দেশের মোট ঋণের ৭৮% ঢাকা ও চট্টগ্রামে কেন্দ্রীভূত: পিআরআই গবেষণা

বাংলাদেশে প্রদত্ত মোট ঋণের প্রায় ৭৮ শতাংশ ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগর অঞ্চলে কেন্দ্রীভূত, যার ফলে দেশের অন্যান্য অংশ আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়ছে—এমন তথ্য উঠে এসেছে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)-এর এক গবেষণা প্রতিবেদনে।
বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীতে পিআরআই সম্মেলন কক্ষে "বাংলাদেশ কি বিকেন্দ্রীকরণ ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব?" শীর্ষক একটি নিবন্ধ উপস্থাপনকালে এই গবেষণার মূল তথ্যগুলো তুলে ধরা হয়।
গবেষণার ফলাফল তুলে ধরার সময় পিআরআই পরিচালক ড. আহমদ আহসান বলেন, "বাংলাদেশ আকৃতি অনুযায়ী বিশ্বের অন্যতম কেন্দ্রীভূত রাষ্ট্র। জনসেবা, নগর শাসনব্যবস্থা এবং অর্থপ্রবাহ—সবক্ষেত্রেই এ চিত্র দেখা যায়।"
তিনি বলেন, "২০২৪ অর্থবছরে ৭৮.৪ শতাংশ ঋণ ঢাকা ও চট্টগ্রামে দেওয়া হয়েছে। অন্য জেলার ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগগুলোকে ঋণ পেতে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।"
পিআরআই পরিচালক আহমাদ আহসান বলেন, ঢাকার মধ্যে ৬২.৯৫ শতাংশ ঋণ দেওয়া হয়েছে, চট্টগ্রামে ১৫.৪৫ শতাংশ, নারায়ণগঞ্জে ১.৫৪ শতাংশ, খুলনায় ১.২৭ শতাংশ এবং রাজশাহীতে ১.২৭ শতাংশ। অন্যদিকে, বান্দরবান ০ শতাংশ, খাগড়াছড়ি ০.০৬ শতাংশ, রাঙ্গামাটি ০.০৬ শতাংশ, মেহেরপুর ০.০৭ শতাংশ এবং ঝালকাঠি ০.০৮ শতাংশ ঋণ পেয়েছে।
তিনি উল্লেখ করেন, এই কেন্দ্রীকরণ নতুন ব্যবসা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ কমিয়ে দেয় এবং আঞ্চলিক বৈষম্য বাড়ায়। বাংলাদেশের ব্যাংক ও ঋণ খাত সম্প্রসারিত হলেও সুবিধা শুধু ঢাকা ও চট্টগ্রামে সীমাবদ্ধ। ফলে অন্যান্য জেলা ও শহরে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ বিকশিত হচ্ছে না।
তিনি বলেন, "এর প্রভাব বড়—২০১৭ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে নগর শিল্পে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ২০১০-২০১৭ সালের তুলনায় ধীর হয়েছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের পিছিয়ে থাকা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকিংয়ের অভাব সমন্বিত শিল্পায়নকে বাধাগ্রস্ত করছে।"
পিআরআই আরও জানিয়েছে, দেশের ১২টি সিটি করপোরেশন ও ৩২৫টি পৌরসভা ৪০টিরও বেশি মন্ত্রণালয় ও সংস্থার অধীনে কাজ করছে। এতে মেয়রদের অবকাঠামো, পানি, বিদ্যুৎ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা সমন্বয় করতে "প্রায় অক্ষম" অবস্থায় রাখা হয়েছে।
পিআরআই-এর সুপারিশ, স্থানীয় সরকারের বাজেট অন্তত জিডিপির ১ শতাংশ করা, ঢাকায় সম্পত্তি কর সংগ্রহ শক্তিশালী করা (বর্তমানে মাত্র ০.১৩ শতাংশ), চট্টগ্রামে ০.০৬ শতাংশ, এবং সেবা, বিনিয়োগ ও আর্থিক ব্যবস্থাপনার জন্য বার্ষিক স্কোরকার্ড চালু করা।
আলোচনায় মো. মাশরুর রিয়াজ বলেন, "অর্থনৈতিক কার্যক্রম ঢাকার ও চট্টগ্রামের শহরগুলোতে বেশি কেন্দ্রীভূত। এতে ঢাকায় যানজট বছরে প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি করছে।" তিনি কেন্দ্র ও স্থানীয় সরকারের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোর ওপর জোর দেন।
সেমিনার সভাপতিত্ব করেন পিআরআই-এর নির্বাহী পরিচালক খুরশিদ আলম। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান বাদিউল আলম মজুমদার প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, "দায়িত্বশীলতা বাড়াতে ক্ষমতা ও সুবিধার বিকেন্দ্রীকরণ জরুরি। মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হয়েছে, কিন্তু জনগণের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও জীবনমানের উন্নতি হয়নি। স্থানীয় সরকারের পরিবর্তন ছাড়া বিকেন্দ্রীকরণ সম্ভব নয়।"