, 10:30 am
Last modified: 05 August, 2023, 10:53 am

Related News

  • মধ্যরাতে মহাখালী ফ্লাইওভারের ডিভাইডারে প্রাইভেটকারের ধাক্কা, নিহত ২
  • নওগাঁর আম রপ্তানি বদলে দিতে পারে উত্তরের কৃষি অর্থনীতির চিত্র 
  • গাজা যুদ্ধবিরতি,জিম্মি মুক্তির আলোচনায় কাতারে পাঠাচ্ছে প্রতিনিধিদল পাঠাচ্ছে ইসরায়েল
  • হামলা চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ‘কিছুই অর্জন করতে পারেনি’: খামেনি
  • ট্রাম্পের অনুরোধে ইরানকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করিয়েছে কাতার

সত্যিকারের নায়কেরা যখন রোড ডিভাইডারে অপেক্ষায়…

সালেহ শফিক
05 August, 2023, 10:30 am
Last modified: 05 August, 2023, 10:53 am

রোড ডিভাইডারে আশ্রয় নেওয়া স্বজনদের কয়েকজন। ছবি: সালেহ শফিক/ টিবিএস

রুস্তম শেখ ঢাকায় আসতে চান না। ধোঁয়া, ধুলা, গাড়ির শব্দে তার মাথা ধরে যায়। নাতির জন্য আসতে হলো এবার। কাতারে যাবে বড় মেয়ের বড় ছেলে শরিফুল। তার 'মেডিক্যাল' করাতে এসেছেন। রুস্তম শেখ নিজেও দু-দফায় বিদেশ গেছেন। প্রথমবার ১৯৭৯ সালে যান সিঙ্গাপুর। ৪ বছর থেকে দেশে চলে এসেছিলেন। তারপর ৯৬' সালে গিয়েছিলেন সৌদি আরব। সেখানে ছিলেন ছয় বছর। তার বাড়ি সরাইল। তিন মেয়ে ১ ছেলের জনক রুস্তম শেখ। বয়স সত্তর ছুঁই ছুঁই হলেও শক্তপোক্ত আছেন।

নাতি শরিফুলের বয়স সতেরোর কিছু বেশি। বাবার কর্জের বোঝা টানতে অল্প বয়সেই তাকে বিদেশে যেতে হচ্ছে। তিন ঘণ্টা আগে নাতি ঢুকেছে মেডিক্যাল করাতে। রুস্তম শেখ রোদের মধ্যে হাঁটাহাঁটি করে সময় পার করছেন। ১৯-২০ বছর আগে তিনি বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন শাহবাজপুরের এক স্বচ্ছল পরিবারে। শরিফুলের বাবা তখন চাউল আর কাঠের ব্যবসা করত। বেশ টাকা আমদানি করতেন মাসে মাসে। রুস্তম শেখ বড় জামাইয়ের স্বচ্ছলতা বোঝালেন এভাবে, 'আঙুর খাওয়াতে খাওয়াতে ছেলের (শরিফুলের) ঠান্ডা লাগিয়ে ফেলেছিল।'

কিন্তু, আদার ব্যাপারির জাহাজের খবর নেওয়ার ইচ্ছা জাগল। আর তাতেই বাঁধল গোল। বড় জামাই একটা ব্রিক ফিল্ড (ইটভাটা) করলেন ৫-৬ বছর আগে। তাতে কোটি টাকার বেশি লগ্নী করতে হলো। এর অধিকাংশই তাকে ধার করতে হয়েছিল। সে ব্যবসায় লাভের মুখ দেখেননি কোনোদিন। হিসাব করে দেখলেন, কর্জের পরিমাণ ৬০ লাখে দাঁড়িয়েছে। পাওনাদাররা ক্রমাগত তাগাদা দিয়ে যাচ্ছিল, কিন্তু শরীফুলের বাবার টাকা শোধ করার কোনো উপায় ছিল না। শেষে ৬টি মামলা দায়ের করা হলো তার বিরুদ্ধে। পালালেন বাড়ি থেকে।

