দোহায় হামলার জন্য কাতারের কাছে ক্ষমা চাইলেন নেতানিয়াহু

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু কাতারের রাজধানী দোহায় হামলার সময় দেশটির একজন নাগরিক নিহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষমা চেয়েছেন। সোমবার কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান বিন জসিম আল থানির কাছে ক্ষমা চান তিনি।
একই দিন হোয়াইট হাউসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের সময় নেতানিয়াহু কাতারের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যৌথভাবে ফোন করেন। ওই ফোনকলে ক্ষমা প্রার্থনার বিষয়টি হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু গভীর অনুতপ্ত যে কাতারে হামাসের লক্ষ্যবস্তুতে ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সময় ভুলবশত কাতারের এক সেনা নিহত হয়।" এছাড়া বলা হয়েছে, "যখন ইসরায়েল জিম্মি মুক্তির আলোচনার সময় হামাসের নেতৃত্বকে লক্ষ্যবস্তু করেছিল, তখন এটি কাতারের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে। নেতানিয়াহু নিশ্চিত করেছেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের হামলা আর হবে না।"
৯ সেপ্টেম্বরের এই হামলায় অন্তত পাঁচজন নিম্নপদস্থ হামাস সদস্য এবং এক কাতারি নিরাপত্তা কর্মকর্তা নিহত হন। হামলাটি হামাসের শীর্ষ নেতাদের ওপর করা হয়েছিল, যারা যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত অস্ত্রবিরতি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় জড়িত ছিলেন। শীর্ষ নেতােরা এই হত্যাচেষ্টায় বেঁচে গেছেন।
এটি কাতারে ইসরায়েলের প্রথম হামলা। কাতার মধ্যপ্রাচ্যে অস্ত্রবিরতি আলোচনার প্রধান মধ্যস্থতাকারী দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম সামরিক ঘাঁটি আল উদেইদ এখানে অবস্থিত।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ফোনকলে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দোহায় এক আবাসিক এলাকায় হামলার প্রভাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। হামলার সময় হামাসের আলোচক দলও ওই এলাকায় ছিল, যা কাতারের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে।
মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "ফোনকালের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন, যিনি অঞ্চলে শান্তি স্থাপনের জন্য কাজ করছেন এবং ভবিষ্যতে কাতারের ওপর এ ধরনের হামলা এড়ানোর নিশ্চয়তা দিয়েছেন। এছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কাতারের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।"
নেতানিয়াহু ফোনকালে হামলার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং নিশ্চিত করেন, ভবিষ্যতে কাতারের কোনো লক্ষ্যবস্তুতে হামলা হবে না। তিনি বিশেষভাবে কাতারের নাগরিক বাদর আল-দোসারির মৃত্যুতে দুঃখ প্রকাশ করেন।
নেতানিয়াহুর অফিসিয়াল এক্স অ্যাকাউন্টে বলা হয়েছে, তিনি কাতারের প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানান, "প্রধানমন্ত্রী মহাশয়, আমি চাই আপনি জানুন, ইসরায়েল দুঃখিত যে আমাদের হামলায় আপনার একজন নাগরিক নিহত হয়েছেন। আমি আপনাকে আশ্বস্ত করতে চাই, ইসরায়েল লক্ষ্যবস্তু হিসেবে হামাসকে নিয়েছিল, কাতারিদের নয়।"
এ সময় নেতানিয়াহু কাতারের প্রতি অভিযোগও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, "কাতার মুসলিম ব্রাদারহুডকে সমর্থন করে, আল জাজিরায় ইসরায়েলের খারাপ প্রতিচ্ছবি দেখানো হয় এবং কলেজে ইসরায়েলবিরোধী মনোভাবকে উৎসাহ দেয়।"
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস দোহায় হামলাকে কাতারের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের গুরুতর ঘটনা হিসেবে নিন্দা করেছেন। হামলার কয়েকদিন পরে প্রায় ৬০টি মুসলিম দেশ দোহায় একত্রিত হয়ে কাতারের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করে।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, নেতানিয়াহুর ক্ষমাপ্রার্থনার পর কাতারের প্রধানমন্ত্রী আশ্বাসগুলোকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং বলেছেন, কাতার আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতায় অবদান রাখতে প্রস্তুত। নেতানিয়াহুও একই প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন।
কাতারের হামাদ বিন খালিফা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর সুলতান বারাকাত নেতানিয়াহুর ক্ষমাপ্রার্থনাকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি আল জাজিরাকে বলেছেন, "কাতার শুরু থেকেই বলেছিল, নেতানিয়াহুর প্রকাশ্য ক্ষমা ছাড়া ও পুনরায় হামলার চেষ্টা না করার নিশ্চয়তা ছাড়া তারা মধ্যস্থতার কাজ চালাতে পারবে না। এটি শুধুমাত্র হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যস্থতার জন্য নয়, পুরো মধ্যস্থতা প্রক্রিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যখন দ্বন্দ্বের পক্ষগুলো সরাসরি নিজেদের হিসাব মেটাতে চায়, তখন মধ্যস্থতার সুযোগ রক্ষা করা যায় না।"