এপ্রিলে নতুন মালিকানায় যাচ্ছে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা, বিক্রি হচ্ছে ৪৮২ মিলিয়ন ডলারে
অবশেষে বেসরকারি মালিকানায় যেতে চলেছে পাকিস্তানের ধুঁকতে থাকা জাতীয় পতাকাবাহী বিমান সংস্থা পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স (পিআইএ)। ১৩৫ বিলিয়ন পাকিস্তানি রুপির (প্রায় ৪৮২ মিলিয়ন ডলার) বিনিময়ে সংস্থাটির নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে আরিফ হাবিব কর্পোরেশনের নেতৃত্বাধীন একটি কনসোর্টিয়াম বা জোট।
সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরের (২০২৬) এপ্রিল মাসেই নতুন মালিকের হাতে পিআইএ-এর চাবি তুলে দেওয়া হবে বলে আশা করছে পাকিস্তান সরকার।
গত মঙ্গলবার টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত এক নিলামে পিআইএ-এর ৭৫ শতাংশ শেয়ারের জন্য সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে নির্বাচিত হয় আরিফ হাবিব গ্রুপ। গত বছর পিআইএ বিক্রির চেষ্টা ব্যর্থ হলেও এবার সরকারের বেঁধে দেওয়া ১০০ বিলিয়ন রুপির ন্যূনতম মূল্য টপকে ১৩৫ বিলিয়ন রুপির প্রস্তাব আসে, যা ইসলামাবাদ একে বড় সাফল্য হিসেবে দেখছে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারিকরণ বিষয়ক উপদেষ্টা মুহাম্মদ আলী রয়টার্সকে বলেন, 'আমরা এমন কোনো পরিস্থিতি চাইনি যেখানে সরকার বিমান সংস্থাটি বিক্রি করে টাকা পকেটে ভরল, আর কিছুদিন পর কোম্পানিটি ধসে পড়ল। তাই চুক্তির কাঠামো এমনভাবে সাজানো হয়েছে যাতে এয়ারলাইন্সে নতুন মূলধন যুক্ত হয়।'
চুক্তি অনুযায়ী, সরকার নগদ ১০ বিলিয়ন রুপি পাবে। আর বাকি ২৫ শতাংশ শেয়ার নিজেদের হাতে রাখবে, যার আনুমানিক মূল্য ধরা হয়েছে ৪৫ বিলিয়ন রুপি।
পিআইএ-এর নতুন মালিকানা জোটে আরিফ হাবিব কর্পোরেশন ছাড়াও রয়েছে সার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ফাতিমা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চেইন 'সিটি স্কুলস' এবং রিয়েল এস্টেট কোম্পানি লেক সিটি হোল্ডিংস। এছাড়া পাকিস্তানের প্রভাবশালী সামরিক বাহিনী পরিচালিত ফৌজি ফার্টিলাইজার কোম্পানি সরাসরি নিলামে অংশ না নিলেও, তারা অংশীদার হিসেবে এই জোটে যুক্ত হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন মুহাম্মদ আলী। এমনকি বিদেশি কোনো এয়ারলাইন্সকেও কারিগরি অংশীদার হিসেবে যুক্ত করার সুযোগ রাখা হয়েছে।
লোকসানি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর বোঝা কমাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) দীর্ঘদিন ধরেই পাকিস্তানকে চাপ দিয়ে আসছে। পিআইএ-এর এই বিরাষ্ট্রীয়করণ প্রক্রিয়াটি আইএমএফের কাছে পাকিস্তান সরকারের সংস্কারের সদিচ্ছার বড় প্রমাণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
মুহাম্মদ আলী জানান, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে মন্ত্রিসভা ও প্রাইভেটাইজেশন বোর্ডের চূড়ান্ত অনুমোদন মিলবে। এরপর আইনি প্রক্রিয়া শেষে ৯০ দিনের মধ্যে আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন হবে। কর্মীদের স্বার্থ রক্ষায় মালিকানা বদলের পর এক বছর পর্যন্ত কাউকে ছাঁটাই না করার শর্তও জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