রুস্তম শেখ ছেলেকে ছয় বছর আগে পাঠিয়েছিলেন কাতার। ছেলে বোনকে (শরীফুলের মাকে) আর্থিক সাহায্য দিয়ে আসছে অনেক দিন ধরেই। শেষে রুস্তম শেখ তাকে বলে পাঠালেন, 'এভাবে কয়দিন চালাবা? তুমি বরং শরিফুলকে কাতার নিয়ে যাও। একটা কাজে লাগাও।'

ছেলে যখন ভিসা পাঠাল তখন শরিফুলের এসএসসি পরীক্ষার মাস দুই বাকী। শরিফুল নানার কাছে এসে কান্নায় ভেঙে পড়ল, 'এতদিন পড়লাম নানু, পরীক্ষাটা না দিয়ে গেলে, সারাজীবন আন্ডার-মেট্রিক হয়ে থাকব। আপনি মামাকে বলেন, পরীক্ষাটা শেষ করার পর ব্যবস্থা করে দিতে।' রুস্তম শেখের চোখও ভিজে উঠেছিল। তিনি ছেলেকে বলে পাঠালেন, আর মাস তিনেক অপেক্ষা করতে। শেষে এই এখন যখন পরীক্ষা শেষ হয়েছে, তখন নাতিকে নিয়ে এসেছেন মেডিক্যাল করাতে।

ভিড় দেখে কৌতূহল জাগে

ইস্কাটন গার্ডেনে অফিস। মিরপুর থেকে বাসে চড়ে এসে নামি বাংলামোটর। চার রাস্তার ঠিক মুখেই রূপায়ন ট্রেড সেন্টার। সুদৃশ্য, সুউচ্চ ভবন। মাসখানেক ধরে এর গেইটে দেখি মানুষের জটলা। অনেক লোককে উল্টোদিকের রোড ডিভাইডারেও বসে থাকতে দেখি। কৌতূহল জাগে, এতো মানুষ কি করে এখানে? জিজ্ঞেস করে জানলাম, এখানে মেডিক্যাল (স্বাস্থ্য পরীক্ষা) করায়। কোন দেশের? কাতারের।

কাতার সরকার কোভিড মহামারি ও ২০২২ সালের বিশ্বকাপের কারণে অনেকদিন নতুন ভিসা দেওয়া বন্ধ রেখেছিল। গেল মে মাসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কাতার ইকোনমিক ফোরামে যোগদানের পর আবার নতুন করে ভিসা দেওয়ার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। তাই জুনের মাঝামাঝি থেকে প্রতিদিনই অনেক লোক ভিড় করে মেডিক্যাল করাতে।

প্রখর রোদে অপেক্ষমাণ কাতার গমনেচ্ছুকরা। ছবি: সালেহ শফিক/ টিবিএস

রুপায়ন সেন্টারের ১১ তলায় স্টিমজ হেলথ কেয়ার – কাতার গমন ইচ্ছুকদের মেডিক্যাল করানোর ব্যবস্থা করে। কিউএমসি নামে কাতার পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ১৩টি পয়েন্ট প্রতিষ্ঠা করেছে; বাংলাদেশে কাতার মেডিক্যাল সেন্টার বা কিউএমসি পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে স্টিমজ হেলথ কেয়ার। স্টিমজের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অনলাইনে পুরো প্রক্রিয়াটি সরাসরি তত্ত্বাবধান করে কাতারের মিনিস্ট্রি অব ইন্টেরিয়র।

২০১৭ সালে সৌদি আরবের নেতৃত্বে গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিলের (জিসিসি) ৩টি দেশ কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। পরের তিন বছর এ টানাপোড়েন বহাল থাকে। তখন থেকে গামকার (জিসিসি মেডিক্যাল সেন্টারস অ্যাসোসিয়েশন) বিকল্প খুঁজতে থাকে কাতার। তার ফলস্বরূপ কিউএমসি প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

রোড ডিভাইডারে আমিন উদ্দিন

রাতে ডিউটি ছিল আমিন উদ্দিনের। তিনি একজন নিরাপত্তা রক্ষী। ২১ বছর আগে ঢাকায় এসে যখন প্রথম এই কাজে ঢুকেছিলেন তখন বেতন পেতেন ১,৮০০ টাকা। এখন পান ৮,০০০ টাকা। তবে তার আরো কিছু বাড়তি আয় আছে। সেটা যোগ করলে দিনে তার গড় আয় ৬০০ টাকা। তিন ছেলে ১ মেয়ে নিয়ে থাকেন মোহাম্মদপুরে।

