ডিপোজিটের ক্যাপ তুলে দেওয়ার দাবি এনবিএফআইগুলোর

ইমেজ সংকটের কারণে ডিপোজিট সংগ্রহের প্রতিযোগিতায় ব্যাংকগুলোর সঙ্গে পেরে না ওঠায় ইনটারেস্ট ক্যাপ তুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছে দেশের নন-ব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল ইন্সটিটিউশন- এনবিএফআইগুলো।
রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে এক সভায় এ দাবি জানায় দেশের এনবিএফআইগুলোর এমডিদের সংগঠন বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিস অ্যাসোসিয়েশন (বিএলএফসিএ)।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক বেশি রেটে ডিপোজিট সংগ্রহ ও লোন দেওয়ার গত ১৮ এপ্রিল এক সার্কুলারে সর্বোচ্চ ইন্টারেস্ট রেট নির্ধারণ করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সার্কুলার অনুযায়ী, এনবিএফআইগুলো ডিপোজিটের ইন্টারেস্ট রেট সর্বোচ্চ ৭% এবং লোনের ওপর সর্বোচ্চ ১১% ইন্টারেস্ট রেট নিতে পারবে। চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে এ রেট কার্যকর করার জন্যও বলা হয় সে নির্দেশনায়।
সভায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার, ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল, বিএলএফসি এর চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং আইপিডিসি ফাইন্যান্সের সিইও মোমিনুল ইসলামসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন এনবিএফআই এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা এতে উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, "এর আগে ব্যাংকের এমডি ও সিইওদের সঙ্গে গভর্ণর মহোদয় সভা করেছেন। এনবিএফআই গুলোর এমডি ও সিইওদের সঙ্গে নতুন গভর্নর কোনো সভা করেননি। আজকের সভাটি সেদিক থেকে একটি সৌজন্যমূলক সভা। আর্থিক প্রতিষ্ঠানে প্রতিনিধিরা সভায় বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন উঠিয়েছেন। বিশেষ করে বেশ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান কোর্টের নির্দেশনার হওয়ার কারণে তারা একটা সংকটের মধ্যে আছেন।"
গ্রাহকদের কিছুটা অনাস্থা থাকার কারণে ডিপোজিট কালেকশনে তাদের সমস্যা হচ্ছে উল্লেখ করে মুখপাত্র বলেন, "লোনের ইন্টারেস্ট নিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর আপত্তি না থাকলেও ৭% ইন্টারেস্ট রেটে ডিপোজিট পাওয়া কঠিন হচ্ছে বলে জানিয়েছে তারা। ব্যাংকগুলো এই রেটের কাছাকাছি রেটে ডিপোজিট কালেক্ট করছে বলে তাদের পক্ষে ডিপোজিট পাওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তাই, তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ডিপোজিটের ক্যাপ তুলে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন।"
"পাশাপাশি গভর্নর মহোদয়ও তাদের বলেছেন, এনবিএফআই ম্যানেজমেন্টকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলারে প্রশাসনিকভাবে যেসব নির্দেশনা দেওয়া হয়, সেগুলো যেন তারা মেনে চলেন। সেইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ারম্যান ও বোর্ডগুলোকেও নিয়মকানুন অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করার জন্যও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।"
"বোর্ডগুলোকে যদি কেউ আনডিউ কোনো প্রেশার দেয়, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তার প্রয়োজন হলে তা করা হবে," যোগ করেন তিনি।
সভায় উপস্থিত একটি এনবিএফআই এর এমডি টিবিএসকে বলেন, "বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে এনবিএফআই গুলোর উন্নতির জন্য তারা কাজ করছে। লোন রিশিডিউলিং এবং গুড গভর্ন্যান্সের জন্য ওনারা কিছু স্টেপ নিয়েছেন। এনবিএফআই সেক্টরটিকে সমস্যামুক্ত ও ইমপ্রুভমেন্টের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক সামনে আরো কিছু স্টেপ নেবে বলে সভায় জানানো হয়েছে।"
ডিপোজিটের ইন্টারেস্ট রেট বাড়ানোর অনুরোধ করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ ব্যাপারে সরাসরি কিছু বলেনি। তবে তারা বলেছেন, এ বিষয়ে যা যা করা প্রয়োজন তারা তা করবেন।
"এছাড়া দূর্বল এনবিএফআইগুলোর অবস্থার উন্নতি ঘটাতে প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্পোরেট গুড গভর্ন্যান্স নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর," জানান তিনি।
ইতোমধ্যে পরিচালক নিয়োগে নীতিমালা করে গুড গভর্ন্যান্স নিশ্চিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পদক্ষেপ নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, "এই নীতিমালাটি করার কারণে ভালো হয়েছে। আগে এ ধরনের কোনো নীতিমালা ছিল না। কর্পোরেট গভর্ন্যান্সের জন্য এটি ভালো। আশা করছি এ নির্দেশনার একটা পজিটিভ ইমপ্যাক্ট আসবে। সামনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গুড গভর্ন্যান্স নিশ্চিতে আরো কিছু নির্দেশনা আমাদের দেবে বলেও জানিয়েছে।"