ঢাকায় আসার আগে মাটি কাটার কাজ, রাস্তা বানানোর কাজ করেছেন। কিছু টাকা হাতে আসার পর মুদি দোকান দিয়েছিলেন স্থানীয় বাজারে। কিন্তু অনেক টাকা বাকী পড়ে যাওয়ায়- ব্যবসা আর দাঁড় করাতে পারেননি। বড় দুই ছেলের একজন গার্মেন্টে কাজ করে, আরেকজন বাসের কন্ডাক্টর। তারা নিজেদের সংসার আলাদা করে নিয়েছেন। ছোট ছেলে যাকে তিনি মেডিক্যাল করাতে নিয়ে এসেছেন, সে এইচএসসি পাশ করেছে। হাতের কাজের (ইলেকট্রিক) প্রশিক্ষণও নিয়েছে। ড্রাইভার, প্লাম্বার, কন্সট্রাকশন লেবার, পেইন্টারের সঙ্গে ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রিরও ভালো চাহিদা আছে কাতারে।

দালাল মারফত ছেলেকে কাতার পাঠাতে যাচ্ছেন আমিন উদ্দিন। ৪ লাখ টাকা খরচ হবে, বিমানভাড়া আলাদা।  কাজের উদ্দেশে যারা কাতার যায়, তাদের জন্য ভিসার প্রধান দুটি ধরন - ফ্রি ভিসা ও কোম্পানি ভিসা। ফ্রি ভিসা বলে অফিসিয়াল কোনো ভিসা নেই, এ ভিসার অর্থ হলো- কর্মীর পছন্দমতো যেকোনো জায়গায় কাজ করার সুযোগ থাকে। কোম্পানি ভিসায় সাধারণত নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান ভিন্ন – অন্য কোথাও কাজ করতে পারেন না কর্মী। ফ্রি ভিসায় অধিক উপার্জনের সুযোগ যেমন আছে, আবার কাজ না পেলে বসেও থাকতে হয়। কোম্পানি ভিসায় বেতন কম হলেও কাজ বাঁধা। সাধারণত এক্ষেত্রে বেতন শুরু হয় বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩০ হাজার টাকা থেকে। এছাড়া ৩ মাস-মেয়াদি ভিজিট ভিসা নিয়েও অনেকে কাতার যায়, তারপর আবার রিনিউ করায়।

আমিন উদ্দিন ছেলের জন্য কোম্পানি ভিসা যোগাড় করতে পেরেছেন। সিরিয়াল পড়েছে দেড়টার সময়, এসেছেন সকাল ৯টায়। দুই জনেই ডিভাইডারে বসে আছেন। রাস্তায় গাড়ির চাপ খুব। মাঝে মধ্যে ধুলা এসে নাকে-মুখে ঢুকে যাচ্ছে। কখনো কখনো বাস পা ঘেঁষে ছুটে যাচ্ছে। তবু মেট্রোরেলের ভায়াডাকটের সুবাদে এখানেই কিছু ছায়া মেলে।

জানতে চাইলাম, টাকা যোগাড় করবেন কিভাবে? আমিন উদ্দিন বললেন, 'মেডিক্যাল পাশ হইলে ট্যাকা যোগাড় হইয়্যা যায়। ধার চাইলেও লোকজন দেয়, সবাই বুঝে- বিদেশ গেলে ট্যাকা পাইতে অসুবিধা হইব না।'

আায়শা বেগমও বসেছিলেন ডিভাইডারে। ছোট ছেলের মেডিক্যাল করাতে এসেছেন। আায়শার বড় ছেলে ভিসার ব্যবস্থা করেছে। বড় ছেলেটা ৭-৮ বছর হলো আছে কাতারে। মাঝখানে একবার এসে বিয়ে করে গেছে। তবে টাকাপয়সা বেশি পাঠাতে পারেনি কোম্পানির কাজ করত বলে। কোম্পানি কোনো কোনো মাসে বেতনও দেয়নি। তবু ছেলে যা পাঠিয়েছে, তা দিয়ে একটা পাকা ঘর তোলা গেছে।

মায়েরাও আসেন সন্তানদের সঙ্গে। ছবি: সালেহ শফিক/ টিবিএস

ডোবা পেয়েছিলেন শ্বশুরের থেকে। সেটা ভরাট করতেও বেশ কিছু খরচ হয়েছে। আয়শার স্বামী বর্গা নিয়ে জমি চাষ করেন। কিছু গরু-ছাগল আছে বাড়িতে। সেগুলো পরিচর্যা করতে হবে বলেই ছেলের সঙ্গে আসতে পারেননি আজ। তাই আয়েশা সাথে এসেছেন।

বড় ছেলে ডেন্টিংয়ের বা গাড়িতে গর্ত হওয়া সারানোর কাজ শিখে গিয়েছিল। ছোট ছেলেটা পেইন্টিংয়ের কাজ শিখেছে। টাকা নিয়ে আয়শার টেনশন বেশি নেই, কারণ বড় ছেলেই টাকার যোগান দিচ্ছে। এখন মেডিক্যালটা ভালোয় ভালোয় হয়ে গেলেই বাঁচেন।

মুন্সিগঞ্জের চিতলিয়ার শামসুদ্দিন বকাউলকে পেলাম ট্রেড সেন্টারের গেটের কাছে। তারও সিরিয়াল বেশ পেছনে। বয়স ৪৫, চার ছেলেমেয়ে নিয়ে সংসার। বললাম, এতো বয়সে  যাচ্ছেন? তিনি উত্তর দিলেন, '২০০২ সালে সৌদি আরব গিয়ে ১৫ বছর থেকে আসছি। ছোট ভাইকে তখন দুইবার বিদেশ যাওয়ার টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু, সে একবারও সফল হয়নি। অনেকগুলো টাকা নষ্ট হয়েছে তার কারণে। তারপর ২০১৭ সালে পাকাপাকিভাবে দেশে চলে আসি। হাতে কিছু টাকাও ছিল সেসময়।  রাখি (স্টক) মালের ব্যবসা শুরু করি।'

আলুর ব্যবসাতে শামসুদ্দিন টাকা লগ্নি করেছিলেন কয়েকদফায়। রাখি মালের ব্যবসা হলো- যখন যোগান প্রচুর তখন কোল্ড স্টোরেজে আলু রেখে দিয়ে দাম বাড়লে বাজারে ছাড়া। পাটের কারবারেও টাকা খাটিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, টাকা তাকে ধরা দেয় না, উল্টো লোকসান গুনতে হয়। এভাবে সঞ্চয় ফুরিয়ে আসে। তখন কাতারে থাকা খালাতো ভাই যাকে তিনি আগে আর্থিক সহায়তা দিয়েছিলেন, সে নিজে থেকেই ভিসা পাঠায়। বলে দেয়, টাকার কথা তোমাকে এখন ভাবতে হবে না, কাতারে এসে কাজ করে শোধ দিও।

ভাইটি নির্মাণকাজের ঠিকাদার, শামসুদ্দিন তার ব্যবসা দেখাশোনা করবেন সেখানে গিয়ে। তবে শামসুদ্দিন কষ্ট পাচ্ছেন এই মনে করে যে, ছোট ছেলেটার সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ পেলেন না, আবার কবে ফিরতে পারবেন জানেন না, ততদিনে হয়তো ছেলেটা আর ছোট থাকবে না।  

সময়টা উদ্বেগে কাটে বলে মাঝেমধ্যেই গেটে গিয়ে খোঁজখবর করেন প্রার্থীরা। ছবি: সালেহ শফিক/ টিবিএস

প্রতিদিন ৩৩০ জন

দেশে কাতার গমন ইচ্ছুকদের মেডিক্যাল বা স্বাস্থ্য পরীক্ষার আর কোনো অথরাইজড বা অনুমোদিত কেন্দ্র নেই, তাই রূপায়ন সেন্টারে সারাদেশ থেকেই লোক আসে। প্রতিদিন ৩৩০ জনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা (মেডিক্যাল) করানো হয়। দুই ধাপে এ পরীক্ষা হয়। একটি বায়োমেট্রিক, অন্যটি ফিজিক্যাল। বায়োমেট্রিকে আঙুলের ছাপ এবং চোখের মাপ নেওয়া হয়। ফিজিক্যালে রক্ত, রক্তচাপ, দৃষ্টিশক্তি ইত্যাদি পরীক্ষা করা হয়। বুকের এক্সরে করানো হয়, করোনার টিকা দেওয়া হয়। এতে ছয় ঘণ্টাও লেগে যায়। আর ততক্ষণ প্রার্থীর অ্যাটেন্ডদের ওই রোড ডিভাইডের বসে ঝিমাতে দেখা যায়।

এনিয়ে জানতে চাইলাম স্টিমজ কর্মকর্তাদের কাছে। তারা বললেন,' কোনো অ্যাম্বেসি বা ভিসা সেন্টারেই অ্যাটেন্ডদের জন্য আলাদা বসার বা বিশ্রাম নেওয়ার জায়গা রাখা হয় না। আমরা প্রার্থীর জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ  করি। কোনো কোনো প্রার্থীর জন্য একাধিকবারও সময় বরাদ্দ করি। যার বুকে সমস্যা আছে তাকে বলি ৭ দিন ওষুধপত্র খেয়ে আবার আসেন। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মানুষগুলো আসে, অনেক স্বপ্ন থাকে তাদের, আমরাও তা বুঝি এবং সহমর্মী থাকি। তবে যাওয়ার পর যেন স্বাস্থ্যগত কারণে বিপদগ্রস্ত নাহয়- সে বিষয়েও সতর্ক থাকি। আমরা প্রার্থীকে সকল বিষয় পরিস্কার অবগত করি। অনেকেই যেমন জানেন না তিনি কোন ভিসায় যাচ্ছেন, কি ধরনের কাজ করবেন বা কত বেতন পাবেন। আমাদের এখানে কাউকে কোনো ফি দিতে হয়  না। আমরা প্রণোদনা পেয়ে থাকি কাতার সরকারের কাছ থেকেই। ভিসা যোগাড় করে মেডিক্যাল ফি ১৩৭ ডলার (সাড়ে চৌদ্দ হাজার টাকা) জমা করার পরই কেবল ভিসা নম্বর পাওয়া যায়। মেডিক্যাল করানোর তারিখও কাতার মিনিস্ট্রি অব ইন্টেরিয়র নির্ধারণ করে থাকে। বিগত বছরগুলোয় কিউএমসি মডেল এতোই সাফল্য পেয়েছে যে সৌদি আরবও এখন এটা ফলো করছে। তারা যমুনা ফিউচার পার্কে ইতিমধ্যেই জায়গা ভাড়া নিয়েছে।'

রোড ডিভাইডারেই যা একটু ছায়া আছে। ছবি: সালেহ শফিক/ টিবিএস

স্টিমজ কার্যালয় থেকে বেড়িয়ে আসার পর কয়েকজনকে হাহুতাশ করতে দেখলাম। নামে ভুল হওয়ার কারণে তাদের আবার আসতে বলা হয়েছে। এদের মধ্যে মশিউরের ভাইও আছেন। মো. মশিউর ১৪ বছর বয়সে দুবাই গিয়েছিলেন। ৬ বছর সেখানে থাকার পরে দেশে এসেছিলেন। তারপর আবার  ভিসা যোগাড় করে চলে গিয়েছিলেন কাতার। এখনো সেখানেই থাকেন। তার বয়স এখন ২৮। সুবেশী, সুদর্শন মানুষ মশিউর। ভাইকে নিয়ে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির বাড়ি থেকে ভোরে এসে নেমেছেন ঢাকায়। তারপর মগবাজারের একটা হোটেলে রুম নিয়েছেন। ১৪,০০০ কাতারি রিয়াল (১ রিয়াল সমান ২৯ টাকায় ৪ লক্ষ বাংলাদেশি টাকা প্রায়) দিয়ে ভাইয়ের জন্য দুই বছর মেয়াদি ফ্রি ভিসা নিয়ে এসেছেন।

মশিউরকে জিজ্ঞেস করলাম, ফ্রি ভিসার ফি আসলে কত? তিনি বললেন, '১ লক্ষ টাকার মতো। টাকা বেশি লাগে মূলত দালালদের জন্য। ধরুন আমি যার কাছ থেকে কিনেছি, তিনি আবার আরেকজনের কাছ থেকে কিনেছেন, আমি দেশে এসে আবার বিক্রি করে দিলাম। হাত ঘুরতে ঘুরতে দাম সাড়ে ৫ লাখ টাকাও হয়ে যায়। আমি নিজে একবার একটা ভিসা ২২ হাজার রিয়াল, মানে ৭ লাখ টাকায় কিনেছিলাম। আমাদের দেশে কাজ কম, বেতন কম, শিক্ষা কম, বেকার বেশি– তাই যত কষ্টই হোক, বিদেশ না গিয়ে উপায় নেই আমাদের।'

তাঁর কাছে আরো জানতে চেয়েছিলাম, হাতের কাজ না জেনে বিদেশ গেলে কী কী অসুবিধা হয়? তিনি বললেন, 'সব দিক থেকে অসুবিধা। কাজ পাবেন না, পেলেও বেতন কম পাবেন, বেশি কষ্টের কাজ করতে হবে। বিদেশে যেকোনো একটা কাজে দক্ষ হয়েই যাওয়া উচিত। কাজ জানলে ভালো সুবিধা পাওয়া যায়।'

দক্ষ শ্রমিকের সংখ্যা কমেছে

দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড ২৬ জুলাই এক কৌতূহল উদ্দীপক  প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যার শিরোনাম, ২০২৩ অর্থবছরে রেকর্ড সংখ্যক জনশক্তি রপ্তানি সত্ত্বেও বাড়েনি রেমিট্যান্স। প্রতিবেদক এতে জানাচ্ছেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে রেকর্ড ১১.৩৭ লাখ কর্মী (জনশক্তি) বিদেশে রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। দেশের ইতিহাসে এটি একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক। সংখ্যাটি আগের বছরের তুলনায় ১৫ শতাংশের বেশি, অথচ রেমিট্যান্স বেড়েছে ২.৭৫ শতাংশ মাত্র।

অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা এই অসঙ্গতির দুটি কারণ চিহ্নিত করেছেন। প্রথম কারণটি হুন্ডি, আর দ্বিতীয় কারণ বিপুল সংখ্যক অদক্ষ কর্মী। রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট (রামরু)-র এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আগের বছরের তুলনায় ২০২২ সালে অন্যান্য দেশে ভ্রমণকারী দক্ষ শ্রমিকের সংখ্যা কমেছে।

২০২১ সালে দক্ষ শ্রমিকের সংখ্যা ছিল দেশের মোট শ্রম অভিবাসনের ২১.৩৩ শতাংশ, যা ২০২২ সালে ১৭.৭৬ শতাংশে নেমে আসে।

বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য সবচেয়ে বড় গন্তব্য সৌদি আরব। গত অর্থবছরে সেখানে গেছে ৪.৫২ লাখ কর্মী। এ  সংখ্যা মোট শ্রম অভিবাসনের ৪০ শতাংশ। সৌদি আরবের পরেই মালেয়েশিয়া, ওমান, সংযুক্ত আরব  আমিরাত, সিঙ্গাপুর আর কুয়েতে বেশি জনশক্তি রপ্তানি করে বাংলাদেশ। তবে সৌদি আরবের তুলনায় মালয়েশিয়ায় বেতন পাওয়া যায় ভালো, আর মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বেশি কর্মী যায় পরিচ্ছন্নতা আর গৃহপরিচারিকার কাজ নিয়ে।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির সাবেক মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বলেন, "আমরা ১০ লাখেরও বেশি কর্মী বিদেশে পাঠাতে পেরেছি, এটি নিঃসন্দেহে ভালো খবর। তবে আমরা এতে সন্তুষ্ট নই। আমরা যদি প্রতি বছর কমপক্ষে ১৫ লাখ লোক পাঠাতে পারি, তবে এটি বেকারত্ব দূর করতে এবং রেমিট্যান্স বাড়াতে বড় ভূমিকা রাখবে।"

তবে এজন্য দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে সরকারি উদ্যোগ পর্যাপ্ত ও যথাযথ হওয়া দরকার। অভিবাসী শ্রমিকরা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, পরোক্ষে হলেও আমরা সকলেই এর সুফলভোগী। এখন প্রশ্নটা ওঠে, আমরা তাদের জন্য কি করি? যাওয়ার আগেই তারা রোদে পোড়ে, বৃষ্টিতে ভেজে, ডিভাইডারে বসে থাকে। দীর্ঘদিন বিদেশ করার পর আবারো ভিসার জন্য, মেডিক্যাল করানোর জন্য লাইনে দাঁড়াতে হয়, বৃত্তবন্দি এক দশা। অথচ  তারাই সত্যিকারের নায়ক, তারা কেবল সাহস আর শক্তির ওপর ভর করে অচিন দেশে পাড়ি জমান, খেয়ে না খেয়ে টাকা পাঠান দেশে; আর ফলাফলে দেশের চাকা ঘোরে। কিন্তু, আমরা কি তাদের যোগ্য সম্মান বা প্রয়োজনীয় সুযোগ দিতে পারছি?

 

 

Related Topics

টপ নিউজ

রেমিট্যান্স যোদ্ধা / আসল নায়ক / কাতার / রোড ডিভাইডার / বিদেশগামী শ্রমিক

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • ড্যাপ সংশোধন: ঢাকার কিছু এলাকায় ভবন নির্মাণে ফ্লোর এরিয়া রেশিও দ্বিগুণ পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে
  • প্রথমবারের মতো সরকারিভাবে টাইফয়েডের টিকা পাবে ৫ কোটি শিশু, কার্যক্রম শুরু সেপ্টেম্বরে
  • “স্ত্রীকে মেরে ফেলছি, আমাকে নিয়ে যান”: হত্যার পর ৯৯৯-এ স্বামীর ফোন
  • সরকার পরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক যেভাবে বিপর্যস্ত ব্যাংক খাতের রোগ নিরাময় করছে
  • গাজীপুরে সাংবাদিক হত্যার ঘটনায় আরও তিনজন গ্রেপ্তার
  • মিয়ানমারে বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় বিরল মৃত্তিকা উত্তোলন ব্যাপকভাবে বেড়েছে, যাচ্ছে চীনে

Related News

  • মধ্যরাতে মহাখালী ফ্লাইওভারের ডিভাইডারে প্রাইভেটকারের ধাক্কা, নিহত ২
  • নওগাঁর আম রপ্তানি বদলে দিতে পারে উত্তরের কৃষি অর্থনীতির চিত্র 
  • গাজা যুদ্ধবিরতি,জিম্মি মুক্তির আলোচনায় কাতারে পাঠাচ্ছে প্রতিনিধিদল পাঠাচ্ছে ইসরায়েল
  • হামলা চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ‘কিছুই অর্জন করতে পারেনি’: খামেনি
  • ট্রাম্পের অনুরোধে ইরানকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করিয়েছে কাতার

Most Read

1
বাংলাদেশ

ড্যাপ সংশোধন: ঢাকার কিছু এলাকায় ভবন নির্মাণে ফ্লোর এরিয়া রেশিও দ্বিগুণ পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে

2
বাংলাদেশ

প্রথমবারের মতো সরকারিভাবে টাইফয়েডের টিকা পাবে ৫ কোটি শিশু, কার্যক্রম শুরু সেপ্টেম্বরে

3
বাংলাদেশ

“স্ত্রীকে মেরে ফেলছি, আমাকে নিয়ে যান”: হত্যার পর ৯৯৯-এ স্বামীর ফোন

4
অর্থনীতি

সরকার পরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক যেভাবে বিপর্যস্ত ব্যাংক খাতের রোগ নিরাময় করছে

5
বাংলাদেশ

গাজীপুরে সাংবাদিক হত্যার ঘটনায় আরও তিনজন গ্রেপ্তার

6
আন্তর্জাতিক

মিয়ানমারে বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় বিরল মৃত্তিকা উত্তোলন ব্যাপকভাবে বেড়েছে, যাচ্ছে চীনে

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net